যুগান্তরকে রেজাউল করিম মল্লিক
ডিবি হবে মানুষের আস্থার জায়গা
রেজাউল করিম মল্লিক। বাংলাদেশ পুলিশের একজন ডিআইজি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হিসাবে যোগদান করেছেন গত ১ সেপ্টেম্বর। ১৭তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা হিসাবে তিনি ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। গত ১৮ বছর তিনি ঢাকার বাইরে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কাজ করেছেন।
বর্তমান কর্মস্থলে যোগদানের দুই মাস পূর্তি হয়েছে ১ নভেম্বর। এই দুই মাসে ডিবির কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মতো। এসব কার্যক্রমসহ নানা বিষয় নিয়ে বুধবার বিকালে যুগান্তরের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন রেজাউল করিম মল্লিক। একান্ত সাক্ষাৎকারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ডিবি হবে সাধারণ মানুষের আস্থার কেন্দ্রস্থল, আশা-ভরসার প্রতীক।
অন্যদিকে চাঁদাবাজ, দখলদার, সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং, মাদক ব্যবসায়ী, জঙ্গি এবং অবৈধ অস্ত্রধারীদের কাছে এটি হবে আতঙ্কের নাম। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়াই হবে আমার মূল চ্যালেঞ্জ।
ডিএমপির ডিবিপ্রধান রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের যেসব মন্ত্রী, এমপি, আমলা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, পুলিশ কর্মকর্তা দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপকর্মে জড়িত ছিলেন গত দুই মাসে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনেছি। আমি মনে করি, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তাদের গ্রেফতার করা জরুরি ছিল। তাদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে যেত।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি সেই বাংলাদেশের প্রতি মানুষের আকাঙ্ক্ষা অনেক। এই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ডিবির পক্ষ থেকে সরকারকে যে ধরনের সাপোর্ট দেওয়া দরকার সবই দেওয়া হবে। মহানগরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নগরবাসী জানমাল রক্ষায় যা করণীয় সবই করব। মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ইতোমধ্যেই ডিবিকে ঢেলে সাজিয়েছি।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে যারা ডিবির দায়িত্বে ছিলেন, তাদের বিষয়ে আপনারা অবগত আছেন। সে বিষয়ে আমি কিছু বলব না। আমি ডিবিতে দায়িত্ব নেওয়ার আগে দীর্ঘ ১৮ বছর ঢাকার বাইরে ছিলাম। গত দুই মাসে ডিবির কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছি। এক প্রশ্নের জবাবে রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, আমরা কেবল গত সরকারের হেভিওয়েটদেরই গ্রেফতার করিনি, অনেক পেশাদার সন্ত্রাসী-অপরাধীদেরও আইনের আওতায় এনেছি।
সাম্প্রতিক সময়ে যে কটি বিচ্ছিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে দ্রুত সেগুলোর রহস্য উদ্ঘাটন করেছি। এই মুহূর্তে ডিবির মূল চ্যালেঞ্জ কী জানতে চাইলে ঢাকার ডিবিপ্রধান বলেন, রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষ যেন স্বস্তি-শান্তিতে থাকতে পারে-তা নিশ্চিত করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়াই আমার চ্যালেঞ্জ।
ঢাকা মহানগরীর বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমপির প্রধান গোয়েন্দা কর্মকর্তা রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো। মোহাম্মদপুর এবং ধানমন্ডি এলাকায় ছিনতাইকারীদের তৎপরতা কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল। সেখানকার পরিস্থিতিও এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ডিবির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিবি হবে মানুষের আস্থার কেন্দ্রস্থল। মানুষ যাতে এখানে এসে কাঙ্ক্ষিত সেবা পান, সেটা নিশ্চিত করাই আমার মূল লক্ষ্য। ডিবিতে কোনো ‘ভাতের হোটেল’ থাকবে না। থাকবে না ‘আয়না ঘরও’।
ডিবি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আপনার বার্তা কী? জানতে চাইলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, প্রত্যেককেই নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে নিয়ম মেনে তদন্ত হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবাইকেই জবাবদিহির মধ্য থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমিও আইনের ঊর্ধ্বে নই। আমারও যদি কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে সেটাকেও জবাবদিহির আওতায় আনব।
তিনি বলেন, গত দুই মাসে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এসব নিয়ে বিশেষ বিশেষ টিম জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ভূমিকা রাখবে ডিবি।
ডিবি অতীতে অনেককেই রিমান্ডে নিয়েছে। এখনো অনেককে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। আগের রিমান্ড এবং বর্তমান সময়ের রিমান্ডের মধ্যে কোনো প্রার্থক্য আছে কিনা-জানতে চাইলে রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ডিবি হেফাজতে আগে কী ধরনের রিমান্ড হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর যাদের রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম গ্রহণ করছি। রিমান্ডে কাউকে নির্যাতন করা হচ্ছে না।