বিবিএসের প্রতিবেদন
অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২.৬৬ শতাংশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অক্টোবরে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির ধাক্কা লেগেছে সার্বিক মূল্যস্ফীতির ওপর। এ মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। মাসটিতে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয় ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে হয় ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। মুদ্রাস্ফীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তান। এদিকে বাংলাদেশের গ্রাম ও শহর-সর্বত্র মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় নাকাল সাধারণ মানুষ। বাজারে গিয়ে নিত্যপণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সংস্থাটি।
বিবিএস বলছে, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। তাই সাধারণ ক্রেতারা বাজারে গিয়ে চরম সংকটে পড়ছেন। তারা যে আয় করেন তা দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না। চাহিদার অর্ধেক বা তারও কম নিত্যপণ্য কিনে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটেছে। জীবনযাত্রার মান নিচে নেমে গেছে। প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাত্রাও কমে আসছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্টোবরে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয় ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ। ওই মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয় ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এছাড়া খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে হয় ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ।
এদিকে শহরে অক্টোবার মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয় ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ। এছাড়া খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে হয় ৯ দশমিক ০৬ শতাংশ, যা সেপ্টম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। সূত্র জানায়, সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবিতে জুলাই মাসজুড়ে ছাত্র আন্দোলন চলেছিল। পরে সেটি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। এতে দেশে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়। রাজধানী ঢাকা কার্যত সারা দেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। স্থবিরতা নামে পণ্য সরবরাহ চেইনে। এর প্রভাবে জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠেছিল। এর আগে ২০২৩ সালের আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ হয়েছিল, যা গত ১২ বছরের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। তারও আগে খাদ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা যায় ২০১১ সালের অক্টোবরে ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ।
বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, অক্টোবর মাসে সামান্য বেড়েছে মজুরি হার। যা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ মাসে মজুরি হার বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ০৭ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৮ দশমিক ০১ শতাংশ। অক্টোবরে কৃষিতে মজুরি হার বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। শিল্পে মজুরি হার বেড়ে হয় ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ। এছাড়া সেবা খাতে মজুরি হার সামান্য বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।