খোকার স্মরণসভায় মির্জা ফখরুল
‘মাইনাস টু’ ফর্মুলার কথা কেউ চিন্তাও করবেন না
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আবারও ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে বাদ দিয়ে কিছু করার চেষ্টা করবেন না। এটা বাংলাদেশের মানুষ কখনো মেনে নেবে না। একবার ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলায় যাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। আবারও ওই পথে যাওয়ার কথা কেউ চিন্তাও করবেন না। শত প্রতিকূলতার মুখে বিএনপি বারবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে এসেছে। ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ এত চেষ্টা করেও বিএনপিকে ভাঙতে পারেনি। আমরা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে এক আছি। রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। খোকার মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষ্যে বিএনপি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া মিলাদসহ নানা কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে।
সভায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারকে বিশিষ্ট একজন ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমরা তাকে খুবই শ্রদ্ধা করি, আপনার অনেক সুনাম। সেই সুনামকে রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে বড় কাজ। যে দায়িত্ব আপনার ওপর পড়েছে, সে দায়িত্ব হচ্ছে-আপনি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবেন। অর্থাৎ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন দিয়ে, নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। আমি ক্ষমতার কথা বলি না, বলি দায়িত্ব দিতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, একজন উপদেষ্টা বলেছেন-রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যেতে উসখুস করছেন। এমন মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। আমরা এমন বক্তব্য আশা করি না। আমরা রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উসখুস করি না। আমরা বাংলাদেশকে হাসিনামুক্ত করার জন্য কাজ করেছি। জীবন দিয়েছি, প্রাণ দিয়েছি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা যুদ্ধ করছি। দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যত দেরি করবেন, তত হাসিনারা (শেখ হাসিনা ও তার দোসররা) আবার ফিরে আসবে, সুযোগ সৃষ্টি হবে। এখনো বলছি, আবারও বলছি-অতিদ্রুত নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন। জঞ্জাল যা আছে, সাফ করে ফেলুন। দায়িত্বটা আপনাদের দেওয়া হয়েছে। আমরা সব সময় সহযোগিতা করছি, আপনারাও সহযোগিতা করেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আমরা ভয়াবহ দানবের হাত থেকে মুক্ত হয়েছি। আপনাদের সঙ্গে যখনই দেখা হতো তখনই বলতাম আমাদের বুকে পাথর বসে আছে। পাথর গেলেও এখনো স্বস্তি নেই। কোথায় যেন আটকা আছি। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখন সরকার আছে, সেটা অন্তর্বর্তী সরকার।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার শুধু বিএনপির সঙ্গে নয়, সব দলের নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। ঢাকা শহরের সব সড়কের নামগুলো বিশিষ্ট মানুষের নামে করে দিয়েছিলেন তিনি। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখন তরুণ প্রজন্মের যুগ। যখন আব্বাস ও খোকা ভাই ছিলেন তখন ঢাকা শহর কাঁপত। তোমাদেরও কাঁপাতে হবে।
আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা বুঝতে পারছি না, হাসিনা তো চলে গেল। কিন্তু তার দোসররা তো রয়ে গেল এখনো। সচিবালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সংস্থায় হাসিনার লোকজন পাকাপোক্তভাবে বসে গেছে। একজন বিশেষ ব্যক্তি আছেন, যিনি এই দেশটাকে ধ্বংসের শেষদিকে নিয়ে যাবেন, যদি ড. ইউনূস সাহেব ওনার প্রতি কোনো ব্যবস্থা না নেন। তিনি খুব কাছাকাছি থাকেন ইউনূস সাহেবের। সেই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশ ধ্বংসের জন্য যা কিছু করার দরকার, তা করে যাচ্ছেন অবলীলায়।
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, দ্বিতীয় স্বাধীনতা কে আবিষ্কার করল? আমরা ফ্যাসিস্টমুক্ত হয়ে গেছি, কিন্তু এটা দ্বিতীয় স্বাধীনতা হলো কী করে, বুঝে আসে না। আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, অনেকবার পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি, কিন্তু দেশ ছেড়ে যাইনি। যদি কথা বলার থাকে আমরা বলব, তোমরা কারা? তিনি বলেন, আজ যারা সংবিধান পরিবর্তন করতে লম্বা লম্বা কথা বলছেন, দেশ স্বাধীন করার সময় তারা কোথায় ছিলেন? সুযোগ থাকতেও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেননি তারা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ও বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন প্রমুখ।
এর আগে রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র শাহাদাত হোসেনকে নিয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপি নেতা মাহবুবে রহমান শামীমসহ ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু দেশটাকেই ‘ধ্বংস’ করেনি, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে প্রতিটি নির্বাচনকে তাদের মতো করে সাজিয়েছিল। চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনপ্রিয় নেতা প্রতিযোগিতা করে ‘জিতেছিলেন’। কিন্তু আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্টরা’ বলপ্রয়োগ করে জনগণের ফল (রায়) কেড়ে নিয়েছিল। নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায়ে বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে শপথ নেওয়ায় আওয়ামী লীগ আমলে ভোটে কারচুপির প্রমাণ হয়েছে।