বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ

ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ষোলো বছর পর নতুন সভাপতি পেল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। শনিবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১২৩ ভোট পেয়ে সংস্থাটির প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক ফুটবলার তাবিথ আউয়াল। এর আগে দুই মেয়াদে সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। গোলাম মোস্তফা, এসএ সুলতান ও কাজী সালাউদ্দিনের পর বাফুফের চতুর্থ নির্বাচিত সভাপতি হলেন তাবিথ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আ ফ ম মিজানুর রহমান চৌধুরী পেয়েছেন মাত্র পাঁচ ভোট। শনিবার এই তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন। বাফুফের নির্বাচনে সভাপতি পদে এবারই এত বড় ব্যবধানে জিতলেন কেউ। সালাউদ্দিনের আমলে এর আগে স্বতন্ত্র থেকে ২০১২ এবং ২০১৬ সালের নির্বাচনে সহসভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তাবিথ। ২০২০ সালে সহসভাপতি পদে দাঁড়ালে মহিউদ্দিন আহমেদ মহির কাছে চার ভোটে হেরে যান তিনি।
এর আগে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) উত্থাপিত প্রায় ৬১ কোটি টাকার বাজেট পাশ হয়নি, যা নতুন কমিটির জন্য চ্যালেঞ্জের হয়ে উঠবে। সহসভাপতি পদে হেরে গেছেন সাবেক দুই তারকা ফুটবলার সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির ও শফিকুল ইসলাম মানিক। তবে জিতেছেন অন্য চার প্রার্থী শাহরিয়ার জাহেদী, ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপি, সাব্বির আহমেদ আরিফ ও ফাহাদ করিম। ১১৫ ভোট পেয়ে প্রথম সহসভাপতি নির্বাচিত হন শাহরিয়ার জাহেদী। বাফুফে সহ-সভাপতি নির্বাচনে এর আগে কেউ একশ ভোট পাননি। জাহেদী যশোরের শামসুল হুদা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা। সেই একাডেমি থেকে জাতীয় দল ও প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে খেলছেন অনেকে। তৃণমূলের এই সংগঠক এবার বাফুফে নির্বাচনে বাজিমাত করলেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কাউন্সিলর ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপি ১০৮ ভোট পেয়েছেন। তিনি বিএনপির সাবেক এমপি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরীর বড় ভাই। ক্রীড়াঙ্গনের শীর্ষ পর্যায়ে পরিচিতি না থাকলেও তিনি ভোটে দ্বিতীয় হয়েছেন। ব্রাদার্স ইউনিয়নের সদস্য সচিব সাব্বির আরেফ ৯০ ভোট পেয়ে তৃতীয় ও ফাহাদ করিম ৮৬ ভোট পেয়ে চতুর্থ সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। কিংবদন্তি ফুটবলার সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির ৬৬ এবং আরেক সাবেক ফুটবলার শফিকুল ইসলাম মানিক পেয়েছেন ৪২ ভোট। সাব্বির ২০১৬ সালে সহ-সভাপতি পদে এবং মানিক ২০২০ সালে সভাপতি পদেও হেরেছিলেন।
১৫টি সদস্য পদের বিপরীতে নির্বাচিত হয়েছেন ১৪ জন। এরা হলেন-ইকবাল হোসেন (৯৮), আমিরুল ইসলাম বাবু (৯৬), গোলাম গাউস (৯২), মাহিউদ্দিন সেলিম (৮৮), টিপু সুলতান (৮৭), মঞ্জুরুল করিম (৮৬), জাকির হোসেন চৌধুরী (৮২), মাহফুজা আক্তার কিরন (৮১), কামরুল হাসান হিলটন (৮০), সত্যজিৎ দাস রুপু (৭৬), ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ (৭২), সাইদ হাসান কানন (৬৭), সাখাওয়াত হোসেন ভূইয়া শাহিন (৬৬) ও বিজন বড়ুয়া (৬২)। তবে সমান ৬১টি করে ভোট পেয়েছেন এখলাস উদ্দিন ও সাইফুর রহমান মনি। এখান থেকে একজনকে বেছে নিতে ফের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচিত হয়ে বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ বলেন, ‘বিগত জুলাই-আগস্ট মাসে বিপ্লবী ছাত্র-জনতার অবদানে মুক্ত বাংলাদেশে আজকে আমরা আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই একজন তরুণ ক্রীড়াপ্রেমী আমাদের বর্তমান ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে। তার দিকনির্দেশনায় এবং তার সাহসে আমরা এ রকম একটা ভালো মুক্ত পরিবেশে নির্বাচন করে আগামী দিনের ফুটবলকে আরো ভালো জায়গায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
সভাপতি হয়েই গঠনতন্ত্র সংস্কারের তাগিদ জানিয়ে তাবিথ বলেন, ‘আমরা সবাই একমত যে ফুটবলে আমরা সংস্কার আনতে চাই। এই কারণে আমরা শুরুতে গঠনতন্ত্র সংস্কারের বিষয়টি হাতে নেব। একই সঙ্গে যেন মাঠে খেলা চলমান থাকে এবং দেশের ফুটবলের মান আরও ওপর যায় সেই চেষ্টাও থাকবে।’
সালাউদ্দিন আমলে নির্বাহী সভায় অনেক সিদ্ধান্ত হতো না। সভাপতির ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অনেক কিছু হয়েছে। তাবিথ আমলে কেমন চর্চা হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে নতুন সভাপতি বলেন, ‘আমাদের কমিটি কীভাবে চলবে, কোন প্রক্রিয়ায় চলবে সেগুলো আমরা আমাদের প্রথম নির্বাহী মিটিংয়ের মাধ্যমে আপনাদেরকে পেশ করব। মুখের কথা নয়, অ্যাকশনে বিশ্বাস করি। আপনারা একটু ধৈর্য ধরেন, আমাদের কাজের ফলাফল দেখতে পাবেন।’ নির্বাহী কমিটির সবাই মিলে সকল চ্যালেঞ্জ উতরানোর প্রত্যাশা তাবিথের। তিনি বলেন, আমরা এখানে ছয় জন নির্বাচিত হয়েছি। কিছুক্ষণ পর আরও ১৫ জন নির্বাহী সদস্য হিসাবে আসবেন। এই দল নিয়ে আমি বিশ্বাস করি কোনো চ্যালেঞ্জই চ্যালেঞ্জ নয়।’