Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে বৃষ্টি ঝড়ো হাওয়া

উপকূলীয় ১৪ জেলায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা

বেতাগীতে গাছ পড়ে একজনের মৃত্যু * বিভিন্ন রুটে বন্ধ নৌযান চলাচল

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উপকূলীয় ১৪ জেলায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃহস্পতিবারও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়েছে। কোথাও মাঝারি, কোথাও ভারি বৃষ্টি হয়েছে।

এদিন রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, মধ্যরাতে বা আজ ভোরে ভারতের ওড়িশা রাজ্যের উপকূলে আঘাত হানছে দানা। এর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় ১৪ জেলায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।

এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন উপকূলের মানুষ। ইতোমধ্যে খুলনার কয়রার কপোতাক্ষ নদের দশহালিয়া বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভোলা-লক্ষ্মীপুর, ঢাকা-মনপুরা ও টেকনাফ-সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে প্রবল বাতাসে ৭টি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বরগুনার বেতাগীতে গাছ পড়ে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে সাগর উত্তাল থাকায় দেশের চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং নদীবন্দরে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ‘দানা’ ভারতের পুরী ও সাগর দ্বীপের মাঝখান দিয়ে উত্তর ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করার কথা।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারি (২৮৯ মিলোমিটার) বর্ষণ হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, বারিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিুাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকার ফায়ার স্টেশনগুলোর সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে তাদের সবাইকে সতর্ক ডিউটিতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এছাড়া সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও জানিয়েছে তারা। ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী খুলনা বিভাগে খোলা হয়েছে বিভাগীয় মনিটরিং সেল।

খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনসাধারণকে সচেতন, সতর্ক ও সাবধান করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। গতকাল সকাল থেকে এই দুই বিভাগসহ উপকূলবর্তী এলাকায় সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারণা চালানো হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রামের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়। যুগান্তর প্রতিবেদন, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

বরিশাল : জেলায় ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হলেও বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত অধিকাংশই ছিল ফাঁকা। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০০ করে মোট ২ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ লোক আশ্রয় নিতে পারবে। এদিকে দিনভর বৃষ্টিতে নগরীর সদর রোড, অক্সফোর্ড মিশন রোড, পলাশপুর, রসুলপুর, মোহাম্মদপুর, কাউনিয়া, প্যারারা রোড, রূপাতলী হাউজিং, কলেজ অ্যাভিনিউ, বটতলা এলাকাসহ নিুাঞ্চলগুলোতে জলাবদ্ধতা হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা। বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে একতলাবিশিষ্ট লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ভোলা : ভোলা-লক্ষ্মীপুর, ভোলা-মনপুরা, ঢাকা-মনপুরা, ঢাকা-বেতুয়া, মির্জাখালু-আলেকজান্ডার, দৌলতখান-আলেকজান্ডার, বেতুয়া-মনপুরাসহ ৭ রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করেছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। এতে চট্টগ্রামগামীসহ ৭ রুটে কয়েক হাজার যাত্রী আটকা পড়েছে। ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান জানান, ঝড়ের কারণে লঞ্চ না ছাড়ায় তিনি নদীর পাড় থেকে ফিরে আসেন। এমন কথা জানান ওই রুটের যাত্রী মো. আলমগীর হোসেন ও মো. সফিকুর রহমান।

মোংলা (বাগেরহাট) : সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে বন্দরে অবস্থানরত দুটি জাহাজে চীন থেকে আমদানি হওয়া সার খালাস বন্ধ রয়েছে। জাহাজ দুটি হলো-চীনা পতাকাবাহী ‘গ্রেড বিউটি’ ও হংকং পতাকাবাহী ‘হুয়া ইয়ং মেই গুই’। এছাড়া আরও পাঁচটি জাহাজে পণ্য খালাস ব্যাহত হচ্ছে। হারবার মাস্টার কমান্ডার সাইফুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, বৃষ্টির কারণে পণ্য ওঠানামা বিঘ্নিত হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, মোংলা নদী ও পশুর নদীর পানি স্বাভাবিক। নদীতে লাইটার ও ট্রলার চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে। তবে বন্ধ রয়েছে সুন্দরবনের পর্যটনকেন্দ্রিক সব নৌযান।

বরগুনা ও বেতাগী : বেতাগীতে গাছচাপায় আশ্রাব আলী (৬১) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে মোকামিয়া ইউনিয়নের কিসমত ছোট মোকামিয়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আশ্রাব আলী বেতাগী সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের কিসমত করুনা গ্রামের মৃত জোনাব আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি পানের বরজে কাজ করতেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঝড়ো বাতাসে গাছটি ভেঙে তার মাথায় পড়েছিল। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পটুয়াখালী : মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলি গ্রামে প্রবল বাতাসে ৭টি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় ৩ জন আহত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ করা হয়েছে। জেলায় ৮২৯টি আশ্রয়কেন্দ্র, প্রায় নয় হাজার সিপিপি সদস্য ও পর্যাপ্ত মেডিকেল টিম, উদ্ধারকর্মী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

কয়রা (খুলনা) : কয়রার কপোতাক্ষ নদের দশহালিয়া বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের। ভাঙন রোধে তাৎক্ষণিক কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, দ্রুত বাঁধ সংস্কার করা না হলে দশহালিয়া গ্রামসহ পাশের কয়েকটি গ্রাম লোনা পানিতে তলিয়ে যাবে।

টেকনাফ (কক্সবাজার) : বুধবার থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে বোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবারও এ রুটে কোনো যাত্রী বা মালবাহী বোট চলাচল করেনি। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী জানান, ৩নং সতর্ক সংকেত বহাল থাকায় বোট চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম