বাড়ছে উৎপাদন ব্যয় ঋণের উচ্চ সুদে বিপর্যস্ত শিল্প
বিপদে আছে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা : বিটিএমএ সভাপতি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নীতি সুদের হার বাড়িয়েই চলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর প্রভাবে ক্রমাগতভাবে বাড়ছে ঋণের সুদহার। এতে শিল্প খাত চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। একদিকে বাড়ছে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়, অন্যদিকে কমছে বহির্বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগী সক্ষমতা। এ অবস্থা চলতে থাকলে মূল্যস্ফীতি হয়তো কমে আসবে, কিন্তু কর্মসংস্থানহীন হয়ে পড়বে গোটা দেশ। তাই দেশের স্বার্থে সুদহারে স্থিতিশীলতা আনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। রোববার যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেছেন তারা।
বাংলাদেশ নিটপণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদ বাড়ানোর পদ্ধতিকে পুরোপুরি কার্যকর কৌশল বলে আমি মনে করি না। ঋণের সুদহার বাড়লে ব্যবসায়ীরা কম ঋণ নেবে। তখন উৎপাদন কম হবে। উৎপাদন কম হলে এবং পণ্যের চাহিদা থাকলে স্বভাবতই সেই পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, সুদের হার বাড়লে ঋণখেলাপির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, আগামী মার্চ মাস থেকে এক মাস ঋণের কিস্তি না দিলে সেও খেলাপি হবেন। এই সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের গলা টিপে হত্যা করার শামিল। এখনই অনেক ব্যবসায়ী উচ্চ সুদের কারণে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না। সুদহারে লাগাম টানা না গেলে তখন কী হবে তা এখন চিন্তা করা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ এখন ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কেউ বলতে পারছে না। একদিকে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, অন্যদিকে শ্রম অসন্তোষের কারণে শিল্পকারখানা বন্ধ রয়েছে। কারখানা না চললে ঋণের সুদ পরিশোধ করবে কীভাবে? ব্যবসায়ীরা কত দিক সামলাবে। তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের দুর্বৃত্ত, অর্থ পাচারকারীদের বোঝা দেশের সব প্রকৃত ব্যবসায়ীকে বহন করতে হচ্ছে। সরকারের ছত্রছায়ায় অর্থ পাচার করে ব্যাংকগুলোকে খালি করে ফেলা হয়েছে। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বসিয়ে বসিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এখন দৈনন্দিন কার্যক্রম চালাতে ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। আর বিপদে আছে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা।
শওকত আজিজ বলেন, ঋণের সুদের হার একটি সময় পর্যন্ত এডহক ভিত্তিতে স্থির রাখা যায় কিনা সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক চিন্তা করতে পারে। এতে ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও উপকৃত হতে পারে। পাশাপাশি যেসব দুষ্কৃতকারী বিগত সরকারের মদদে বিদেশে টাকা পাচার করেছে, তাদের সেই অর্থ দেশে ফেরাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ঋণের উচ্চ সুদ ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্তরায়। ১৪-১৬ শতাংশ সুদ নিয়ে টেকসই ব্যবসা সম্ভব নয়। তাছাড়া অনেক বিনিয়োগকারী এই হারে সুদ নিয়ে ব্যবসা করা উপযুক্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করছেন না। অতিরিক্ত সুদহার ঋণপ্রবাহ কমিয়ে দেয়। যা দেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ শূন্যতার সৃষ্টি করতে পারে। তাই দীর্ঘ সময় যাবৎ ঋণের উচ্চ সুদ রাখা সঠিক হবে না। প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত বছরের জুলাই থেকে সুদের হার বাড়তে থাকে। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের ওপর ৯ শতাংশ সুদের বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে ছয় মাসের মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল (স্মার্ট) পদ্ধতি চালু করে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার ধীরে ধীরে বাজারভিত্তিক করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ নীতি চালু করা হয়। পরে সুদহার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করতে গত মে মাসে ‘স্মার্ট’ নীতি বাতিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ, ২০০৩ সালের শেষে এ পার্থক্য ছিল ছয় দশমিক ১১ শতাংশ। কোনো কোনো ব্যাংক তারল্য সংকট মেটাতে ১১-১২ শতাংশ হারে আমানত করছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। সেই অর্থ ১৮-১৯ শতাংশ সুদে বিরতণ করা হচ্ছে।