Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ওলামা মাশায়েখ মহাসম্মেলনে ঘোষণা

মাওলানা সাদকে আসতে দেওয়া হবে না

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মাওলানা সাদকে আসতে দেওয়া হবে না

মাওলানা সাদ

কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের সব কার্যক্রম ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে করার দাবি জানিয়ে ওলামা মাশায়েখরা বলেছেন, যারা ওলামায়ে কেরামদের কথা মানে, তাদেরই এখানে আসতে দেওয়া হবে। যারা বিরোধিতা করবে, তাদের আসতে দেওয়া হবে না। বরদাশত করা হবে না। কোনো অবস্থায়ই মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হবে না। মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘তাবলিগ, কওমি মাদ্রাসা ও দিন রক্ষার্থে’ এক মহাসম্মেলনে ঘোষণাপত্রে এ কথা বলেন তারা।

সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষা সিলেবাসের সর্বস্তরে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করাসহ নয় দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন ওলামা-মাশায়েখরা। সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মাওলানা মাহফুজুল হক। মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি খলিল আহমদ কাসেমী বলেন, টঙ্গী ময়দান ও কাকরাইল মসজিদ ওলামায়ে কেরামদের তত্ত্বাবধানে চলবে। ওলামায়ে কেরামদের কথা যারা মানে, তাদেরই এখানে আসতে দেওয়া হবে। যারা বিরোধিতা করবে, তাদের আসতে দেওয়া হবে না। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ মহিবুল্লাহ বাবুনগরীর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের বর্তমান মুরব্বি মাওলানা সাদ বিভিন্ন সময় কুরআন, হাদিস, ইসলাম, নবি-রাসুল, নবুয়ত, সাহাবায়ে কেরাম এবং শরয়ি মাসালা-মাসায়েল নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। তার বক্তব্যগুলো কুরআন-সুন্নাহবিরোধী, যা মেনে নেওয়া যায় না।

মহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, সরকারের প্রতি আমার দাবি হলো, যতদিন মাওলানা সাদ তার গোমরাহি বক্তব্য থেকে তওবা না করবে, ততদিন তাকে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া যাবে না। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা আলেমদের তত্ত্বাবধানে শুরায়ি নেজামে পরিচালিত হবে। কাকরাইল মারকাজের কার্যক্রম ওলামায়ে কেরামে জিম্মাদারিতে চালু রাখতে হবে। ব্যক্তি মাওলানা সাদের কারণে ছাত্র-জনতা ও আলেম-ওলামাদের কুরবানির বদৌলতে অর্জিত স্বাধীন নতুন এই বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হোক এবং অন্তর্বর্তী সরকার বেকায়দায় পড়ুক, আমরা চাই না। আমি আশা করি, সার্বিক বিবেচনায় সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

বাংলাদেশ নেজামে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক বলেন, আসন্ন বিশ্ব ইজতেমা ঘিরেও সাদপন্থিদের ষড়যন্ত্র চলছে। বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে স্বঘোষিত আমির সাদ ও তার অনুসারীরা বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা কোনোভাবেই সেটি হতে দেব না।

অনুষ্ঠানে মাওলানা আব্দুল হামিদ (মধুপুরের পির) বলেন, বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে সরকার দুই পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে। আমি বলব, কীসের পরামর্শ; এ সম্মেলন থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সরকারকে এটাই বাস্তবায়ন করতে হবে। ভিন্ন কোনো চিন্তা করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।

হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, আমরা ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এ সরকারকে বসিয়েছি। কেউ যদি রক্তচক্ষু দেখায়, তবে আমরা তাদের চক্ষু উপড়ে ফেলব। জাতির পথপ্রদর্শক হবে আলেমরা। তাবলিগের রাহবারও আলেমদের থেকেই হবে, অন্য কেউ নয়।

মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন আল্লামা আব্দুর রহমান হাফেজ্জি, আল্লামা নুরুল ইসলাম আদিব, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা রশিদুর রহমান, আল্লামা শাইখ জিয়াউদ্দিন, শায়েখ সাজিদুর রহমান, মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী, আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা আবু তাহের নদভী, মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা আরশাদ রহমানি, মাওলানা মুস্তাক আহমদ, প্রিন্সিপাল মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা আনোয়ারুল করীম, মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আলী, মাওলানা মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন প্রমুখ।

এদিকে মহাসম্মেলন উপলক্ষ্যে সোমবার গভীর রাত থেকেই সারা দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক বাসে করে ঢাকায় আসনে লাখো মুসল্লি। ফজরের নামাজের পর থেকেই তাবলিগ জামায়াতের লোকজন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এরপর উদ্যানের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন আলেম-ওলামারা। সম্মেলন ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সকাল ৯টা থেকে সম্মেলন শুরু হয়। বেলা দেড়টার দিকে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ মহাসম্মেলন। মোনাজাত পরিচালনা করেন শাহ মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

৯ দফা দাবি : মহাসম্মেলনে উপস্থাপিত ৯ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পরও কওমি মাদ্রাসাগুলোর ওপর ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘাপটি মেরে থাকা একটি বিশেষ মহল সুকৌশলে হস্তক্ষেপের পাঁয়তারা করে চলছে। এজাতীয় হয়রানি ও হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে হবে; সাধারণ শিক্ষা সিলেবাসের সর্বস্তরে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে; ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে মজলুম আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতার বিরুদ্ধে দায়ের সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে; ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে রাতের আঁধারে বর্বরোচিত ও নৃশংস গণহত্যায় দোষীদের বিচার কার্যকর করতে হবে; ২০১৮ সালের পহেলা ডিসেম্বর টঙ্গী ময়দানের জোড়ের প্রস্তুতিমূলক কাজে অংশগ্রহণকারী মাদ্রাসার নিরীহ ছাত্র-শিক্ষক এবং সাধারণ তাবলিগ সাথিদের ওপর সাদপন্থিদের পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় চালানো হামলার বিচার দাবি; স্বঘোষিত আমির মাওলানা সাদকে কোনো অবস্থায়ই বাংলাদেশে আসতে দেওয়া যাবে না; ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ি নেজামে পরিচালিত বিশ্ব ইজতেমা এক পর্বে আয়োজন করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার, তাই আগামী বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বেই অর্থাৎ প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি, ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭, ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হলো।

সাদপন্থিদের সংবাদ সম্মেলন আজ : এদিকে এ মহাসম্মেলনকে মাওলানা মোহাম্মদ যোবায়েরপন্থিদের ‘একটি রাজনৈতিক শোডাউন’ বলে দাবি করেছেন দিল্লির মাওলানা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা। এ বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় মাওলানা সাদপন্থি অংশের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. আবু সায়েম বলেন, এটি নিছক একটি রাজনৈতিক শোডাউন। সামনের নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে এবং মাদ্রাসার ছাত্রদের জড়ো করে তারা সরকারকে চাপে ফেলতে চাচ্ছে। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের রোখ (সময়) ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু। তখন আমরা কাকরাইলে যাব। ইনশাআল্লাহ। এদিকে এ বিষয়ে আজ বেল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবেন সাদপন্থি আলেমরা। হক্কানি ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি শফিউল্লাহ শাফী মাক্কি ও সাধারণ সাথিদের পক্ষে তৌহিদুল হক সোহেল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম