Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি

৬২ প্রতিষ্ঠানের ৪৭টির তালিকা মন্ত্রণালয়ে

অনিয়ম পেলেই চাকরিচ্যুতিসহ আইনানুগ ব্যবস্থা * পিএসসির আংশিক তালিকা, আছে গরমিল * পূর্ণাঙ্গ তালিকা নিয়ে ডেটাবেজ তৈরি হবে

Icon

রেজাউল করিম প্লাবন

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

৬২ প্রতিষ্ঠানের ৪৭টির তালিকা মন্ত্রণালয়ে

কোটা

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিপ্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগসহ ৬২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৭টির তালিকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে। দু-একদিনের মধ্যে জমা পড়বে বাকি ১৫ প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা। পূর্ণাঙ্গ তালিকা নিয়ে তৈরি করা হবে একটি ডেটাবেজ। এরপর তা প্রকাশ করা হবে জনসম্মুখে। ভুয়া, জাল সনদ ও অনিয়ম করে চাকরিপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে করা হবে চাকরিচ্যুতিসহ আইনানুগ ব্যবস্থার সুপারিশ। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও তালিকা প্রণয়নের কাজে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন এসব তথ্য। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জমাকৃত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত প্রজাতন্ত্রের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে। বিসিএস প্রশাসন ও নন-ক্যাডার ১ম শ্রেণির আংশিক তালিকা পাঠিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। তবে সেখানেও রয়েছে গরমিল। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান-অধিদপ্তর তালিকা পাঠাতে একটু সময় নিচ্ছে যাতে কেউ বাদ না পড়ে। আর এ যৌক্তিক সময় দিয়ে একটি নির্ভুল ডেটাবেজ সম্পন্ন করতে চায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

১৫ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের একটি তালিকা তৈরি হবে। সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কতজনের চাকরি হয়েছে, এখানে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর একটি তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ না করে যারা মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সব মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তরে চিঠি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিপ্রাপ্তদের তালিকা চাওয়া হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, উপদেষ্টার নির্দেশের পর থেকে গত এক মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে অতি জরুরিভাবে পরপর ৩টি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। চিঠিতে নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ না থাকলেও অতি দ্রুত তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৫ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-১ শাখার উপসচিব আবু আউয়াল স্বাক্ষরিত চিঠি দেওয়া হয় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে। এতে সরকারি চাকরিতে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদে এ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত জনবলের পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাঠাতে বলা হয়। এরপর ২২ আগস্ট উপসচিব শম্পা কুন্ডু অতি জরুরি উল্লেখ করে সব বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারীদের তালিকা চেয়ে চিঠি পাঠান। সর্বশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-১ শাখার উপসচিব আব্দুল্লাহ আল খায়রুম স্বাক্ষরিত চিঠিতে ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে উল্লিখিত কোটায় মন্ত্রণালয়সহ ৬২টি অধিদপ্তর/পরিদপ্তর/সংস্থা/করপোরেশন/দপ্তরে নিয়োগপ্রাপ্তদের জরুরি ভিত্তিতে তালিকা পাঠাতে বলা হয়।

চিঠিতে ৭টি ছকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিরতদের বিস্তারিত তথ্য পাঠাতে বলা হয়। তথ্যগুলো হচ্ছে-প্রার্থীর নাম, নিয়োগপ্রাপ্ত পদ ও শ্রেণি; পিতার নাম ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, যার মুক্তিযোদ্ধা সনদ/গেজেটের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন (পিতা/মাতা/পিতামহ/মাতামহ) তার নাম ও ঠিকানা, মুক্তিযোদ্ধার নাম ও পিতা/মাতা/পিতামহ/মতামহের সনদ ও গেজেট নম্বর, নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার তারিখ, প্রদত্ত নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটার শতকরা হার এবং মন্তব্য (যদি থাকে)।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, অধিকাংশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিপ্রাপ্তদের তালিকা পাঠিয়েছে। বাকিরাও দ্রুত পাঠাবে বলে আশা করছি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ২য় ও ৩য় শ্রেণির পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের সংখ্যা বেশ বড়। আমরা তাদের তালিকার অপেক্ষা করছি। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জমাকৃত তালিকা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। প্রত্যাশা করছি, সব মন্ত্রণালয় ও তার অধীনস্থ বিভাগগুলোর তালিকার সুন্দর একটি ডেটাবেজ তৈরি করতে পারব এবং এটি খুব দ্রুতই হবে। তালিকায় কারও বিরুদ্ধে অনিয়ম বা ভুয়া সনদে চাকরিপ্রাপ্তির বিষয়টি প্রমাণ হলে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করব।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-২ শাখা সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে তারা একাধিক চিঠি পেয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিপ্রাপ্তদের তালিকা চেয়ে অধিদপ্তরকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। অধিদপ্তর এখনো তালিকা পাঠায়নি। খুব দ্রুত তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে তারা তালিকা হাতে পাবেন বলেও আশা করছেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তালিকা প্রণয়নের কাজে জড়িত একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে উল্লিখিত কোটায় মন্ত্রণালয় ও তার আওতাধীন ৬২টি বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা জরুরিভাবে পাঠাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি মন্ত্রণালয় তালিকা জমা দিয়েছে (৩য় ও ৪র্থ শ্রেণি)। বিসিএস ও নন-ক্যাডার ১ম শ্রেণির আংশিক তালিকা পাঠিয়েছে পিএসসি। তবে পিএসসির তালিকায় গরমিল আছে। কে কততম, তা ক্রমানুসারে পাঠায়নি। আমরা ফের স্পষ্ট তালিকার কথা বলব। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়সহ ১৫টি মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন অধিদপ্তর/পরিদপ্তর/সংস্থা/করপোরেশন/দপ্তর কোনো তালিকা দেয়নি। আশা করছি, খুব দ্রুতই এসব তালিকা জমা হবে। তখন একটি ডেটাবেজ তৈরি করা হবে। ডেটাবেজে কারও বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম কিংবা জাল সনদে চাকরির বিষয়টি ওঠে এলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগে তার বিষয়ে চাকরিচ্যুতিসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে। ইতোমধ্যে ডেটাবেজের কাজ শুরু হয়েছে এবং দ্রুতই সম্পন্ন হবে বলেও জানান তারা। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য, ১০ শতাংশ নারীদের জন্য, ১০ শতাংশ পিছিয়ে থাকা জেলার মানুষের জন্য, পাঁচ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য এবং এক শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য ছিল।

২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর কোটাবিরোধী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভা সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে (যেসব পদ আগে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি বলে পরিচিত ছিল) নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। চলতি বছর সংস্কারের দাবিতে ফের আন্দোলন শুরু হয় ৫ জুন। সেই আন্দোলন একপর্যায়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান। এরপর দেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এ সরকারের সংস্কারের অংশ হিসাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মন্ত্রণালয়সহ সব বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। অল্প সময়ের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ তালিকা ঘোষণা করা হবে বলে জানায় এ মন্ত্রণালয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম