Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ ২০ জানুয়ারি

Icon

রেফায়েত হোসাইন

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ ২০ জানুয়ারি

রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে তিনি দেশের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জয় নিশ্চিতের পর থেকেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ট্রাম্প। বিশ্বনেতারা ফোন করে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। তার শপথগ্রহণ নিয়েও ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। অতীতের রীতি অনুসারে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে আগামী ২০ জানুয়ারি তার শপথ অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাকে হোয়াইট হাউজে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। খবর এপি, এএফপি, স্কাই নিউজ, বিবিসির।

সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে অন্তত ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোটের প্রয়োজন হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৯৫টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়ে হোয়াইট হাউজ নিশ্চিত করেছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৬টি ইলেকটোরাল ভোট। ট্রাম্পের ঝুলিতে পড়েছে ৭ কোটি ২৬ লাখ ৫২ হাজার ৮২৭টি সাধারণ ভোট (গণনা হওয়া ভোটের ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ)। আর কমলা পেয়েছেন ৬ কোটি ৭৯ লাখ ৪১ হাজার ৮৮১টি সাধারণ ভোট (৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ)। এদিকে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটেও রিপাবলিকানদের জয়জয়কার। সেখানে ৫২টি আসন রিপাবলিকানদের দখলে গেছে। ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছেন ৪৩টি আসন।

সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে অন্তত ৫০টি আসন প্রয়োজন।

প্রতিনিধি পরিষদেও রিপাবলিকানদের দখলে যাওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রিপাবলিকানরা ২০৯টি আসনে জয় পেয়েছে। আর ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছে ১৮৭টি। ৪৩৫ আসনের প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে একটি দলকে অন্তত ২১৮টি আসন পেতে হয়। 

মঙ্গলবারের নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রায় আড়াইশ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসাবে এক মেয়াদের বিরতিতে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউজে ফিরছেন সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

১৮৪৫ সাল থেকে অনুসরণ করা রীতি অনুসারে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠিত হবে। ওই সময় থেকেই নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এছাড়া ওইদিনই তিনি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউজে উঠবেন। আর হোয়াইট হাউজ ছেড়ে চলে যাবেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

শপথগ্রহণের আগে ইলেকটোরাল কলেজের প্রক্রিয়া শুরু হবে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে রাখা ইলেকটোরাল কলেজের মাধ্যমেই মূলত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে থাকেন। যে প্রার্থী যে অঙ্গরাজ্যে সর্বোচ্চ ভোট পান, তিনি ওই অঙ্গরাজ্যের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে থাকেন। আগামী ১৭ ডিসেম্বর বৈঠকের মাধ্যমে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সভার নতুন সদস্যরা ২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি বৈঠকে বসবেন। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট গণনা ও নতুন প্রেসিডেন্টের নাম চূড়ান্ত করা হবে।

এদিকে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার জন্য ট্রাম্পকে ফোনকল করে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ট্রাম্পের প্রচার দলের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চিউং বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বৈঠকে অংশ নিতে উন্মুখ হয়ে আছেন। খুব শিগগির এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বাইডেনের এই উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প।’ 

হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চিফ অব স্টাফ বুধবার ট্রাম্পের দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সুষ্ঠুভাবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরুর জন্য তিনি প্রয়োজনীয় ফেডারেল চুক্তিতে স্বাক্ষরের অনুরোধ জানিয়েছেন।

২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন ট্রাম্প। এর আগে পর্যন্ত বাইডেনই প্রেসিডেন্ট থাকবেন। এ সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া চালু থাকবে। তবে ট্রাম্পের প্রচারণা দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানিয়েছে, হস্তান্তর প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দেশের ভেতর ও বাইরের নেতা, দাতা ও গুরুত্বপূর্ণ সমর্থকদের ফোনকল রিসিভ করায় ব্যস্ত আছেন। এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ ক্ষমতা হস্তান্তর বিষয়ে ট্রাম্প-বাইডেনের বৈঠক ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শুরু হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এই কার্যক্রমের প্রথম ধাপ হিসাবে একটি উদ্বোধনী কমিটি ও আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর দল গঠন করা হবে। বাইডেনের চিফ অব স্টাফ জেফ জিয়েন্টস ট্রাম্পের ক্ষমতা হস্তান্তর বিষয়ে কো-চেয়ার হাওয়ার্ড লুটনিক ও লিন্ডা মিকম্যাহনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বুধবার লুটনিক ও মিকম্যাহন এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ট্রাম্প ‘আগামী সপ্তাহগুলোতে’ তার প্রশাসনের জন্য কিছু ব্যক্তিকে নির্বাচন করবেন। তবে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে তারা কিছু বলেননি। তবে তারা বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই যাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতির বাস্তবায়ন শুরু হয়, তা নিশ্চিতে তিনি তার দলের জন্য সেরা সদস্য ও উপযুক্ত নীতিনির্ধারণ করবেন। তার ক্ষমতা হস্তান্তর দল এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে।’

এর আগে ২০১৬ সালে প্রথমবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু ২০২০ সালে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হয়ে তাকে বিদায় নিতে হয়েছিল। চার বছর পর আবারও মার্কিন মসনদে বসতে যাচ্ছেন ৭৮ বছর বয়সি ট্রাম্প।

