ক্যাডারবহির্ভূত কোটা
পদ সংরক্ষণ কমিটির কার্যপরিধি কাটছাঁটে ক্ষোভ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ক্যাডারবহির্ভূতদের পদোন্নতির কোটায় চার স্তরে প্রাপ্য পদ সংরক্ষণের জন্য গঠিত কমিটির কার্যপরিধি থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রথম বৈঠকের পর এ ধরনের সংশোধন আনায় বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
যুগান্তরকে তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি রহস্যজনক এবং সচিবালয়ে কর্মরত শত শত নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থের পরিপন্থি। বৈঠকের কার্যবিবরণী প্রকাশিত হওয়ার পর এ ব্যাপারে তারা আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
সূত্র জানায়, এ বিষয়ে গঠিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা কমিটির কার্যপরিধি হিসাবে পাঁচটি বিষয় উল্লেখ ছিল। সে আলোকে কমিটি প্রথম দফা বৈঠক করে। কিন্তু দ্বিতীয় দফা বৈঠক শুরু হওয়ার আগে ৩১ অক্টোবর সভার নোটিশে কার্যপরিধি থেকে দুটি বিষয় বাদ দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি হলো প্রশাসন ও ইকোনমিক ক্যাডার একীভূতকরণ আদেশ পর্যালোচনা এবং যুগ্মসচিব পদের এক তৃতীয়াংশ পদ সৃষ্টির বিষয়।
সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত হওয়া ইকোনমিক ক্যাডারের পদগুলো সরকারের সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব ও যুগ্মসচিব পদে একীভূত হলেও এসব পদসংখ্যাকে এক-তৃতীয়াংশের কোটার হিসাবের বাইরে রাখা হচ্ছে। এছাড়া যুগ্মসচিব পদের এক-তৃতীয়াংশ থেকে নন-ক্যাডারদের কোটা পদ দেওয়া হবে না।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আব্দুল খালেক এবং সদস্য সচিব মো. শফি উদ্দিন শেখ শনিবার যুগান্তরকে বলেন, পদ সংরক্ষণে গঠিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা কমিটির কার্যপরিধি থেকে এভাবে দু’টি আলোচ্য বিষয় বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু কেন বাদ দেওয়া হলো আমরা তা বুঝতে পারছি না। তারা বলেন, তাদের দাবি ন্যায্য এবং আইন ও বিধিসম্মত। সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব এবং যুগ্মসচিব পদে ইতোমধ্যে নতুন করে অনেক পদ বাড়লেও সে অনুযায়ী এক-তৃতীয়াংশ হিসাবে নন-ক্যাডারদের জন্য প্রাপ্য পদ সংরক্ষণ করা হয়নি। আশা করছি, বৈষম্য দূরীকরণের নিশ্চয়তাদানকারী বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারক মহল এবং এ সংক্রান্ত কমিটির বিজ্ঞ সদস্যরা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে সর্বজন গ্রহণযোগ্য সুপারিশ করবেন।
প্রসঙ্গত, কোটা অনুযায়ী প্রাপ্য পদ সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গত ৫ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এ বিষয়ে লিখিত আবেদন দেওয়া হয়। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. মাহবুব উল আলমকে প্রধান করে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি প্রথম বৈঠক করে ২৪ অক্টোবর এবং দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয় ৬ নভেম্বর।
১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে সচিবালয় ক্যাডারকে একীভূত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর আগে সচিবালয়ে কর্মরত শাখা সহকারী/সাঁটলিপিকার পদধারীরা ফিডার পদ হিসাবে নির্ধারিত কোটায় পদোন্নতি পেয়ে সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব এবং যুগ্মসচিব হতেন। এ ধারাবাহিকতায় প্রশাসন ক্যাডারের এসব পদের এক-তৃতীয়াংশ পদে নন-ক্যাডারদের কোটা সংরক্ষণ করা কথা ছিল। পরবর্তীতে শাখা সহকারী/সাঁটলিপিকার পদ পরিবর্তন করে প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা করা হয়।
যারা এতদিন জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগবিধি মোতাবেক ফিডার পদ হিসাবে সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব ও উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে আসছেন। আশির দশকে যুগ্মসচিব করা হলেও পরবর্তীতে আর দেওয়া হয়নি। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, এ যাবত কখনও ক্যাডারবহির্ভূতদের প্রাপ্য কোটা অনুযায়ী পদ সংরক্ষণ করা হয়নি।