যেসব কারণে প্রত্যাবর্তন ট্রাম্পের
শেখ ওবায়দুল্লাহ
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের পর বিশ্বমিডিয়ায় চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে। ইতিহাস গড়ে হোয়াইট হাউজের মসনদে ফেরার জন্য যে কটি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে, এর মধ্যে অন্যতম ছিল দেশের অর্থনীতি। গত চার বছর মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ অনেকটা হাঁফিয়ে উঠেছে। করোনার পর মূল্যস্ফীতি যে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে, তা সত্তরের দশকের পর যুক্তরাষ্ট্র আর কখনোই দেখেনি। আর এ সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে ট্রাম্প-শিবির। এছাড়া অভিবাসন ও কৃষ্ণাঙ্গ ইস্যু এবং লাতিন আমেরিকান, নারী ও তরুণ ভোটারদের বেশ ভালোভাবেই আকৃষ্ট করতে পেরেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর আলজাজিরা ও এপির।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের ভোটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল অর্থনীতি। গত চার বছরে মার্কিন অর্থনীতি খুব একটা শক্তিশালী অবস্থানে ছিল না বললেই চলে। আর এ সুযোগ তার নির্বাচনি প্রচারে কাজে লাগিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশজুড়ে চলেছে মূল্যস্ফীতি। প্রতিদিন বাড়তি মূল্য দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার কারণে ডেমোক্রেটিক দলের প্রসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের প্রতি স্বভাবতই নাখোশ ছিলেন ভোটাররা। এ কারণেই ট্রাম্প জনগণকে তার নির্বাচনি প্রচারে এ প্রশ্নটি স্বচ্ছন্দে করতে পেরেছেন, ‘আপনারা কি চার বছর আগের তুলনায় এখন ভালো আছেন?’ যার উত্তর ছিল ‘না’। তাই মার্কিন নাগরিকদের বেশির ভাগই রিপাবলিকান প্রার্থীকে বেছে নিয়েছেন।
এবারের নির্বাচনি প্রচারণায় ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগান ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। বলা হচ্ছে, অনেক মার্কিনি মনে করেন, ইউক্রেনে যে লাখ লাখ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে, তা যদি আমেরিকার ভেতরে খরচ করা হতো, তাহলে দেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী হতো। এ ব্যাপারটিও ট্রাম্পের জয়ে ভূমিকা রেখেছে। কারণ, চার বছর জো বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করা কমলা হ্যারিসকে ভোট দিতে চাননি অনেকে। তারা মনে করেছেন, হ্যারিসকে ভোট দিলে ইউক্রেনবিষয়ক নীতি অনেকটা একরকমই থাকত।
অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান ট্রাম্পকে ভোটারদের বহুলাংশে সমর্থন করে। বাইডেনের শাসনামলে অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে, যা মার্কিনিরা ভালোভাবে নিতে পারেননি।
কৃষ্ণাঙ্গ এবং লাতিন কমিউনিটির ভোট বেশি টানতে পেরেছেন ট্রাম্প। ট্রাম্প কৃষ্ণাঙ্গদের সম্পর্কে বর্ণবাদী এবং অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান-উভয় দল থেকে সমালোচিত হয়ে আসছেন। তবে এবার কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন ভোটারদের প্রতি রিপাবলিকানদের প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। সংবাদ সংস্থা এপির একটি পোল অনুসারে, এ বছর ট্রাম্প কৃষ্ণাঙ্গ ভোটের ২০ শতাংশ অর্জন করেছেন। যেখানে ২০২০ সালে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটের ১২ শতাংশ পেয়েছিলেন তিনি। ওই পোলে আরও দেখা যায়, ট্রাম্প ২০২০ সালের তুলনায় লাতিনদের ভোটও বেশি পেয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন চলাকালীন প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এবার তুলনামূলক কম নারী ভোটারদের সমর্থন জোগাড় করতে পেরেছেন কমলা হ্যারিস। ২০২০ সালে তার দলের প্রার্থী জো বাইডেন নারী ভোটারদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ সমর্থন পেয়েছিলেন। সেখানে এবার ৫৪ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন হ্যারিস।
এপির এক জরিপে দেখা যায়, তরুণ ভোটারদের মধ্যে হ্যারিসের সমর্থন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। জরিপ অনুসারে ৩০ বছরের কম বয়সি প্রায় অর্ধেক ভোটার হ্যারিসকে সমর্থন করেছেন। ২০২০ সালে যেখানে একই বয়সি ভোটারদের শতকরা ৬০ ভাগ বাইডেনকে সমর্থন জানায়।
এদিকে এ বছর তরুণ ভোটারদের ১০ জনের মধ্যে চারজনের বেশি ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন, যা ২০২০ সালের তুলনায় বেশি। ওই জরিপে আরও দেখা যায়, সুইং স্টেট মিশিগান এবং উইসকনসিনে ২০২০ সালের তুলনায় ট্রাম্প ৪৫ বছরের কম বয়সি ভোটারদের পাঁচ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছেন।