চট্টগ্রামে এবার এলপিজিবাহী দুই জাহাজে আগুন
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এলপিজি (তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস) বহনকারী দুটি ট্যাংকারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাতের এ দুর্ঘটনার পর দুই ট্যাংকারের ৩১ নাবিককে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ দুর্ঘটনা তদন্তে নৌপরিবহণ এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টার নির্দেশে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
শনিবার রাত ১টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয় তানজানিয়ার পতাকাবাহী মাদার ভেসেল (বড় আকারের সমুদ্রগামী জাহাজ) ক্যাপ্টেন নিকোলাস এবং বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠানের লাইটার জাহাজ সোফিয়া। এর মধ্যে নিকোলাসে লাগা আগুন জাহাজে থাকা সরঞ্জামের সাহায্যে নাবিকরা নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হন। তবে লাইটার জাহাজ সোফিয়ার আগুন রোববার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দর, কোস্টগার্ড ও সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ক্যাপ্টেন নিকোলাস নামের মাদার ভেসেল কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা ৪২ হাজার মেট্রিক টন এলপিজি গ্যাস নিয়ে এসে বহির্নোঙরে অবস্থান করছিল। শনিবার রাতে ওই জাহাজ থেকে ট্যাংকার সোফিয়াতে গ্যাস বোঝাই করা হচ্ছিল। এর একেবারে শেষ পর্যায়ে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামের মাধ্যমে নিকোলাসের নাবিকরা আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হন। তবে কাছাকাছি থাকা লাইটার জাহাজে আগুন জ্বলতে থাকে। খবর পেয়ে নৌবাহিনী, চট্টগ্রাম বন্দর ও কোস্টগার্ডের উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে গিয়ে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজ শুরু করে। আগুন লাগার পর জাহাজ দুটির বেশক’জন নাবিক পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এতে কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছেন। তবে তাদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, শনিবার রাত ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে তানজানিয়ার পতাকাবাহী এমটি ক্যাপ্টেন নিকোলাস থেকে জানানো হয়, জাহাজে আগুন লেগেছে এবং নাবিকরা তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। তাদের কাছাকাছি থাকা সোফিয়াতেও আগুন লেগেছে। বন্দরের পক্ষ থেকে বিষয়টি নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডকে জানানো হয়। বন্দরের টাগবোট কাণ্ডারি ৩ ও ৪ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডও ঘটনাস্থলে গিয়ে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। রাত ৩টার দিকে নিকোলাসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে, তখনো সোফিয়ায় আগুন জ্বলছিল। এক পর্যায়ে সোফিয়া ট্যাংকারের ১৮ জন নাবিক, দুজন মুরিংম্যান, তিনজন পাহারাদার এবং ক্যাপ্টেন নিকোলাস থেকে সাগরে ঝাঁপ দেওয়া কয়েকজন পাহারাদারসহ ৩১ জনকে উদ্ধার করা হয়। তাদের চট্টগ্রামে এনে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নগরীর একটি আবাসিক হোটেলে রাখা হয়েছে।
ক্যাপ্টেন নিকোলাসের বাংলাদেশি এজেন্ট সিওয়েভ মেরিন সার্ভিসেসের কর্ণধার সামিদুল হক যুগান্তরকে জানান, তাদের মাদার ভেসেল বিভিন্ন আমদানিকারকের ৪২ হাজার টন এলপিজি গ্যাস নিয়ে এসেছিল। এর মধ্যে মারিয়া নামের একটি লাইটার শনিবার তিন হাজার ২৫০ টন এলপিজি লোড করে মোংলায় গেছে। লাইটার সোফিয়ায় তিন হাজার ৩২৫ টন এলপিজি লোড করার পর একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে আগুন লাগে। মাদার ভেসেলে এখনো ২৭ হাজার টন এলপিজি রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের মোট ২৭ জন নাবিকের সবাই ইউক্রেন ও ফিলিপাইনের। তারা নিরাপদে আছেন। আমাদের জাহাজের আগুন নাবিকরা নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। তাই তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমরা আবারও গ্যাস খালাসের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
কোস্ট গার্ড সূত্র জানায়, একটি জাহাজ, একটি টাগবোট ও চারটি স্পিডবোট উদ্ধার ও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। যৌথভাবে কাজ করেছে কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। উদ্ধারকারীরা ৩১ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। ট্যাংকার সোফিয়ার আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরোপুরি নির্বাপিত হয়নি।
৯ সদস্যের কমিটি গঠন : নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রোববার জানিয়েছে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে দুই জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নৌপরিবহণ এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তার নির্দেশে ওই ঘটনায় নয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন নৌ উপদেষ্টা।
এতে বলা হয়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর এম ফজলার রহমানকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ডিজিএফআই, এনএসআই, নৌপরিবহণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিরা আছেন। কমিটিকে এমটি ক্যাপ্টেন নিকোলাস এবং বি. এলপিজি সোফিয়া জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদঘাটন, এলপিজি পরিবহণে জাহাজ এবং জাহাজসমূহের নাবিকদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, পরিবাহিত এলপিজির পরিবহণ ও উপযুক্ততা নিরূপণ, অগ্নিদুর্ঘটনার ফলে সংঘটিত ক্ষয়ক্ষতি ও দায়দায়িত্ব নিরূপণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।