Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সংলাপ শেষে মির্জা ফখরুল

দ্রুত নির্বাচন কমিশন গঠন করুন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দ্রুত নির্বাচন কমিশন গঠন করুন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে তারা দ্রুত নির্বাচনের জন্য কমিশন গঠনের কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন হচ্ছে তাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার। তারা মনে করেন বিএনপির দাবিগুলো জনগণের দাবি। বিএনপির দাবিগুলো তাদেরই (অন্তর্বর্তী সরকার) দাবি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলেরও প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যেও দু-একজন আছেন, যারা অন্তর্বর্তী সরকার ও গণঅভ্যুত্থান-বিপ্লবের যে মূল স্পিরিট সেটাকে ব্যাহত করছে, তাদের সরানোর কথা বলেছি। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার মূল হোতা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার মূলনায়ক বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে।’

শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নেন। বেলা আড়াইটা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা এ সংলাপ হয়। প্রধান আলোচনা ছিল নির্বাচনসংক্রান্ত এবং নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার ও কমিশন নিয়ে। সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি প্রতিনিধিদলে থাকা নেতাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। এ সময় সংলাপে উপস্থিত অন্য উপদেষ্টারা তা নোট করে নেন। বিএনপি বিষয়টি ইতিবাচক হিসাবে দেখছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এটি বিএনপির সঙ্গে তৃতীয় দফা সংলাপ। 

মির্জা ফখরুল জানান, অত্যন্ত ভালো পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার প্রধান বিষয় নির্বাচন সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমরা নির্বাচন বিষয়ে কথা বলেছি। নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে বলেছি। আমরা বলেছি, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কবে হবে সে বিষয়ে রোডম্যাপ দিতে বলেছি।

তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত অধ্যাদেশ দিয়ে বাতিল করতে বলেছি। বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যেন কখনো নির্বাচন সংস্কার কমিটিতে না যায়, সেটা আমরা বলেছি। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় ভুয়া ভোটের মাধ্যমে হওয়া সব ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করতে বলেছি। সেই সঙ্গে ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালে নির্বাচনের সময় যারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কমিশনার ছিলেন তাদেরসহ ভুয়া ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন করার অভিযোগে আইনের আওতায় আনার কথা বলেছি। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রায় দুই মাস হতে চলেছে। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তাদের দোসর হয়ে লুটপাট, অনাচার, অত্যাচার, গুম-খুন, গণহত্যায় সহায়তা করেছেন, তাদের বেশির ভাগই এখনো বহাল তবিয়তে স্ব স্ব জায়গায় আছেন। অবিলম্বে তাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের আনার কথা আমরা বলেছি।

জেলা প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া জানতে চেয়েছে মির্জা ফখরুল বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের নিয়োগ আমরা বাতিল করতে বলেছি। সেই সঙ্গে যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা করতে বলেছি। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে যেসব সরকারি কর্মকর্তা পদোন্নতিবঞ্চিত রয়েছেন, তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিশ্চিত করার কথা বলেছি। 

বিচার বিভাগের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, হাইকোর্ট বিভাগে এখন পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন হয়নি। অথচ হাইকোর্ট বিভাগের বেশির ভাগ নিয়োগই ছিল দলীয় ভিত্তিতে। সেখানে এখনো প্রায় ৩০ জন বিচারক বহাল তবিয়তে কাজ করছেন। তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আমরা বলেছি। কিছু দলকানা বিচারক আছেন, তাদের অপসারণের কথা বলেছি। অতিদ্রুত আমরা পিপি ও জিপি নতুন নিয়োগ করার কথা বলেছি। 

তিনি বলেন, আমরা লক্ষ করছি, যাদের দুর্নীতি-হত্যার মতো সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটা আমরা দেখার জন্য বলেছি।

তিনি আরও বলেন, ২০০৭ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী শাসনামলে দায়ের করা সব মিথ্যা, গায়েবি, ভুয়া, সাজানো, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কিছু আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা, সাবেক মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। কীভাবে পালাচ্ছেন, কার সহযোগিতায় পালাচ্ছেন, সে বিষয়গুলো আমরা দেখার জন্য বলেছি।

আরেকটি বিষয় আমরা জোর দিয়ে বলেছি-ফ্যাসিবাদী প্রধান শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। তাকে কেন্দ্র করে, তার মাধ্যমে যেসব অপপ্রচার চলছে, সেটা হচ্ছে কারণ তিনি ভারতে আছেন। এই বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য এবং তাকে ওই অবস্থান থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি। তারা ভারত সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন। 

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যেভাবে অস্থিরতার চেষ্টা করা হচ্ছে তাও বলেছি। এ ব্যাপারটা আরও গভীরভাবে দেখে সেখানে কারা এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা বলেছি।

তিনি বলেন, গুম-খুনের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের মধ্যে একমাত্র জিয়াউল হাসান ছাড়া আর কাউকেই ধরা হয়নি। অবিলম্বে গুম-খুনের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলকে বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা যারা ওই অপরাধের সঙ্গে জড়িত তারা সহযোগিতা করছেন না তাও জানিয়েছেন বলে জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, আপনারা দেখছেন, পূজাকে কেন্দ্র করে সনাতনী ধর্মের কিছু মানুষ, সবাই না-অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জনগণকে উসকে দিচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে যে, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার হচ্ছে, নির্যাতন হচ্ছে। যেটা সর্বৈব মিথ্যা। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে-এটা বলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র। এই বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে বলেছি অন্তর্বর্তী সরকারকে।

বিএনপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। সরকারের দিক থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন উপদেষ্টা হাসান আরিফ, আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম