সেনাবাহিনীর আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার
৫৩ ঘণ্টা পর সড়ক থেকে সরলেন পোশাক শ্রমিকরা
যুগান্তর প্রতিবেদন (ঢাকা উত্তর) ও আশুলিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করা বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা সেনাবাহিনীর আশ্বাসে ৫৩ ঘণ্টা পর অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন। ফলে বুধবার দুপুর থেকে যানবাহন চলাচল আবার শুরু হয়েছে এবং ঢাকা-টাঙ্গাইলসহ উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ সচল হয়েছে। সেনাবাহিনীর হাতে বার্ডস গ্রুপের চেয়ারম্যান আটক হয়েছেন এবং তাকে এনে শ্রমিকদের মুখোমুখি করে বকেয়া বেতন, সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে এমন খবরে কারখানাটির পোশাক শ্রমিকরা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের অবরোধ প্রত্যাহার করেন। শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে গিয়ে কারখানার প্রধান ফটকে অবস্থান নেন। এদিকে চাকরির দাবিতে গাজীপুরে বিক্ষোভ করেছে কয়েকশ পোশাক শ্রমিক। শ্রমিকরা ভোগড়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে দশটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। কালিয়াকৈরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে।
সেনাবাহিনীর আশ্বাসে বুধবার দুপুর ১টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক থেকে সরে যায় শ্রমিকরা। এর আগে গত সোমবার সকাল ৯টার দিকে পাওনা পরিশোধের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা। অবরোধের কারণে পার্শ্ববর্তী বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও যানজট সৃষ্টি হয়েছিল। সব মিলিয়ে তিন সড়কে প্রায় ৩০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। স্থবির হয়ে পড়েছিল ঢাকা-আরিচা, নবীনগর-চন্দ্রা এবং বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক।
শ্রমিকরা বলেন, আমরা টানা ৫৩ ঘণ্টা ধরে সড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছি আমাদের পাওনা পরিশোধের জন্য। কিন্তু কোনো পক্ষই আমাদের সঙ্গে কথা বলেনি। বুধবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয় বার্ডস গ্রুপের মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। যানজটের কারণে তাকে কারখানায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। রাস্তা ফাঁকা করতে হবে। এমন খবরে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেছে শ্রমিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সোমবার লে-অফ করা বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকদের সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ কোনো পাওনা পরিশোধ না করে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এমনকি তিন মাস সময় চেয়ে কারখানার গেটে একটি নোটিশও সাঁটিয়ে দেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। সব শ্রমিক পাওনা পাওয়ার আশায় সকালে কারখানায় গেলে নোটিশে আরও তিন মাস সময় চাওয়ার বিষয়টি দেখতে পান। এ সময় উত্তেজিত হয়ে শ্রমিকরা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বুড়িরবাজার এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। অবরোধের টানা ৫৩ ঘণ্টা পর মালিককে গ্রেফতারের খবর পেয়ে সড়ক ছেড়ে দেন শ্রমিকরা।
শিল্পপুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বার্ডস গ্রুপের মালিককে আটকের খবর পেয়ে ১টার দিকে সড়ক ছেড়ে দেয় আন্দোলনরত শ্রমিকরা। সড়কে যানচলাচল শুরু হয়েছে। ঢাকা জেলা পুলিশের সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহীনুর কবির বলেন, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনীর চেষ্টায় সড়কটিতে যান চলাচল শুরু হয়। তবে যানবাহনের বেশ চাপ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে।
কালিয়াকৈরে মহাসড়ক অবরোধ : কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকায় নায়াগ্রা টেক্সটাইল লিমিটেড নামক একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বুধবার সকাল থেকে আগস্ট মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এদিকে মহাসড়কের দুপাশে আগে থেকেই অবরোধ থাকার কারণে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে ওই সড়কে চলাচলকারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছি। তবে এখনো পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে আসেনি।
গাজীপুরে বিক্ষোভ, ১০ কারখানায় ছুটি : গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, চাকরিসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া চৌধুরী বাড়ি এলাকায় একদল শ্রমিক চাকরিসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টির কারণে উভয়দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন ওই পথে চলাচলকারীরা। শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুরের বেশিরভাগ কারখানায় সামনে লেখা রয়েছে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ আছে। মাসের ১ তারিখ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত প্রতিটি কারখানার সামনেই শত শত শ্রমিক চাকরির জন্য ভিড় করে। তারা বলেন, শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ লিখে রাখলেও গোপনে নারী শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। পুরুষ শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করে-এমন অভিযোগে তারা পুরুষ শ্রমিকদের নিয়োগ দিচ্ছে না। এই অভিযোগ তুলে বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভোগড়া এলাকায় শতাধিক শ্রমিক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে তারা বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য কারখানার ফটকের সামনে বিক্ষোভ করে এবং ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে বাধ্য হয়ে প্রথমে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ভোগড়া পর্যন্ত সব কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। ধীরে ধীরে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে জয়দেবপুর রোড এলাকার কারখানাগুলোতেও ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর অনেক শ্রমিক বাড়ি চলে গেলেও কিছু শ্রমিক বিক্ষোভে যোগ দেয়। এ সময়ে দশটি কারখানা ছুটি দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।