Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

জনপ্রশাসনে হট্টগোল

১৭ উপসচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে

Icon

আমিরুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

১৭ উপসচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে

ডিসি নিয়োগকে কেন্দ্র করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হট্টগোলের ঘটনায় ১৭ উপসচিবের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শাস্তির সুপারিশভুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৪ ব্যাচের সাত, ২৫ ব্যাচের সাত এবং ২৭ ব্যাচের তিন কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন নারী উপসচিবও আছেন। এ ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এমএ আকমল হোসেন আজাদের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি আটজনকে গুরুদণ্ড, চারজনকে লঘুদণ্ড ও পাঁচজনকে তিরস্কারের শাস্তির সুপারিশ করে। তবে অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন এমন এক কর্মকর্তাকেও শাস্তির সুপারিশ করেছে কমিটি। নির্দোষ কর্মকর্তা প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে আবেদন করেছেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়ন সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমার হাতে এখন অনেক কাজ, এ বিষয়ে পরে কথা বলব।

তদন্ত কমিটির প্রধান সিনিয়র সচিব এমএ আকমল হোসেন আজাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু দেশের বাইরে থাকায় কথা বলতে পারেননি।

ডিসি নিয়োগকে কেন্দ্র করে ১০ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় তলায় যুগ্মসচিব (মাঠপ্রশাসন) কেএম আলী আজমের রুমে হাতাহাতিতে জড়ান বেশ কয়েকজন উপসচিব। কমিটি যেসব উপসচিবকে গুরুদণ্ড দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তারা হলেন-নুরজাহান খানম, মো. নুরুল করিম ভূঁইয়া, মো. জসিম উদ্দিন, রেবেকা খান, মো. সাইফুল হাসান, মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন, নুরুল হাফিজ এবং মোতাকাব্বীর আহমেদ।

যে চারজন উপসচিবকে লঘুদণ্ড দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তারা হলেন-হাসান হাবীব, মো. আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল মালেক, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে যে পাঁচজন কর্মকর্তাকে তিরস্কার সূচক শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে তারা হলেন- মো. সগীর হোসেন, মো. মুনিরুজ্জামান, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. হেমায়েত উদ্দীন ও মো. তোফায়েল হোসেন।

এদিকে ১৭ উপসচিবের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ নিয়ে দুধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কেউ বলছেন কমিটির কাজ ছিল কি ঘটেছে এবং কেন ঘটেছে তা উদ্ঘাটন করে প্রতিবেদন দেওয়া। বাস্তবে কি ঘটেছে তা বিশ্লেষণ করে কমিটির বিবেচনায় অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিষয়ে শৃঙ্খলা অনুবিভাগকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করতে পারত। কিন্তু কমিটি প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে। এ ধরনের কাজ কমিটির এখতিয়ারবহির্ভূত। অপরপক্ষ বলছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ ঠিক আছে।

মন্ত্রণালয়ের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কমিটি সুপারিশ পেশ করলে সেই আলোকে ব্যবস্থা নেবে শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগ। শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগ থেকে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি অথবা মুক্তির সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে তা বাস্তবায়ন করবে জনপ্রশাসন সচিব। কিন্তু এক্ষেত্রে নিয়ম অনুসারে কাজ হয়নি। এখানে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ও শৃঙ্খলা আপিল বিধিমালার পরিপন্থি সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কমিটি একজন নির্দোষ উপসচিবকে গুরুদণ্ড দেওয়ার সুপারিশ করেছে। সাইফুল হাসান নামের ওই কর্মকর্তার আইডি নং-১৫০৭১। তিনি আগারগাঁও আইসিটি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। ঘটনার আগে-পরে তিনি সচিবালয়ে আসেননি। পরে বিষয়টি জেনে তিনি বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন। যদিও তিনি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। তার কর্মস্থল আইসিটি বিভাগে হওয়ায় তিনি ওই সময় সচিবালয়ে আসেননি। এমন কি তদন্ত কমিটিও তাকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ডাকেনি। বরং সাইফুল ইসলাম নামে বিসিএস ২৪ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের সাইফুল ইসলামকে (১৫৮০৬) তদন্ত কমিটি ডেকেছে এবং তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। অথচ শাস্তি দেওয়া হয়েছে সাইফুল হাসানকে।

ওই ঘটনার পর যুগ্ম সচিব আলী আজমকে সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হিসাবে বদলি করা হয়েছে। আরেক যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দিনকে বিপিএটিসিতে বদলি করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দাবি, ঘটনার সঙ্গে জড়িত যুগ্ম সচিবদের বদলি করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পক্ষান্তরে উপসচিবদের বিরুদ্ধে তিন ধরনের শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এটা এক ধরনের ন্যয়পরায়ণতার পরিপন্থি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর জনপ্রশাসনে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মাসখানেক পর যখন পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছিল ঠিক তখনি ডিসি পদায়নকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে হট্টগোল এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তখন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম