Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ইসি গঠনের আগে ভোটার হালনাগাদ হচ্ছে না

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইসি গঠনের আগে ভোটার হালনাগাদ হচ্ছে না

ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে চলতি বছরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ কর্মসূচি ঘোষণা নিয়ে অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনারদের পদ শূন্য থাকায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার পূর্বশর্ত হলো নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা। সেক্ষেত্রে ইসি সংস্কার কমিশন সুপারিশ রিপোর্ট না দেওয়া পর্যন্ত পরবর্তী কমিশন গঠন বিলম্বিত হবে। ফলে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার প্রক্রিয়াও পিছিয়ে যাবে।

এদিকে ইসি সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তারা জানান, বিগত কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন থাকাবস্থায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম ঘোষণার বিষয়ে আলোচনা হয়। পদত্যাগের আগে ওই কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে যায়নি। সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদ এবং ভোটার তালিকা ও বিধিমালা অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটার তালিকা প্রস্তুতের এখতিয়ার সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের। ফলে নতুন কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার ইসি সচিবালয়ের নেই। এ কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ কর্মসূচি ঘোষণা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

ওই কর্মকর্তারা আরও জানান, আইন অনুযায়ী, আগামী জানুয়ারিতে হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের নিয়ম রয়েছে। খসড়া তালিকার ওপর জমা হওয়া দাবি বা আপত্তি নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে আগামী ২ মার্চ। সাধারণত বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ, যাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয় তাদের ছবি তোলা এবং চোখের আইরিশ ও আঙুলের ছাপ নেওয়ার মতো কাজ শেষ করতে ৬ থেকে ৮ মাস সময়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ইসির হাতে এই মুহূর্তে ওই সময় নেই।

তাদের মতে, সর্বশেষ ২০২২ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময়ে ১৫ বছর বয়সিদের তথ্যও সংগ্রহ করা হয়। আগামী জানুয়ারিতে তাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ায় তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এছাড়া নির্বাচন কার্যালয়গুলোতে যারা স্বেচ্ছায় গিয়ে ভোটার হচ্ছেন তাদের নামও সেখানে যুক্ত হবে। এই প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকা হালনাগাদের দিকে যাচ্ছে ইসি সচিবালয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. মাহবুব আলম তালুকদার যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের মাঠ কার্যালয়ে নিয়মিত ভোটার করা হচ্ছে। এটা আমাদের রুটিন কাজ। রুটিন কাজ আমরা করে যাচ্ছি। নতুন ভোটার নিবন্ধন বন্ধ নেই। আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ কর্মসূচি এখনো নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

প্রতিবছর ২ মার্চ ভোটার দিবস উদযাপন করে নির্বাচন কমিশন। ওইদিন হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। চলতি বছরের ২ মার্চ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশের ভোটার ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। যদিও ওই সময়ের পর তালিকায় প্রতিনিয়ত নতুন ভোটার যুক্ত হচ্ছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আবারও ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের ফাঁকে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই বৈঠকে ড. ইউনূস বলেন, সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত ও ভোটার তালিকা তৈরি হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।

অন্যদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতির কথা জানান। এমন পরিস্থিতিতে ভোটার তালিকা কতটা প্রস্তুত তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

ইসি সূত্র জানায়, ভোটার তালিকা আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী, বিদ্যমান ভোটার তালিকা দিয়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব। এর বড় উদাহরণ হচ্ছে-দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যারা ভোটার হয়েছিলেন তারাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার হিসাবে গণ্য হন। তখন ভোটার সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন।

এর আগেও একাধিক নির্বাচনে এই প্রক্রিয়ায় ভোট হয়েছে। তবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হলে একদিকে যেমন নতুন ভোটার বাড়ে, অন্যদিকে মৃতদের নাম বাদ দেওয়া হয়। এতে ভোটার তালিকা আরও বেশি পরিশুদ্ধ হয়। ইসির কর্মকর্তারা জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি কীভাবে নেওয়া যায় তা নিয়ে ইসির ভেতরেও আলোচনা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সচিব শফিউল আজিম এ বিষয়ে ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য নিয়েছেন। পাশাপাশি নির্বাচন কার্যালয়গুলোতে গিয়ে মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ভোটার হতে পারেন সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তাদের মতে, নির্বাচন কমিশনার পদ শূন্য থাকা এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের মতো পর্যাপ্ত সময় না থাকায় ২০২৪ সালের মতোই সাধারণ প্রক্রিয়ায় ২০২৫ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে। এর মধ্যে সরকার থেকে বিশেষ নির্দেশনা পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম