Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্যান্য দল

সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনও জরুরি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনও জরুরি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বিভিন্ন প্রস্তাবসহ নানা পরামর্শ দিয়েছেন। তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও বেশি যোগাযোগ ও নিয়মিত কথা বলার পরামর্শও দেন। নেতারা বলেন, এ দেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সংস্কার ও নতুন নির্বাচন একে অপরের পরিপূরক। গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য যা জরুরি। 

প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদের সম্মান সফল নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। সরকার গঠিত ৬টি সংস্কার কমিশনের সঙ্গে আরও ৯টি সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব বিবেচনার জন্য পেশ করেছে ইসলামী আন্দোলন। আর নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য প্রধান অংশীজন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন বলে লিখিতভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে এবি পার্টি। এছাড়া হেফাজতে ইসলাম ও গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশের নেতারাও তাদের নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরেন। শনিবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পৃথকভাবে এসব দলের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদ। সংলাপ শেষে সংশ্লিষ্ট দলের নেতারা এসব কথা বলেন। প্রতিটি বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন-উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট হাসান আরিফ, আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।

গণতন্ত্র মঞ্চ : সংলাপ শেষে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, সংস্কারের জন্য প্রয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করব। প্রশাসনের কিছু দুর্বলতা দেখছি, ব্যর্থতা দেখছি, সীমাবদ্ধতা দেখছি। সিভিল পুলিশসহ প্রশাসনে এমন কিছু দেখছি যা উদ্বেগ প্রকাশ করার মতো। এ বিষয়গুলো তাদের বলেছি। 

প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদের সম্মান সফল নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের যদি মনে হয় আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) লিপ্সা আছে, অর্থের ধান্ধা, দুর্নীতি বেড়ে যায় তবে তা আপনাদের ওপর বর্তাবে। আপনারা বলবেন যে, জানিনি, বুঝিনি সেটা হবে না। প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। আমরা সমাজের একেবারে নিুস্তর পর্যন্ত কাজ করি। আমরা মনে করি, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই পুরো সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার কথা বলেছি। সাম্প্রদায়িক হামলা, মাজারে হামলা, নারীর ওপর হামলা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলোকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে প্রচারণা চলছে, সেক্ষেত্রে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সামগ্রিক ভূমিকা নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। সামনে কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাব। আমরা মনে করি গণতান্ত্রিক নির্বাচন, দেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, প্রতিষ্ঠান, আইন সংস্কার-এগুলো গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সংস্কার ছাড়া নির্বাচনকে প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করানোর কিছুই নেই। এই দেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সংস্কার ও নতুন নির্বাচন একে-অপরের পরিপূরক। গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য জরুরি।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সংস্কার কমিশন রোববার (আজ) থেকে কাজ শুরু করবে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে। সংস্কার কমিশন কাজ শেষের পরে কোন কোন কাজগুলো এই আমলে তারা বাস্তবায়ন করবেন তা নিয়ে ঐকমত্যের জায়গা আছে। আর কোনগুলো পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ করবে তাও আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করব। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ করেন গণতন্ত্র মঞ্চের ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল। তাদের নেতৃত্ব দেন মঞ্চের সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। 

প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা আকবর খান, আবুল হাসান রুবেল, আবু ইউসুফ সেলিম ও ইমরান ইমন।

ইসলামী আন্দোলন : প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে সরকার গঠিত ৬টি সংস্কার কমিশনের সঙ্গে আরও ৯টি সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব বিবেচনার জন্য পেশ করেছে ইসলামী আন্দোলন। সংলাপ শেষে দলটির আমির ও চরমোনাই পির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, তাদের সঙ্গে আমরা নির্বাচন সংস্কারের কথা বলেছি। আমরা চাই প্রতিনিধিত্ব হারে আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট হবে। সবার ভোটের অধিকার থাকবে। সরকার হবে জাতীয় সরকার। তারা আমাদের এ প্রস্তাবকে ভালোভাবে নিয়েছেন। তারা বলেছেন এই প্রস্তাব নিয়ে তারা আলোচনা করবেন। 

স্বৈরাচার যারা নাকি খুনি ফ্যাসিস্ট তারা যেন নির্বাচন করার সুযোগ না পান সেটা আমরা উপদেষ্টাদের বলেছি। প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন-দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম ও সিনিয়র সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ফজলে বারী মাসউদ।

বাম গণতান্ত্রিক জোট : এই জোটের পক্ষ থেকে একটি লিখিত বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু কোথাও না কোথাও থেকে এ কাজ তো শুরু করতে হবে। সংস্কারের লক্ষ্যে আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) ৬টি কমিশন গঠন করেছেন, এজন্য ধন্যবাদ। এই কমিশনগুলোর কার্যপরিধি এবং রোডম্যাপ সম্পর্কে জানা থাকলে দেশবাসী আশ্বস্ত হবে। কমিশনের প্রধানদের নিয়ে, বিশেষ করে সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধান নিয়ে বিতর্ক এবং সন্দেহ অনভিপ্রেত। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংবিধান যতটুকু সংশোধন দরকার, ততটুকু সংশোধন করার উদ্যোগটাই যথার্থ হবে বলে আমরা মনে করি। 

আরও বলা হয়, একটি নির্বাচিত সরকার ছাড়া সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাবে না। তাই নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার জন্য প্রধান অংশীজন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন। আশা করি একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার গড়ে তোলার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। জনগণ চায় একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, যা নিশ্চিত করবে রাজনীতি, প্রশাসনসহ সর্বস্তরের জবাবদিহিতা। প্রতিনিধিদলে ছিলেন-বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বাসদের (মার্কসবাদী) মাসুদ রানা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মো. শাহ আলম ও রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের খালেকুজ্জামান ও রাজেকুজ্জামান রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির মোশরেফা মিশু ও সমাজতান্ত্রিক পার্টির আব্দুল আলী। 

এবি পার্টি : প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে ৬ দফা পর্যবেক্ষণ ও ১১ দফা প্রস্তাব পেশ করেছে এবি পার্টি। দলটি দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন। পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও সহকারী সদস্য সচিব ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি। 

এছাড়া হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা। ১৪ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান। প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন-মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, মাওলানা আবদুল বাসেত আজাদ, মাওলানা সরোয়ার কামাল আজিজী, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, ড. আহমদ আবদুল কাদের, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। 

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ করেছে নুরুল হক নুর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল। এ প্রতিনিধিদলে ছিলেন নুরুল হক নুর, রাশেদ খান, হাসান আল মামুন, ফাতেমা তাসনিম ও নূরে এরশাদ সিদ্দিকী। গণঅধিকার পরিষদের আরেক অংশের সঙ্গেও সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ অংশের প্রতিনিধিদলে ছিলেন-ড. রেজা কিবরিয়া, কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, ফারুক হাসান, ব্যারিস্টার জিসান মহসীন, তারেক রহমান, সাদ্দাম হোসেন ও অ্যাডভোকেট লিরিন আকতার।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম