বিজিএমইএ’র সংবাদ সম্মেলন
সহিংসতায় পোশাকশিল্পে ক্ষতি ৪০ কোটি ডলার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গার্মেন্টশিল্পের সাম্প্রতিক অস্থিরতায় ৪০ কোটি ডলারের উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে। বিদেশি অনেক ক্রেতা অর্ডার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে নিয়ে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ক্রেতাদের মনে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। আসন্ন মৌসুমের অর্ডারের ওপর নির্ভর করবে পোশাকশিল্পের ভবিষ্যৎ। শনিবার রাজধানীর উত্তরায় নিজ কার্যালয়ে পোশাকশিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন। এ সময় বিজিএমইএ’র শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাকশিল্প একটি নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জিং সময় পার করেছে। শ্রম খাতে চরম অস্থিরতা, সেই সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিল্প এক রকম বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বে পোশাক আমদানি কমে আসছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি বাড়লেও বাংলাদেশ থেকে আমদানি কমেছে। পক্ষান্তরে প্রতিযোগী দেশ চীন, ভিয়েতনাম, ভারত ও কম্বোডিয়া থেকে বেড়েছে। ইউরোপেও প্রতিযোগী দেশগুলোর চাইতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। তুলনামূলক রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হিসাবে চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.৩৪ শতাংশ, যেখানে ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫.৫৭ শতাংশ এবং ভারতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ এই বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় প্রবৃদ্ধিতে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছি আমরা, যা রপ্তানি আদেশ স্থানান্তরকে ইঙ্গিত করে।
খন্দকার রফিক বলেন, এ মুহূর্তে শিল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা। পোশাকশিল্পে চাঁদাবাজি ও ঝুট সন্ত্রাসের মতো সমস্যাগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য কাস্টমস, বন্দরসংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলো সহজতর ও দ্রুততর করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য লোডিং ও আনলোডিংয়ে অহেতুক বিলম্ব বন্ধ করতে হবে। সরকারের সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম হব আশা করি।
তিনি বলেন, গত দুই মাসে পোশাকশিল্পে দীর্ঘায়িত শ্রম অস্থিরতায় আমাদের অনেক মাশুল দিতে হয়েছে। এই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি চাই না। যারা শিল্প ও অর্থনীতি নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে, তাদের কঠিন আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সংকট উত্তরণ ও শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ৭ দফা জানিয়ে খন্দকার রফিক বলেন, শিল্পের এই ক্রান্তিকালে পরবর্তী ৩ মাসের জন্য কারখানার ইউটিলিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা থেকে বিরত থাকা; ব্যাংক খাতের সংস্কার যেন উৎপাদন ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের ওপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি না করে সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা; কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে তার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা; উপযুক্ত নীতি-সহায়তা প্রণয়নে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন; যৌক্তিক মূল্যে বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, ঝুট বিষয়ে বহিরাগতদের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া এবং ঋণখেলাপি গণ্য করার ক্ষেত্রে ৩টি কিস্তি ব্যর্থ হওয়ার পরিবর্তে ৬টি কিস্তি বিবেচনায় নিতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খন্দকার রফিক বলেন, গত দুই মাসের শ্রম অস্থিরতার কারণে ৪০ কোটি ডলারের উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে পোশাকশিল্পের অর্ডার প্রতিযোগী দেশে চলে গেছে। এখন পোশাক শিল্প স্থিতিশীল আছে। আশা করছি আগামী মৌসুমে রপ্তানি আদেশ ফেরত আসবে। অক্টোবরের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ ও ভাতা বৃদ্ধির দাবি বাস্তবায়ন করা হবে।