Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

নজরুল সালমান মুর্শেদী নাসের মেজবাহ আদনান রিমান্ডে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নজরুল সালমান মুর্শেদী নাসের মেজবাহ আদনান রিমান্ডে

ফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ইমন হোসেন গাজী নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। পৃথক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ৭ দিন, খুলনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদীর ২ দিন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আব্দুল নাসের ৪ দিন, সাবেক যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দীন আহমেদের ৩ দিন ও বসুন্ধরা গ্রুপের কো-অর্ডিনেটর নাসির জামান আদনানের ২ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার ঢাকার কয়েকটি আদালত এ আদেশ দেন। এদিকে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ-সদস্য জান্নাত আরা হেনরী ও স্বামী সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামীম তালুকদার লাবুর ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন সিরাজগঞ্জের আদালত।

ইমন হত্যা মামলায় এদিন নজরুল ইসলাম মজুমদারকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমান তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

শুনানির শুরুতে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে আসামিকে রিমান্ডে চাওয়ার কারণ জানতে চান বিচারক। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা মামলার অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করতে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে বলে জানান। পরে বিচারক তদন্ত কর্মকর্তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। বিচারক বলেন, গ্রেফতার কখন করেছেন? এর মাঝে জিজ্ঞাসাবাদ হয়নি? উনার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে?

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সরকারের মন্ত্রী ও আমলাদের সঙ্গে উনার পরিচয় আছে। বিচারক বলেন, পরিচয় থাকলেই তাকে রিমান্ডে পাঠাতে হবে? উত্তরে তদন্ত কর্মকর্তা আসামির সাবেক আওয়ামী সরকারের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ও সরকারের অর্থদাতা হিসাবে পরিচয় দেন।

একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষে সহযোগিতাকারী বিএনপিপন্থি আইনজীবী কথা বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছেই উত্তর চান বিচারক। এ সময় কথা বলতে চাওয়া আইনজীবীর নাম জানতে চাইলে একপর্যায়ে আইনজীবীরা ক্ষিপ্ত হয়ে বিচারকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর বিএনপিপন্থি সিনিয়র অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী সবাইকে শান্ত করেন।

এ সময় বিচারক আইনজীবীদের বলেন, আপনাদের আচরণে আমি নিজেই লজ্জিত। আপনারা আমাকে সহযোগিতা না করলে কীভাবে আদালত চলবে। বিচারক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুককে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি এর আগেও আমার কোর্টে শুনানি করেছেন। আপনি জানেন আমি সবাইকে প্রশ্ন করি। এর ফলে আদেশ লিখতে সুবিধা হয়। আপনারা আমাকে পছন্দ না করলে বলতে পারেন ইউ মে লিভ। অথবা আপনাদের যদি ওইরকম শক্তি-সামর্থ্য থাকে তাহলে আমাদের অন্য কোথাও পাঠাবেন। আপনারা আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবেন-এজন্য তো আসিনি। আমরা ঢাকা কোর্টে থাকতে আসিনি।

এরপর ওমর ফারুক ফারুকী বিচারককে বলেন, এখানে যারা আইনজীবী হিসাবে সহযোগিতা করতে এসেছেন এরা সবাই ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নির্যাতিত। এ সময় ঢাকা বারের সিনিয়র এজিএসকে দেখিয়ে বলেন, উনি তিনবার আওয়ামী লীগের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন। কাজেই সবার চাপা ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। এরপর তিনি আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে শুনানি করেন। আদালত আসামিপক্ষের বক্তব্য শোনেন। সেখানেও আসামিপক্ষের আইনজীবীকে কিছু প্রশ্ন করেন বিচারক। এরপর আদালত আসামির ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। আদেশের পর আইনজীবীরা আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

ইমন হত্যায় তার ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ২৮ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় ৮৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, চিটাগাং রোডে ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ইমন হোসেন গাজী।

