সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ
আবারও বাংলাদেশের হিমালয়-জয়
মনিকা ও ঋতুপর্ণা চাকমার গোলে বাজিমাত
ওমর ফারুক রুবেল, কাঠমান্ডু (নেপাল) থেকে
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই বেঞ্চের ফুটবলাররা ছুটে গেলেন মাঠে। সতীর্থদের জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। বিতর্কের ঝড় আর সমালোচনার আগুন যেন এক ফুঁৎকারে নিভিয়ে দিলেন তারা। দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়েদের ফুটবলে সেরার তকমা অক্ষুণ্ন রাখল বাংলাদেশ। সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। বুধবার কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে আবারও হিমালয় জয় করলেন সাবিনারা। দুই বছর আগে একই মাঠে একই প্রতিপক্ষকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবার নারী সাফের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার মনিকা চাকমা ও ঋতুপর্ণা চাকমার গোলে শিরোপা ধরে রাখলেন লাল-সবুজের মেয়েরা।
‘আভি নেহি তো কাভি নেহি (এখন নয়তো কখনোই নয়)’, কাঠমান্ডুর দৈনিক কান্তিপুর সাফ ফাইনালের আগে নেপালের মেয়েদের এভাবেই সতর্ক করে দিয়েছিল। নারী সাফের সাত আসরের ছয়টিতে ফাইনাল খেললেও শিরোপা অধরা নেপালের। বারবার জেতা রানার্সআপ ট্রফিটা এবার চায়নি তারা। কিন্তু ভাগ্য বদলায়নি নেপালের।
নেপালিদের প্রিয় উৎসবের নাম দীপাবলি। এ দেশে এই উৎসবের পোশাকি নাম তিহার। যেটি পাঁচদিন ধরে চলে। এবারের দীপাবলি শুরু হবে আজ থেকে। উৎসবের আঁচ টের পাওয়া যাচ্ছিল কাঠমান্ডুর অলিগলিতে কান পাতলেই। তেলের প্রদীপ জ্বালানোর পাত্র জোগাড় করা, আবির উৎসবের রং, আতশবাজি-সবকিছু কেনার ধুম পড়েছে। কিন্তু শিরোপার আক্ষেপ কিছুটা হলেও তাদের দীপাবলির উৎসবকে ম্লান করে দেবে।
পাকিস্তানের সঙ্গে কপালে চোট পেয়েছিলেন ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার জুনিয়র। পরে পায়ের ইনজুরিতেও পড়েন। ভারতের বিপক্ষে দুই গোল করা এই ফুটবলারকে ফাইনালে খেলানো নিয়ে শঙ্কা ছিল। কিন্তু সব শঙ্কা উড়িয়ে একাদশেই ফিরেছেন শামসুন্নাহার। ফলে ম্যাচের শুরুতে বেঞ্চে বসে থাকতে হয় সাগরিকাকে। অন্যদিকে নেপালের লাল কার্ড দেখা রেখা পাউডেলের জায়গায় ফাইনাল মঞ্চে নামেন আমিষা খাড়কি।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে খেলেছে দুই দল। প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য সমতায়। গোলের জন্য মরিয়া দুই দলই বিরতির পর আক্রমণ-পালটা আক্রমণে ম্যাচ জমিয়ে তোলে। এরই ধারাবাহিকতায় ৫১ মিনিটে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন মনিকা চাকমা। সংঘবদ্ধ আক্রমণে তহুরা ও সাবিনা খাতুন বল দেওয়া-নেওয়া করছিলেন বক্সের সামনে। জটলার মধ্যে বল পান মনিকা। সেখান থেকে তিনি প্লেসিংয়ে গোল করেন (১-০)। তবে সেটি টিকেছে কেবল তিন মিনিট। আমিশা খাড়কির গোলে স্বাগতিক নেপাল দ্রুতই সমতায় ফেরে। মধ্যমাঠ থেকে প্রীতিরাই দারুণ থ্রু পাস ঠেলেন সতীর্থ আমিশাকে। সেখানে বাংলাদেশের ডিফেন্স পরাস্ত হয়। আগুয়ান গোলকিপার রুপনা চাকমাকে পরাস্ত করেন আমিশা (১-১)। এর মাঝে দুই দলই গোলের সুযোগ তৈরি করে। তবে আর কেউ গোলের দেখা পাচ্ছিল না, ব্যর্থতা নিয়ে ফিরছিল প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগ থেকে। ৬৭ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে অসাধারণ এক শট নেন মারিয়া মান্দা। সেটি ঠেকিয়ে দেন নেপাল গোলকিপার আঞ্জিলা। ৭১ ও ৭৬ মিনিটে পরপর দুটি প্রতি-আক্রমণে ব্যর্থতা নিয়ে ফেরে নেপালি মেয়েরা। পরে বাংলাদেশ ম্যাচে আবারও লিড নেয় ৮২ মিনিটে। বাঁপ্রান্তে থ্রো ইন পায় বাংলাদেশ। মাসুরার থ্রো থেকে বল পান ঋতুপর্ণা চাকমা। দূর থেকে কোনাকুনি জোরালো শটে ঋতুপর্ণা গোল করেন। নেপালের গোলকিপার বল হাতে লাগালেও সেটি পোস্টের ভেতরের অংশে লেগে জালে জড়িয়ে যায় (২-১)। উৎসবে মাতে বাংলাদেশ। বাকি সময়ে আর কেউ গোল করতে পারেনি। ফলে ২-১ গোলের অসাধারণ জয়ে টানা দ্বিতীয় সাফ শিরোপা জিতে নিল বাংলাদেশ।