আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এ মাসের মধ্যেই ট্রাইব্যুনাল বিচারিক কার্যক্রম শুরু করবে। সোমবার সন্ধ্যায় আইন মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা চাইলে আগামীকালের (আজ) মধ্যে বিচার কাজ শুরু করতে পারেন। কখন বিচার শুরু করবেন সেটি গঠিত ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারাধীন বিষয়। আইন মন্ত্রণালয়ের কাজ ছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন, প্রসিকিউশন ও তদন্ত টিম নিয়োগ দেওয়া। ইতঃপূর্বে প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত টিম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিচারপতির অভাবে ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে ট্রাব্যুনালের চেয়ারম্যানসহ বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হলো। অর্থাৎ আইন মন্ত্রণালয়ের সব কাজ আজ সম্পন্ন হয়েছে।
৯ অক্টোবর সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আগামী দুই বছরের জন্য অতিরিক্ত বিচারক হিসাবে ২৩ জনকে নিয়োগ দেয় সরকার। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন গোলাম মর্তূজা মজুমদার। আইন উপদেষ্টা বলেন, ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগের আনুষ্ঠানিকতা আজ রাতের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের যে অবস্থা ছিল, সরকার সে আইনটিকে আরও সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। সরকার আইনে অনেক সংশোধন এনেছে। উদাহরণ দিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, আসামি পক্ষ যে কোনো দেশের আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন, আন্তর্জাতিক যে কোনো মানবাধিকার সংস্থাকে বিচার কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করাতে পারবেন। সাক্ষ্য আইনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল সাক্ষ্যের যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতার বিধান এনেছি। অপরাধের সংজ্ঞার ক্ষেত্রেও আমরা রোম স্ট্যাটিউট মোতাবেক করার চেষ্টা করেছি। এসব সংশোধনীর বিষয়ে অংশীজনদের মতামতও নিয়েছি। আবারও অংশীজনের কাছে পাঠাব। এসব সংশোধনী হয়তো এ মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু সংশোধনীর জন্য বিচার আটকে থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, এখন যে অবস্থা আছে, এ অবস্থাতেই বিচার শুরু হতে পারে। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে, জুলাই-আগস্টে গণহত্যায় যারা দায়ী ছিল বলে মনে করি, যারা প্রকাশ্যে গুলির হুমকি দিয়েছে, ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে, তাদের অনেকেই গ্রেফতার হননি, আত্মগোপনে আছেন। অনেকেই ভারতে পালিয়ে গেছেন। তবে পলাতকদের বিচারের বিধান এই আইনে রয়েছে। যারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হবেন এবং তারা যেসব দেশে পালিয়ে আছে তাদের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির আলোকে ফেরত আনার চেষ্টা করব। আর যেসব দেশের সঙ্গে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই আন্তর্জাতিক কাস্টমারি আইন অনুসারে তাদের ফেরত আনার উদ্যোগ নেবে সরকার। প্রধান অপরাধী হিসাবে শেখ হাসিনাকে ফেরত আনা হবে কি না-এমন প্রশ্নে আসিফ নজরুল বলেন, আইন অনুসারে অপরাধী সাব্যস্ত হলে তখন যে দেশে থাকেন সেই দেশের কাছ থেকে ফেরত আনার চেষ্টা করা হবে। তিনি এখন ভারতে আছেন, তখন তিনি যে দেশে থাকেন সেই দেশের কাছে আবেদন করা হবে।
অপরাধী সংগঠনের বিচার করা হবে কি না-এমন প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, বিগত সরকার সংবিধান সংশোধন করে অপরাধী সংগঠনের বিচারের বিধান করে গেছে। বিষয়টি আমরা আইন বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়েছি। তারা বলেছেন অপরাধী সংগঠনের বিচারের সুযোগ থাকা উচিত। আমরা আবার তাদের কাছে এ বিষয়ে মতামত চাইব। তারা যে সুপারিশ করবেন, সেই আলোকে অপরাধী সংগঠনের কী ধরনের শাস্তি হবে তা ঠিক করা হবে। ইতোমধ্যে প্রসিকিউশন টিম মামলার আলামত সংগ্রহ করেছে। তারা বেশ দক্ষতার সঙ্গে এই কাজগুলো সম্পন্ন করেছেন। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে এক হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, হাজার হাজার মানুষকে পঙ্গু করা হয়েছে। অনেক ব্যক্তিকে চিরতরে অন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন। এসব অপরাধের বিচারের সার্বিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এরপর যদি আন্তর্জাতিক আপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে কোনো সাহায্য চাওয়া হয় অর্থাৎ প্রসিকিউশন টিমে আরও লোক দরকার, তদন্ত টিমে আরও জনবল দরকার, আরও একটি আদালত গঠন করা দরকার-এমন বিষয়ে চাওয়া হলে আইন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তিনি আরও বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে দেশের সব আদালতে জিপি ও পিপি নিয়োগ সম্পন্ন হবে। সোমবার শুধু ঢাকা জেলার ৭৬২ জন জিপি ও পিপি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আসিফ নজরুল আরও বলেন, সাজা হয়ে যাওয়া মামলা কেন প্রত্যাহার হচ্ছে না-এমন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আসলে যেসব মামলায় সাজা হয়ে গেছে, সে মামলা মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক বা হয়রানিমূলক হলেও বিচারিক প্রক্রিয়ায় বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে হয়। মিথ্যা মামলা বা ফরমায়েশি রায় হলেও ইচ্ছেমতো প্রত্যাহার করা যাবে না। যার শাস্তি হয়েছে তার বা পরিবারের সদস্যদের আবেদন ছাড়া আইন মন্ত্রণালয় নিজস্ব উদ্যোগে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে যদি এমন হয় যে, মিথ্যা মামলায় সাজা হয়ে গেছে, যার সাজা হয়েছে তিনি সাজা স্থগিতের আবেদন করে উচ্চ আদালতে আপিল করতে আগ্রহী। আইন মন্ত্রণালয় এমন আবেদন পেলে ব্যবস্থা নেবে বলেও আশ্বাস দেন সরকারের এই উপদেষ্টা।
গুমের শিকার ব্যক্তিরা কীভাবে বিচার পাবেন-এমন প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনের পক্ষ রাষ্ট্র হয়েছি। গুমের অপরাধের বিচারে দেশে নির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। নতুন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে গুমের অপরাধ সংযোজন করেছি। গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশন চুক্তিতে স্বাক্ষর করায় আমরা এ ধরনের আইন করার এখতিয়ার পেয়েছি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতা বিরোধ আপরাধ হিসাবে গুমের বিচার করা হবে।