রাজধানীতে র্যালি উদ্বোধনকালে তারেক রহমান
ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র রুখতে হবে
সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না * ফ্যাসিবাদ ফেরাতে না চাইলে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন জরুরি * অতি দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিতে হবে : মির্জা ফখরুল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাত নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে শুক্রবার লাখো জনতা সঙ্গে নিয়ে রাজধানীতে র্যালি করেছে বিএনপি। এতে দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। বেলা সোয়া ৩টার দিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি র্যালির উদ্বোধন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘একটি বিষয়ে স্মরণ করিয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাতে চাই, আমি নিজেও সতর্ক থাকতে চাই, সেটি হলো গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা দেশে-বিদেশে, প্রশাসনে এখনও সক্রিয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। তবে নিজেদের সতর্ক করতে চাইলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এটিই আজ জনগণের চাওয়া। বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে আর কেউ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে পারবে না।’
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ যেন আর কখনো ফিরে আসতে না পারে সেজন্য ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। স্থানীয় থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের ভোটের জন্য যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের মুখাপেক্ষী করা না যাবে, ততক্ষণ জনগণ গণতন্ত্রের সুফল পাবে না। এমনকি স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ মুক্ত পরিবেশেও স্বল্প আয়ের মানুষকে বাজার সিন্ডিকেটের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। যদি না মানুষের সরাসরি ভোটের অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পারি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তি জেনে রাখুক রাজধানীর রাজপথের এই সমাবেশ-মিছিল কারও বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলার জন্য নয়, বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষার মিছিল দেশের ও নিজের অধিকার রক্ষার মিছিল। নিজের ভোট প্রয়োগের অধিকার প্রতিষ্ঠার মিছিল। রাজপথে লাখো জনতার এই মিছিল বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে সাতই নভেম্বরের অন্তর্নিহিত শিক্ষায় দীক্ষিত করার মিছিল। লাখো জনতার এই মিছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আহত অসংখ্য ছাত্র-জনতা এবং হাজারো শহিদের স্বপ্নে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের মিছিল। আসুন, লক্ষ জনতার এই মিছিলকে কোনোভাবেই বৃথা হতে দেওয়া যাবে না।
যে কোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করতে আসবে, অত্যন্ত সজাগ ও সচেতন থেকে তাদের যে কোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। এখানে গণতন্ত্র ছাড়া ফ্যাসিবাদ সুযোগ পাবে না। আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করব।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিগত ১৭ বছরে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ দেশের সব রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। তারা দেশকে করেছিল একটি মাফিয়া রাষ্ট্র। তারা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ফোকলা করে দিয়েছে। ওরা আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা, গুম করেছে। ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছিল পতিত আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, র্যালি প্রমাণ করে বাংলাদেশে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বারবার রক্ষা করেছে বিএনপি। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশপ্রেমিক সৈনিক-জনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সেদিন পরাজিত করেছিল ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদকে। সেদিন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। ২০২৪ সালে জনগণ আরেকটা অভ্যুত্থান দেখেছে। এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়েছেন। কিন্তু তার দোসররা এখনো রয়েছে।
ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস বৃহস্পতিবার অফিস খোলার দিন হওয়ায় একদিন পিছিয়ে শুক্রবার র্যালির আয়োজন করে বিএনপি। দুপুর ১২টার আগেই একদিকে ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইল, শান্তিনগর মোড়, অন্যদিকে পুরানা পল্টন পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মীর পদচারণায় জনসমুদ্রে রূপ নেয়। এতে ঢাকা মহানগর ছাড়াও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিংদী থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ থেকে নেতারা বক্তব্য দেন। পরে বিকাল ৪টার দিকে শুরু হয় র্যালি। কাকরাইল মোড়-কাকরাইল মসজিদ-মৎস্যভবন-ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন-শাহবাগ-হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-বাংলামোটর-কাওরান বাজার-ফার্মগেট হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সমাপনী বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিগত দিনে আন্দোলন করে সরকারের যেমন পতন ঘটিয়েছেন, আগামী দিনেও যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা যাবে। আমরা সামনে ঘোলাটে অবস্থা দেখতে পাচ্ছি। জানি না ঘোলাটে অবস্থা কে বা কারা করবেন। যদি ওরকম কিছু হয় এই র্যালি প্রমাণ করে সবকিছু মোকাবিলা করতে পারব।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, একটি ঐতিহাসিক র্যালি সম্পন্ন করেছেন। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নতুন করে শপথ নিলেন। শপথ নিলেন গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য। দেশের সব মানুষকে আমরা সুসংহত করব, ঐক্যবদ্ধ করব। সব রাজনৈতিক দলকে আমরা আহ্বান জানাব, আজকে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য আমরা যে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, আমাদের ছেলেরা যে রক্ত দিয়েছেন তাদেরকে সম্মান জানাতে চাই। অতি দ্রুত সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন দিতে হবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের একটি পার্লামেন্ট গঠন করতে পারব, জনগণের একটি সরকার গঠন করতে পারব। বিএনপির মহাসচিব নিজেই ‘জিয়ার সৈনিক, জিয়ার সৈনিক’সহ নানা স্লাগান দিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, সালাহউদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মজিবুর রহমান সারোয়ার, অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নাসির উদ্দিন অসীম, শিরিন সুলতানা, মীর সরাফত আলী সপু, মীর নেওয়াজ আলী, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, রফিকুল ইসলাম বকুল, সাইফুল আলম নিরব, নিলোফার চৌধুরী মনি, তাইফুল ইসলাম টিপু, মাহমুদুর রহমান সুমন, দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, তমিজ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, মো. মাইনুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরের রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, মোস্তফা জামান, তানভীর আহমেদ রবিন, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আব্দুল মোনায়েম মুন্না, নরুল ইসলাম নয়ন, এসএম জিলানি, রাজীব আহসান, হাসান জাফির তুহিন, রাকিকুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দিন নাছিরসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা র্যালিতে অংশ নেন। এছাড়াও ঢাকা বিভাগীয় প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতারাও ছিলেন।