সংস্কার কমিশন বৈঠকের পর আবু হেনা
প্রয়োজন নেই আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন পদ্ধতির বিপক্ষে মত দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মোহাম্মদ আবু হেনা। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশের চলমান পদ্ধতিই কার্যকর থাকতে পারে।
আমাদের দেশের মানুষ এই পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত। তিনি আরও বলেন, যে সমস্ত দেশে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি চালু আছে, সেই সব দেশে যে ভালোভাবে চলছে এটি মনে করবেন না। আমি নিজে জানি, নেপাল ও ইসরাইলে এ পদ্ধতিতে ভালো চলছে না।
আর নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আনুপাতিক পদ্ধতি চালুর সুপারিশ করার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। এ পদ্ধতির পক্ষে-বিপক্ষে দুই ধরনের প্রস্তাব পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
সোমবার আগারগাঁওয়ে ‘নির্বাচন ভবনে’ নির্বাচন সংস্কার কমিশনের বৈঠক শেষে তারা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের আমন্ত্রণে গতকাল নির্বাচন ভবনে আসেন সাবেক সিইসি মোহাম্মদ আবু হেনা। কমিশন সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারে তার মতামত তুলে ধরেন।
জানা গেছে, আরও সাবেক দুই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এটিএম শামসুল হুদা ও বিচারপতি মো. আব্দুর রউফের মতামত ও পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। তবে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, কেএম নুরুল হুদা ও কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের মতামত নেওয়া হবে না। আগামী শনিবার নির্বাচন নিয়ে রিপোর্টিংয়ে যুক্ত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন কমিশন সদস্যরা। এরপর সম্পাদকদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।
এদিকে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে মতামত বা পরামর্শ চেয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ২২টি রাজনৈতিক দল ও জোটকে সোমবার চিঠি দিয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তবে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী ১৪ দলীয় জোট এবং জাতীয় পার্টিকে চিঠি দেওয়া হয়নি। সরকারের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী ২৫ নভেম্বরের মধ্যে সুনির্দিষ্ট মতামত দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গতকাল নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর মোহাম্মদ আবু হেনা আরও বলেন, দেশের একজন জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসাবে আমি চাই আগামীতে যেসব নির্বাচন হবে সেগুলো যেন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ হয় এবং দেশের কল্যাণ যেন বয়ে আনে। নির্বাচন সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, যত সংস্কারই করা হোক না কেন, আইনের প্রয়োগ যদি না হয়, তাহলে কিন্তু সেই আইন অর্থবহ হয়ে আসে না।
নির্বাচনের সফলতা নির্ভর করে নির্বাচনি আইন প্রয়োগের ওপর। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এটি মনে রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশনে যোগ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার দরকার। তারা যদি যোগ্য না হন, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে।
সংসদের পদ্ধতিগত পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হবে নাকি বর্তমান সিস্টেমে চলবে কি না এটি রাজনৈতিক দলগুলো ঠিক করবে। এটি রাজনৈতিকভাবে ঠিক করলেই ভালো। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনার হিসাবে যদি যোগ্য লোক থাকে তাহলে রাজনৈতিক সরকারের আমলেও ভালো নির্বাচন করতে পারে। পারবে না কেন? ভারতে করছে না? ভারতেও তো রাজনৈতিক দল আছে, সেখানেও তো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেই কমিটমেন্টই যদি থাকে তাহলে নিশ্চয়ই করা যায়। প্রয়োজনে তারা নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন। আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, অনেক রকম প্রস্তাব আছে। যেমন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে কেউ পক্ষে, কেউ বিপক্ষে প্রস্তাব করেছে।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে যদি সিদ্ধান্ত হয় তাহলে তো সংবিধান সংশোধন করতে হবে। যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। এ রকম অনেক বিষয় আছে যে কারণে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। ওই সব বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে যে কমিশন আছে প্রধানত তাদেরই সুপারিশ করতে হবে। আমরা একসঙ্গে তাদের সঙ্গে কাজ করব। নিজেদের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার
কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা সব আইনকানুন, বিধিবিধান পর্যালোচনা করছি। আমরা অনেক ইস্যু চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি এবং এর গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এগুলো আইনে কীভাবে প্রতিফলিত হবে সেগুলোর প্রতি নজর দিচ্ছি। আমরা আশা করছি যে যথাসময়ে আমাদের প্রস্তাব পেশ করতে পারব।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে অনেক প্রস্তাব পেয়েছি। আর পাব আশা করি। সবার মতামতের ভিত্তিতে সুপারিশমালা উপস্থাপন করব, আশা করি তা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম করবে।