সালমান এফ রহমান ফের ৭ দিনের রিমান্ডে : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে ঢাকার পৃথক দুই মামলায় সালমান এফ রহমানের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এদিন তাকে কারাগার থেকে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহারের পৃথক দুই হত্যা মামলায় ৭ দিন করে ১৪ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপরদিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম সাইফুল ইসলাম তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে নবাবগঞ্জের মামলায় ৪ ও দোহারের মামলায় ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আব্দুস সালাম মুর্শেদীর ২ দিনের রিমান্ড : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় পোশাক শ্রমিক রুবেল হত্যার অভিযোগে রাজধানীর আদাবর থানার মামলায় গ্রেফতার আব্দুস সালাম মুর্শেদীর ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আক্তারুজ্জামানের আদালত। এর আগে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে মুর্শেদীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে তাকে আদাবর থানায় হস্তান্তর করা হয়। ২২ আগস্ট পোশাক শ্রমিক রুবেলের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে আদাবর থানায় মামলাটি করেন।

হেনরী ও তার স্বামী লাবুর ৭ দিনের রিমান্ড : সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জান্নাত আরা হেনরী ও শামীম তালুকদার লাবুকে মৌলভীবাজারের বর্ষীজোড়া গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বুধবার তাদের আদালতে আনা হলে শাস্তি চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন ছাত্র প্রতিনিধি, নিহতের স্বজন ও সাধারণ জনতা।

সিরাজগঞ্জ জেলা যুবদলের সহসভাপতি সোহানুর রহমান রঞ্জু হত্যা মামলায় আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। ৩২ মিনিট শুনানি শেষে সিরাজগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ (সদর আমলী আদালত) এর বিচারক মো. রাসেল মাহমুদ তাদের দুজনের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আইনজীবী অ্যাড. রফিক সরকার ও অ্যাড. মাসুদুর রহমান জানান, আসামিদের নামে ৩টি হত্যা ও একটি অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তারা এজাহারনামীয় আসামি।

৪ আগস্ট জেলা যুবদলের সহসভাপতি সোহানুর রহমান রঞ্জু, ছাত্রদলের সদস্য মো. সুমন ও যুবদলের কর্মী আব্দুল লতিফ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ তিন হত্যায় রঞ্জুর স্ত্রী পৌরসভার মাছুমপুরের মৌসুমী খাতুন, সুমনের বাবা গয়লা মহল্লার গঞ্জের আলী এবং একই এলাকার আব্দুল লতিফের বোন সালেহা খাতুন হেনরী ও লাবুসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আসামি করে তিনটি মামলা করেন।

হত্যা মামলায় সাবেক সচিব নাসের-মেজবাহ রিমান্ডে : বিএনপি কর্মী মকবুল হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব ও উপদেষ্টা কামাল নাসের চৌধুরীর ৪ দিন ও যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দিন আহমেদের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিন পল্টন থানার পৃথক দুই হত্যা মামলায় তাদের ১০ দিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

চরফ্যাশন দক্ষিণ (ভোলা) প্রতিনিধি জানান, মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগড় দাশকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। মঙ্গলবার রাতে রাজধানী থেকে গ্রেফতার করে ডিবি। তিনি ভোলা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

বসুন্ধরা গ্রুপের নাসিম আদনান ২ দিনের রিমান্ডে : ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর গুলশানে বাহাদুর হোসেন মনির (১৭) নামের এক কিশোর নিহতের ঘটনায় করা মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের কো-অর্ডিনেটর নাসিম আদনান জামানের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এদিন মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ছানাউল্ল্যাহ তার জামিন নামঞ্জুর করে ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে বুধবারই তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯ জুলাই শাহজাদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আন্দোলন চলাকালে মো. বাহাদুর হোসেন মনির রাস্তা পার হয়ে বাসায় যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ৩০ সেপ্টেম্বর মনিরের বাবা আবু জাফর বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম