তরিকুলের স্মরণসভায় তারেক রহমান
কয়েকটি লাইন পরিবর্তন করলেই সংস্কার হবে না
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সংবিধানের কয়েকটি লাইন পরিবর্তন করলেই কি সংস্কার হয়ে যাবে? রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে মনে করি, যে পরিবর্তনের ফলে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে, সেটিই সংস্কার। শুধু সংবিধানের কয়েকটি লাইন পরিবর্তন করলেই সংস্কার হবে না। কী কী সংস্কার করা উচিত, বিএনপি ৩১ দফার আলোকে জনগণের সামনে তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। অনেকেই সংস্কারের কথা বলছেন। প্রত্যেকের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব প্রথম দিয়েছে বিএনপি। একবাক্যে সংস্কার বলতে সেটাই বুঝি, যে সংস্কার করলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। যে সংস্কার করলে বেকার সমস্যার সমাধান হবে। যে সংস্কার করলে নারীর স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিত হবে। যে সংস্কার করলে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। যে সংস্কার করলে দেশের সন্তানরা শিক্ষা পাবে। যে সংস্কার করলে কিঞ্চিৎ হলেও মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাবে। আমি সেই বিষয়গুলোকেই সংস্কার বলছি।
যশোর টাউন হল ময়দানে মঙ্গলবার বিকালে জেলা বিএনপি আয়োজিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত স্মরণসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
তরিকুল ইসলামের অবদান স্মরণ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, তরিকুল ইসলাম যতদিন বেঁচে ছিলেন, মানুষের অধিকার নিশ্চিতের লড়াই করে গেছেন। এদেশের মানুষের শিক্ষা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় লড়াই করেছেন তিনি। দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিএনপি অন্যমাত্রায় তরিকুল ইসলামকে স্মরণ করে। বিশেষ করে ২০১৩-২০২৪ সালের আন্দোলনেও তরিকুল ইসলামের অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শান্তিময় ঐতিহাসিক যশোরের সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তরিকুল ইসলাম। যার প্রমাণ আজকের মাঠের উপস্থিতি। তৃণমূলের সঙ্গে তার ছিল নিবিড় সম্পর্ক। তিনি কখনো তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেননি। তার শূন্যতা আমরা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি।
তারেক রহমান বলেন, ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ডামি ভোট, ভোটারবিহীন ভোট কিংবা ডাকাতির মাধ্যমে পতিত স্বৈরাচারী সরকার দেশের মানুষের প্রতিটি গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। ২০১৪ সালের আন্দোলনে দেখেছি তরিকুল ইসলাম কীভাবে অবদান রেখেছিলেন। গণতন্ত্রের পক্ষে মানুষকে সংগঠিত করেছিলেন। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সাক্ষী রয়েছেন। তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াই চালিয়ে গেছেন।
স্মরণসভায় বক্তব্য দেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয়সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। তরিকুল ইসলামের বর্ণাঢ্য জীবনের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে বক্তৃতা করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, ডাক্তার হারুন অর রশীদ, প্রেস ক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, অধ্যাপক আয়ুব হোসেন, তন্ময় সাহা, এজেডএম সালেক, মোশারফ হোসেন, মাওলানা বেলায়েত হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ। স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী অধ্যাপক নার্গিস বেগম, দুই সন্তান শান্তুনু ইসলাম সুমিত ও অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান খান, গোলাম রেজা দুলু, সাবেক পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ, একেএম শরফুদ্দৌলাহ ছটলু, মাহাতাব নাসির পলাশ, মাওলানা আব্দুল মান্নান, মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, অ্যাডভোকেট জাফর সাদিক, মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয়কৃষ্ণ মল্লিক, যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সাল প্রমুখ। স্মরণসভা ঘিরে যশোর শহরে বিএনপি নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে। বরেণ্য রাজনীতিক তরিকুল ইসলামের স্মরণসভায় যশোর ছাড়াও আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন। শহরের টাউন হল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় দুপুরের মধ্যেই।