শেখ হাসিনাকে এক মাসের মধ্যে ফেরাতে সবকিছু করব: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফেরাতে সবকিছু করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ পত্রিকা মারফত এইমাত্র জানলাম। এইমাত্র রুমে ঢোকার ৫ মিনিট আগে আমার কাছে কাগজটা পৌঁছেছে। আমরা অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এক মাস সময় দিয়েছেন কিন্তু আদালত। এ সময়ের মধ্যে আমরা তাকে ফেরত আনার চেষ্টা অবশ্যই, আমাদের জন্য যা যা করা প্রয়োজন সেটা করব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের চেষ্টায় ‘গণহত্যার’ দুই অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে এদিন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ১৮ নভেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও অন্য আসামিদের আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন আদালত। এর কয়েক ঘণ্টা পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
শেখ হাসিনার বর্তমান ‘স্ট্যাটাস’ কী-এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার মনে হয়, এ প্রশ্নটার জন্য এ উত্তরই যথেষ্ট। এক প্রশ্নের মধ্যে আমরা ঘোরপ্যাঁচ না করি। কেননা মাত্রই খবরটা এসেছে। আপনারা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরও ডিটেইলস আসবে, তখন দেখতে পাবেন।’
কোন পদ্ধতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফেরত আনা হবে? জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি এ নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না। কী পদ্ধতিতে আনা হবে, পদ্ধতিটা তো গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে, কোর্ট বলেছে তাদের অ্যারেস্ট করতে। অ্যারেস্টের ওয়ারেন্টটা তো আমার কাছে আসেনি। গেছে নিশ্চয় পুলিশের কাছে। পুলিশ পারবে না। কারণ, উনি দেশে নেই। তখন আমাদের সম্পৃক্ততার বিষয় আসবে। এটুকু আমার মনে হয় আজকের মতো যথেষ্ট। কাজেই এটা নিয়ে আপনারা আর যাই প্রশ্ন করেন না কেন, এর চেয়ে বেশি কিছু আমি বলতে পারব না।’
শেখ হাসিনার অবস্থানের তথ্যের প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনো স্পেসিফিক তথ্য আসেনি। তবে আমি যতটুকু আনঅফিশিয়ালি জানতে পেরেছি, উনি সম্ভবত দিল্লিতেই আছেন।’ আওয়ামী লীগের অন্য নেতা বা সরকারি কর্মকর্তারা কে কোথায় আছেন, তালিকা আছে কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার এ তালিকাটা অনেকটা মিডিয়া থেকেই নেওয়া। এখানে যেটুকু আছে, আপনারা যেটুকু জানেন, আমি সেটুকু জানি। অনেক ক্ষেত্রে হয়তো আপনারা বেশিও জানেন।’ এ কূটনীতিক বলেন, ‘এখন ৪০ জনের তালিকা বা যেটুকু দেওয়া হয়েছে, আমরা চেষ্টা করব, তাদের সবাইকে লোকেট করতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে, যখন আমাদের কাছে কাগজপত্র এসে পৌঁছাবে।’
এ সময় লেবাননে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যুদ্ধাক্রান্ত লেবানন থেকে বাংলাদেশি প্রবাসীদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। ১ হাজার ৮০০ জনের মতো দেশে ফিরে আসতে নিবন্ধন করেছেন। তিনি বলেন, লেবানন থেকে বাংলাদেশিদের ফেরাতে পর্যাপ্ত বিমানের সংকট রয়েছে। সমুদ্রপথে বাংলাদেশিদের ফেরানোর কথা ভাবছে সরকার। ২০-২২ অক্টোবর থেকে ৫০-৫২ জনের মতো করে ফেরত আনা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় টানাপোড়েন ছিল, সেটা কেটে গেছে।’ এ সময় কূটনীতিকদের বিষয়ে তিনি বলেন, শুধু বিগত সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যুক্তিযুক্ত না। নিয়মনীতির বাইরে গিয়ে কোনো কূটনীতিক কাজ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
ভারতীয় ভিসা পুরোপুরি চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে বলেছিল। আমরা রাষ্ট্রদূতকে ওই বিষয়ে নিশ্চিত করেছি। যত দ্রুত সম্ভব সেটি (ভিসা) চালুর বিষয়ে অনুরোধ করেছি। আমরা বলেছি, অনেক ক্ষেত্রে তৃতীয় দেশের ভিসার জন্যও দিল্লি যাওয়ার প্রয়োজন হয়, সেটিও বলেছি। তিনি আরও বলেন, তবে ভিন্নপথে তৃতীয় দেশের ভিসাপ্রাপ্তির ব্যবস্থা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রোমানিয়ার ভিসা ভিয়েতনাম থেকে নেওয়া যাবে। পাকিস্তান থেকেও কিছু দেশ ভিসা নিতে বলেছে, তবে পাকিস্তান যাওয়াও কঠিন।