সচিবালয়ে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম
বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মনে করে না বর্তমান সরকার
বাতিল ১৫ আগস্ট, ৭ মার্চসহ আটটি জাতীয় দিবস
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা মনে করে না অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামী লীগ বিতর্কিত করেছে। তাকে আপনারা জাতির পিতা মনে করেন কি না-এমন প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দল হিসাবে ফ্যাসিস্টভাবে ক্ষমতায় ছিল। মানুষের ভোটাধিকার হরণ ও গুম-খুন করে এবং গণহত্যা করে তারা ক্ষমতায় ছিল। কাজেই তারা কাকে জাতির পিতা বলল, তারা কোন দিবসকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করল-নতুন বাংলাদেশে সেটার ধারাবাহিকতা থাকবে না।’
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করতে চাচ্ছি। ফলে ইতিহাসের প্রতি আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে হবে। আপনারা যদি আওয়ামী লীগের করা সবকিছু মনে করেন জাতীয় জাতীয়-এমন প্রশ্ন রেখে সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, ভোটবিহীন সরকারেরই কোনো বৈধতা নেই। সেসময়ে অনেক কিছু করা হয়েছে। সব পুনর্গঠন ও পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মনে করে কি না এই সরকার-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই না।
তাহলে আমাদের কোনো জাতির পিতা থাকবে না, প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এই ভূখণ্ডের লড়াইয়ের ইতিহাসে বহু মানুষের অবদান রয়েছে। আমাদের ইতিহাস কিন্তু কেবল বায়ান্নতেই শুরু হয়নি। আমাদের ব্রিটিশবিরোধী লড়াই আছে, সাতচল্লিশ ও একাত্তরের লড়াই আছে, নব্বই ও চব্বিশ আছে। আমাদের অনেক ফাউন্ডিং ফাদারস রয়েছেন। তাদের লড়াইয়ের ফলে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, আমাদের ইতিহাসে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাসেম, যগেন মণ্ডল, মাওলানা ভাসানী-এমন অনেক মানুষের লড়াই আছে। আমরা তো মনে করি, এখানে একজন জাতির পিতা না, বরং অনেক ফাউন্ডিং ফাদারস (জাতির পিতা) রয়েছেন। যাদের অবদানের ফলে আমরা এই স্বাধীন ভূখণ্ড, স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। সুতরাং জাতির পিতা হিসাবে আমরা একটা দলের বা একজন ব্যক্তিকে সীমাবদ্ধ করতে চাই না। তিনি বলেন, ইতিহাসের বহুমুখিতা আছে। যেটিকে আওয়ামী লীগ এতদিন অস্বীকার করেছে। তারা মওলানা ভাসানীর অবদানকে অস্বীকার করেছে, অথচ আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। এখন সময় এসেছে সবার ভূমিকা স্মরণ করার।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় ৫ আগস্ট নতুন দিবস হিসাবে যুক্ত হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। ফ্যাসিস্ট সরকার এসব দিবস চাপিয়ে দিয়েছিল। জাতীয় দিবস বলতে এমন দিবস, যেটি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সবাই ধারণ করবে। যেমন: বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কিছু দিবসকে বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন হলে আরও এমন দিবস বাতিল করা হবে। পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে নতুন দিবসও যুক্ত হতে পারে।
৮ দিবস বাতিল : ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবসসহ আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি দিবসই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারকেন্দ্রিক। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বুধবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
যেসব দিবস বাতিল করা হয়েছে সেগুলো হলো-ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভাই শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস এবং ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস।