পূর্বাচলে হাসিনা পরিবারের ৬০ কাঠা
প্লট বরাদ্দের অনিয়ম তদন্তে কমিটি
যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশের পর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বোন শেখ রেহানাসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এছাড়া ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাজউকের প্লট বরাদ্দে যত অনিয়ম হয়েছে তাও তদন্ত করবে ওই কমিটি। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জসিম উদ্দীন সরকার ও প্রকৌশলী আলমগীর হাসিন এ কমিটিতে থাকবেন।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রুলসহ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করে আইনজীবী মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দীন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী। পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১২০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিবকে আদালতে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এর আগে ৫ সেপ্টেম্বর ‘পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প, হাসিনা পরিবারের ৬০ কাঠা প্লট’ শিরোনামে যুগান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদন যুক্ত করে ১০ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচলে বরাদ্দকৃত প্লটসহ রাজউকের সব অবৈধ বরাদ্দ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। সুপ্রিমকোর্টের ১০ আইনজীবীর পক্ষে মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দীন রিটটি দায়ের করেন।
রিট আবেদনকারী আইনজীবীরা হলেন, মো. রেজাউল ইসলাম, আল রেজা মো. আমির, মো. গোলাম কিবরিয়া, মোহাম্মদ হারুন, মো. বেলায়েত হোসেন সোজা, কামরুল ইসলাম রিগান, হাসান মাহমুদ খান, শাহীনুর রহমান শাহীন ও মো. জিল্লুর রহমান। রিটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ বাতিলসহ রাজউকের সব অবৈধ বরাদ্দ বাতিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
এসব অবৈধ বরাদ্দের সঙ্গে জড়িত এবং সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রার্থনা করা হয়। এছাড়া এসব বরাদ্দের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের একজন প্রাক্তন বিচারপতিকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
ওইদিন আইনজীবী মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দীন সাংবাদিকদের জানান, রাজউকের (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) আলোচিত পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে স্বয়ং নিজের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্লট নিয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এ ছাড়া প্লট বরাদ্দ প্রাপ্তদের তালিকায় আছেন হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার দুই ছেলেমেয়ে। ২০২২ সালে তারা প্লট বুঝে পান।
পরে বিষয়টি রাষ্ট্রীয় অতি গোপনীয় বিষয় হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া খোদ রাজউকেরই অনেকে এ বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রত্যেকে সর্বোচ্চ ১০ কাঠা আয়তনের প্লট নিয়েছেন। প্রস্তাবিত কূটনৈতিক জোনে সব প্লট একত্রে সন্নিবেশিত করার সুযোগ দেয় রাজউক।
যুগান্তরসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের রেফারেন্স উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট মিসবাহ জানান, নিজেকে অসহায় এবং নিঃস্ব বলে সভা-সমাবেশে রাজনৈতিক বক্তব্য দিলেও শেখ হাসিনা স্বয়ং নিজের নামে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। পূর্বাচলে প্রস্তাবিত কূটনৈতিক জোনে ২৭ নম্বর সেক্টরে ২০৩ নম্বর রোডে তার প্লট নম্বর ০০৯। ২০২২ সালের ৩ আগস্ট তার নামে বরাদ্দপত্র ইস্যু করে রাজউক।
রাজউকের আইন ও বিধি অমান্য করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে শুধু এই ৬টি প্লট নয় এরকম অন্যান্য প্লটের বরাদ্দ চ্যালেঞ্জ করে এই রিট পিটিশন করা হয়। রিটে আবেদনে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজউকের চেয়ারম্যান, পূর্বাচল প্রকল্প পরিচালক, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রেজওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং আজমিনা সিদ্দিক রুপান্তিকে বিবাদী করা হয়।