ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র
আমরা বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা চর্চায় বিশ্বাসী
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশের জনগণের মতপ্রকাশ, সমাবেশের স্বাধীনতার মতো মৌলিক স্বাধীনতাচর্চায় যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ক্ষমতায় যেই থাকুক না কেন, এটাই আমাদের বিশ্বাস।
সোমবার ওয়াশিংটনে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি নিষিদ্ধ হওয়া ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়, সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে বাংলাদেশ পুলিশ সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করে ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িতদের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অপরাধে গ্রেফতার করেছে। তারা সম্প্রতি এ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক মতপ্রকাশের ওপর এমন কর্মকাণ্ডের প্রভাবকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে দেখে? বাংলাদেশে ন্যায্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং নাগরিক স্বাধীনতাকে সমর্থন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নিতে পারে?
জবাবে মিলার বলেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণের মতপ্রকাশ, সমাবেশের স্বাধীনতার মতো মৌলিক স্বাধীনতাচর্চায় বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের ক্ষমতায় যে দলই থাকুক না কেন, এটাই আমাদের বিশ্বাস। আমরা এই মঞ্চ থেকে বিষয়টি বহুবার স্পষ্ট করেছি।
আরেক প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশে ২৫২ জন পুলিশ সাব-ইনস্পেকটরকে চূড়ান্ত নিয়োগ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সব হিন্দু অফিসারকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ধর্মীয় বৈষম্যের বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তর কি কোনো প্রতিক্রিয়া দেবে?
জবাবে মিলার বলেন, আমি এ ধরনের কোনো রিপোর্ট দেখিনি। তবে স্পষ্টতই আমরা বিশ্বাস করি, আমি স্পষ্টতই বলতে চাই, আমরা বাংলাদেশে বা বিশ্বের যে কোনো প্রক্রিয়ায় যে কোনো ধরনের ধর্মীয় বৈষম্যের বিরোধিতা করি।
পরে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বৈষম্যহীন নিয়োগকে সমর্থন করার জন্য পররাষ্ট্র দপ্তর কীভাবে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে? জবাবে মিলার বলেন, আমি আগে যা বলেছি, সেটার সঙ্গে নতুন করে যোগ করার কিছু নেই।
কথিত বৈষম্যের এ ধরনের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে কি না-এমন প্রশ্নে মিলার বলেন, আপনি আমাকে এমন একটি প্রতিবেদন সম্পর্কে অনুমানভিত্তিক উত্তর দিতে বলছেন, যা আমি দেখিনি। আর আমি সেটা করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছি।
পরে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী সম্প্রতি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের সফর নিয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব। তিনি ডেপুটি সেক্রেটারি ভার্মা, আন্ডার সেক্রেটারি জন বাস এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ছাড়াও এনএসসি এবং গ্লোবাল অ্যান্টি-করাপশন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আপনারা কীভাবে মূল্যায়ন করছেন, সে সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ জানতে চাচ্ছি। জবাবে মুখপাত্র মিলার বলেন, এ বিষয়ে জানানোর মতো আমার কাছে আর কোনো রিডআউট নেই। পরে ওই প্রশ্নকারী বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ধনকুবেরদের ১৭ বিলিয়ন ডলার লুট ও বিদেশে পাচারের প্রসঙ্গে জানতে চান। তিনি বলেন, ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের মতে, শেখ হাসিনার সাবেক প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত টাইকুনদের বিরুদ্ধে তার শাসনামলে ব্যাংকিং খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। একে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা বলা হচ্ছে। আপনারা কীভাবে এ অর্থ উদ্ধার করতে এবং বিশ্বব্যাপী এ ধরনের অপরাধের জন্য দায়ীদের জবাবদিহি করতে সাহায্য করতে পারেন? মুশফিকুল ফজল আনসারী আরও বলেন, আজ এ ব্রিফিং রুমে আমার শেষ দিন। কারণ, আমি বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকার আমাকে রাষ্ট্রদূতের পদে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে এবং আমি তা গ্রহণ করেছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাকে কোথাও পদায়ন করবে। সংবাদদাতা হিসাবে এ ব্রিফিং রুমে আমার গত ১০ বছরের যাত্রায় আমি আপনাকে এবং আমার সব সহকর্মীর কাছে কৃতজ্ঞ। জবাবে মিলার তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আপনাকে ধন্যবাদ। প্রশ্নের বিষয়ে বলতে হয়, আমি সেই প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়ে কিছু বলতে পারছি না, এর প্রভাবের বিষয় তো দূরের কথা। তবে আপনাকে অভিনন্দন।