বিজয়ী ট্রাম্পকে কমলা ও ওবামার অভিনন্দন : প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস। স্থানীয় সময় বুধবার ফোনে ট্রাম্পকে বিজয়ের অভিনন্দন জানান ডেমোক্রেটিক পার্টির কমলা। তার একজন সহযোগী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ফোন করে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে কমলা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। একই সঙ্গে তিনি ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের সব নাগরিকের জন্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার আহ্বান জানান।

ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ‘এমন ফলাফল আশা করিনি।’ বুধবার সামাজিক মাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “রিপাবলিকান এই প্রার্থীর সঙ্গে ‘গভীর মতবিরোধের’ কারণে এটি ‘স্পষ্টতই আমরা যে ফলাফল আশা করেছিলাম তা নয়’।” ওবামা বলেন, কিন্তু (মতবিরোধ থাকলেও) গণতন্ত্রে বাস করা মানেই এটা স্বীকার করা যে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সব সময় জয়ী হবে না এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি হওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৈচিত্র্যময় দেশে মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ওবামা বলেন, ‘অগ্রগতির জন্য আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে-এমনকি যাদের সঙ্গে আমরা গভীরভাবে দ্বিমত পোষণ করি তাদের কাছেও।’

পরাজয় মেনেছেন, লড়াই ছাড়ছেন না কমলা : প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করে নির্বাচনের ফল মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। সেই সঙ্গে তিনি সমর্থকদের হতাশ না হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন। কমলা বলেন, ভোটে পরাজয় মেনে নিচ্ছি, কিন্তু লড়াইয়ে হার মানছি না। একই সঙ্গে তিনি ট্রাম্পকে ক্ষমতা হস্তান্তরে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। কমলা বলেন, ‘আমি জানি অনেকের মনে হচ্ছে আমরা হয়তো একটি অন্ধকার সময়ে প্রবেশ করছি, কিন্তু আমাদের সবার ভালোর জন্য আমি আশা করি তেমনটি হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘হতাশ হবেন না। এখন ক্ষোভ বা হতাশা প্রকাশের সময় নয়, এখন আমাদের যথাযথ কাজ ও লড়াই করার সময়।’ এখনই সময় ‘স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য সংগঠিত হওয়ার, সংগঠিত করার এবং তাতে নিযুক্ত থাকার এবং ভবিষ্যৎ যেন আমরা একসঙ্গে গড়ে তুলতে পারি।’ তরুণদের উদ্দেশে কমলা বলেন, এটা ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের দেশের জন্য লড়াই সব সময়ই মূল্যবান। দুঃখিত এবং হতাশ হওয়া ঠিক আছে, কিন্তু দয়া করে জেনে রাখুন-এটা ঠিক হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘কখনো কখনো লড়াই কিছুটা সময় নেয়-এর অর্থ এই নয় যে, আমরা আর জিতব না। হাল ছেড়ে দেবেন না। আপনার সেই ক্ষমতা আছে।’ ‘শান্তিপূর্ণভাবে লড়াই চালানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করে কমলা বলেন, আমেরিকা আমরা কখনোই গণতন্ত্রের জন্য, আইনের শাসনের জন্য, সাম্য ও ন্যায়বিচারের জন্য এবং অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই ছেড়ে দেব না। এগুলোকে সম্মান করতে হবে ও সমুন্নত রাখতে হবে। আমরা ভোটকেন্দ্রে, আদালতে এবং পাবলিক স্কোয়ারে এ লড়াই চালিয়ে যাব।’

তিনি আরও জানান, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং বিজয়ের জন্য তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কমলা বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের’ প্রক্রিয়ায় তারা নিয়োজিত হবেন এবং সেই প্রক্রিয়ায় তিনি সাহায্যও করবেন। অবশেষে কমলা বলেন, ‘গণতন্ত্রের একটি মৌলিক নীতি’ হলো ফলাফল মেনে নেওয়া। এটি গণতন্ত্রকে স্বৈরাচার থেকে আলাদা করে।

ট্রাম্পের পারিবারিক ছবিতে মেলানিয়া নেই, আছেন মাস্ক : নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনে সর্বোচ্চ বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ককে একটি বড় পদে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা একটি ছবিতে দেখা গেছে, বিজয়ের পর ট্রাম্পের একটি পারিবারিক ছবিতে ছেলে এক্স-অ্যাশকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সাত দোদুল্যামান অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনের প্রচারে ১১৯ মিলিয়ন ডলার দেওয়া মাস্কও। কিন্তু এই ছবিতে মেলানিয়া ট্রাম্পের অনুপস্থিতি অনেককেই অবাক করেছে। এক্সে ওই ছবিটি পোস্ট করেছেন ট্রাম্পের নাতনি কাই ট্রাম্প। ১৭ বছরের কাই ট্রাম্পের বড় ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র এবং ভেনেসা ট্রাম্প দম্পতির মেয়ে। ছবিটি পোস্ট করে তিনি এর ক্যাপশনে লিখেছেন-‘পুরো স্কোয়াড’।


ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৪


আরও পড়ুন

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম