Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

শেরপুর নেত্রকোনা ময়মনসিংহে বন্যার আরও অবনতি

নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এসব জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। বানভাসিদের মতে, ১৯৮৮ সালের পর এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি কেউ। বন্যা কবলিত পরিবারগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ঘরে পানি ওঠায় অনেকেরই চুলা জ্বলছে না। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দুর্গত এলাকার অনেকেই অভিযোগ করেন, তারা কোনো প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা পাননি। এদিকে ৩ দিনে বন্যার পানিতে ডুবে শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীতে ৬ জন এবং ময়মনসিংহের ফুলপুরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে ফসলে মাঠ, সবজি খেত ও মাছের খামার। এতে অনেক খামারি ও কৃষক নিঃস্ব হয়েছেন। শেরপুর ও নেত্রকোনায় প্লাবিত হয়েছে অনেক সড়ক ও রেলপথ। এসব এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। রংপুরের কাউনিয়ায় পানির স্রোতে ধসে গেছে সেতুর সংযোগ সড়ক। কুমিল্লার চান্দিনায় টানা বর্ষণে ১০ স্কুলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

শেরপুর ও নালিতাবাড়ী : ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীর উজানের পানি কিছুটা কমলেও ভাটি এলাকার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। শেরপুর সদর ও নকলার নিম্নাঞ্চলের অনেক এলাকা পানির নিচে। ৫টি উপজেলার কমপক্ষে শতাধিক গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়কসহ জেলার অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১০টি সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, এবারের বন্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। মাছের খামারিরা জানান, মাছ ভেসে যাওয়ায় তারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। নালিতাবাড়ী উপজেলার পশ্চিম কাপাশিয়া গ্রামের লায়লা বেগম বলেন, ৩ দিন ধরে ছেলেমেয়ে, নাতি নিয়ে ঘরে বন্দি হয়ে আছি। চিড়া-মুড়ি খেয়ে দিন কাটছে। একই গ্রামের একটি মৎস খামারের কর্মচারী বলেন, আমার মালিকের সব পুকুর পানিতে ডুবে গেছে। আমার ঘরেও পানি। ৩ দিন ধরে দিনে দুই বেলা খাচ্ছি।

শুক্রবার রাতে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বের হয়ে বন্যার পানিতে নিখোঁজ হওয়া নালিতাবাড়ী উপজেলার অভয়নগর গ্রামের বাছির উদ্দিনের দুই ছেলে আবু হাতেম (৩০) ও আলমগীরের (১৭) লাশ শনিবার ওই এলাকার একটি ধান খেত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে ৬ জনের মৃত্যু হলো। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বাতকুচি গ্রামের আব্দুল হাকিমের স্ত্রী জহুরা খাতুন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, জেলায় ৭ হাজার ৬৯৬ হেক্টর জমির রোপা আমন সম্পূর্ণ এবং ৯ হাজার ৬৯৩ হেক্টর আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া ২০৮ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণ এবং ৪১৩ হেক্টর আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যায় ৬৫ হাজার ৪০০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। বন্যার্তদের সহায়তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। ১৭টি মেডিকেল টিম বানভাসি মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করছে।

নেত্রকোনা, দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা : দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলার অন্তত ১৩টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামে পানি উঠেছে। প্রায় সাড়ে তিনশ হেক্টর জমির আমন ধান তলিয়ে গেছে। ময়মনসিংহ-জারিয়া রেলপথের রেললাইন বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। দুর্গাপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, সোমেশ্বরী ও পার্শ্ববর্তী নেতাই নদীর পানিতে উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের জাগিরপাড়া, বন্দউষান, মুন্সিপাড়া, আটলা, পূর্বনন্দেরছটি, হাতিমারাকান্দা, ভাদুয়া, নাওধারা, দক্ষিণ জাগিরপাড়া, অপরদিকে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বিলকাঁকড়াকান্দা, দৌলতপুর, পলাশগড়া, বংশীপাড়া, গাইমারা, কাকৈরগড়া ইউনিয়নের, গোদারিয়া, বিলাশপুর, লক্ষ্মীপুর, রামবাড়ি ও বাকলজোড়া ইউনিয়নের প্রায় ৪৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। এদিকে ভোগাই-কংস নদের পানি জারিয়া এলাকা দিয়ে কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীতে প্রবাহিত হয়। এতে ওই এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। চানপুর-গোবিন্দপুর, কলমাকান্দা-বওরাকোনা, কলমাকান্দা-বিষমপুর, কলমাকান্দা-মনতলাসহ বেশকিছু সড়ক পানির নিচে। উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় জানায়, কলমাকান্দায় শতাধিক স্কুল পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বধলা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলার জন্য নগদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৬০ টন চাল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

ধোবাউড়া ও ফুলপুর (ময়মনসিংহ) : ধোবাউড়ার বেশিরভাগ এলাকাই এখন পানিবন্দি। স্থানীয়রা জানান, শনিবার রাতভর বৃষ্টি হওয়ায় পোড়াকান্দুলিয়া, গোয়াতলা, বাঘবেড়, ধোবাউড়া সদর ইউনিয়নে বন্যার অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ২০ হাজার পরিবার। ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় পোড়াকান্দুলিয়া ও দুধনই বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন সাধারণ মানুষ। খাবার ও নিরাপদ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, আমরা ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছি, জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ পেলে পর্যায়ক্রমে তা বিতরণ করা হবে। ফুলপুরেও বন্যার অবনতি হয়েছে। বহু ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ছনধরা ইউনিয়নের চিকনা গ্রাম থেকে শাশুড়িকে উদ্ধার করতে গিয়ে উজ্জ্বল মিয়া (৩৫) নামে এক যুবক পানির স্রোতে ভেসে গেছেন। তিনি পার্শ^বর্তী নকলা উপজেলার জালালপুর গ্রামের আমজত আলীর ছেলে।

কাউনিয়া ও রৌমারী (রংপুর) : কাউনিয়ায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। পানির তোড়ে বালাপাড়া ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকায় ১০ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের পাকা সেতুর সংযোগ সড়কের দুই পাশ ধসে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। এদিকে রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর, যাদুরচর ও শৌলমারী ইউনিয়নের নওদাপাড়া, চান্দারচর, রতনপুর, বেহুলারচর, মোল্লারচরের নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২০টি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ।

চান্দিনা (কুমিল্লা) : টানা বৃষ্টিতে চান্দিনা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চান্দিনা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, চান্দিনা আল-আমিন ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসাসহ ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম