Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের হদিস নেই: এলজিআরডি উপদেষ্টা

Icon

কুমিল্লা ব্যুরো

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের হদিস নেই: এলজিআরডি উপদেষ্টা

সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের হদিস নেই: এলজিআরডি উপদেষ্টা

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি রোববার কুমিল্লার পল্লী উন্নয়ন একাডেমি-বার্ডের ৫৭তম বার্ষিক পরিকল্পনা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পিপিআরসি চেয়ারম্যান ড. হোসেইন জিল্লুর রহমান। সভায় সভাপতিত্ব করেন এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মোসাম্মৎ শাহানারা খাতুন।

উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, বার্ডের মহাপরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

হাসান আরিফ বলেন, সমবায় ব্যাংকের বহু সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে। যারা এক সময় ব্যাংকে ছিলেন, তারাই এসব সম্পত্তি বেদখল করে বসে আছেন। তাদের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আর আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর কোথায় কী অবস্থা রয়েছে, সবগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। সমবায় ব্যাংকের অবস্থা দেখতে গিয়ে জানলাম ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসান আরিফ আরও বলেন, সমবায় দাঁড়াতে পারছে না, কারণ সমবায়ীদের মধ্যে সমবায়ের মনমানসিকতার অভাব। সমবায়ীরা শুধু কমিটিতে ঢুকতে চায়, কী উন্নয়ন হলো সেটির দিকে তাদের লক্ষ্য নেই।

সভায় বক্তারা সাম্প্রতিক বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় ক্ষেত্রে বার্ড যেসব গবেষণা চালাচ্ছে তা তুলে ধরা হয়। এছাড়া বিশেষ অতিথি তাদের বক্তব্যে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন।

এদিকে সমবায় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ঋণের বিপরীতে ১৩ হাজার ২২৫ ভরি স্বর্ণ জামানত রেখেছিল নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেড। তবে দীর্ঘ ১০ বছরেও সে ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। বহুবার চিঠি দিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে সমবায় ব্যাংকের ৩০তম ব্যবস্থাপনা কমিটির ৫১তম সভায় কয়েকটি সিদ্ধান্ত আসে। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে বন্ধকি ঋণের বিপরীতে মেয়াদোত্তীর্ণ স্বর্ণ বিক্রি করা হবে বলে জানানো হয়। তা না হলে ব্যাংকের তারল্য সংকটে পড়ার আশঙ্কা দেখা যায়।

সূত্র জানায়, গ্রাহক নিখোঁজের সুযোগটি কাজে লাগায় ব্যাংকের একটি চক্র। গ্রাহকের পরিচয়পত্র নকল করে সমবায় ব্যাংকে আবেদন করার নাটক সাজায় চক্রটি। স্বর্ণ ফেরত পেতে এক হাজার ৯৮৪টি আবেদন করেন গ্রাহকরা। কিন্তু এর বেশির ভাগই ছিল ভুয়া। দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে আরও ভয়াবহ তথ্য। সংস্থাটির অনুসন্ধান প্রতিবেদন বলছে, নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেড স্বর্ণ ফেরত পেতে সমবায় ব্যাংক বরাবর এক হাজার ৯৮৪টি আবেদন জমা হয়। এর মধ্যে মাত্র তিনটি আবেদনপত্র সঠিক ছিল। বাকি এক হাজার ৯৮১টি আবেদন ছিল ভুয়া। কারণ আবেদনপত্রের সঙ্গে মূল আবেদনপত্রের স্বাক্ষরের (১০ বছর আগে দেওয়া গ্রাহকের স্বাক্ষর) কোনো মিল নেই। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গেও কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। জুয়েলারি সমিতির মূল্য তালিকা অনুযায়ী ওই সময় সেসব স্বর্ণের মূল্য ছিল ৩১ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, ঢাকায়ও স্বর্ণ জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক। দুদকের ওই অনুসন্ধান প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ঢাকা অংশে ভুয়া স্বাক্ষর ও নকল পরিচয়পত্র দিয়ে ৪৫৫টি আবেদন করা হয়। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ১২০ জন সঠিক গ্রাহককে স্বর্ণ ফেরত দেওয়া হয়েছে। বাকি ৩৩৫টি আবেদন ভুয়া হিসাবে শনাক্ত হয়েছে। এভাবে ঢাকা থেকে ৩৩৫ গ্রাহকের এক হাজার ৫৯৪ ভরি ১৪ আনা স্বর্ণ আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান চক্র। গড়ে ১৮ ক্যারেট হিসাবে প্রতি ভরি ৫৪ হাজার ১৮০ টাকা ধরে আট কোটি ৬৪ লাখ টাকার স্বর্ণ আত্মসাৎ করেছেন তারা।

জালিয়াতির ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল ব্যাংকের দুটি বিভাগ। একটি স্বর্ণ বিভাগ ও অপরটি হিসাব বিভাগ। সমবায় আইন অনুযায়ী বিভাগীয় সার্বিক কাজের দায়িত্ব ও তত্ত্বাবধান সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিজিএম বা উপমহাব্যবস্থাপকের ওপর বর্তায়। তারা কোনো সমস্যায় পড়লে জিএম বা চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু স্বর্ণ আত্মসাতের ঘটনা দুদক পর্যন্ত গড়ালেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাননি এর দায়িত্বে থাকা ডিজিএম।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম