এএনআইকে মির্জা ফখরুল
ভারতের সঙ্গে বরফ গলতে শুরু করেছে
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আশ্বস্ত করেছি, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের মাটি ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ব্যবহার করতে পারবে না।’
বুধবার বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে বৈঠকের পর এএনআইকে তিনি এ সাক্ষাৎকার দেন।
‘আইস হ্যাজ স্টার্টেড টু মেল্ট সেস বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি লিডার আফটার মিটিং ইউথ ইন্ডিয়ান এনভয়’ শিরোনামে এএনআইয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত এবং অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ‘বরফ গলতে শুরু করেছে’ বলে মনে করে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
যদিও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি এর আগে হাসিনার মেয়াদে গত ১৫ বছরে ভারতের সঙ্গে হওয়া বেশ কিছু উদ্যোগ ও চুক্তির সমালোচনা করেছে।
এএনআই জানিয়েছে, সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা দুদেশের সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করতে বিএনপির কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বিষয়ে এএনআইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল বলেছেন, প্রণয় ভার্মার সঙ্গে হওয়া ওই বৈঠক দুই দেশকে অনেক ইতিবাচক দিকে নিয়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে গত নির্বাচনের পর থেকেই আমাদের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ছিল। কিন্তু এবার আমাদের অফিসে (ভারতের) হাইকমিশনার আসায় অবশ্যই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বরফ গলতে শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সবসময়ই খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং এ সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। অবশ্যই, এটিও ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের একটি টার্নিং পয়েন্ট।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তার দল ভারতকে আশ্বস্ত করেছে যে, ক্ষমতায় এলে তারা বাংলাদেশের ভূখণ্ড বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকে ব্যবহার করতে দেবে না। যদিও অতীতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল বলে রিপোর্ট রয়েছে।
হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা পানি ভাগাভাগি সমস্যা, সীমান্ত হত্যা, বিদ্যমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার কথা উল্লেখ করেছি। একই সময়ে, ভারতের প্রধান ইস্যু ছিল নিরাপত্তা সমস্যা। আমরা আশ্বস্ত করেছি যে, ক্ষমতায় গেলে, আমরা নিশ্চিত করব. এই ভূখণ্ড যাতে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ব্যবহার করতে না পারে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক মাসেরও বেশি সময় আগে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। এর আগে টানা কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন। পদত্যাগের পর শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান এবং এরপর নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। হাসিনা সরকারের পতনের একদিন পরই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক সব সময়ই খুব ভালো ছিল। তবে, বিএনপি ও ভারতের সম্পর্ক নিয়ে কিছু ভুল বোঝাবুঝি ছিল। আমি মনে করি, বরফ গলতে শুরু করেছে। আশা করি এই সম্পর্ক আরও ভালো হবে। এইবার তারা (ভারত) আমাদের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করবে। ভারতকে আমরা বিশেষভাবে বলার চেষ্টা করেছি যে, তাদের এ দেশের মানুষের পালস্ বোঝার চেষ্টা করা উচিত। সব ডিম তাদের এক ঝুড়িতে রাখা উচিত নয়। তাদের (উভয় দেশের) জনগণের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত।’
এদিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের ফাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ঢাকা ও দিল্লির পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব এ বিষয়ে বলেন, ‘অবশ্যই, এটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতিতে এই পরিবর্তনের পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে জয়শঙ্করের সাক্ষাৎ অবশ্যই খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিশ্বাস করি, এই বৈঠকের পর সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার করা উচিত। জনগণের মধ্যে সম্পর্কই জোরদারই ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার মূল চাবিকাঠি।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি মনে করে, হাসিনার বাংলাদেশে ফিরে আসা উচিত এবং তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের মুখোমুখি হওয়া উচিত।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার তাকে (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছে কিনা সেটা আমি এখনো জানি না। তবে, আমি মনে করি, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফিরে আসা উচিত এবং তার জবাবদিহি করা উচিত।’
এদিকে বিএনপি বলেছে, আগামী ৯ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় দুর্গাপূজা উৎসবের আগে তারা দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের ইউনিটগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছে। বাংলাদেশের ৩২ হাজার ৬৬৬টি প্যাভিলিয়নে এবার পূজা উদযাপন করা হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন, এমন ভুল ন্যারেটিভ নিয়ে আমরা খুব উদ্বিগ্ন। আমি মনে করি না যে, কোনো গুরুতর সমস্যা চলছে। প্রতিটি পরিবর্তনের পরে কিছু সমস্যা হয়, যা রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক নয়।’
তিনি বলেন, ‘কিছু ঘটনা ঘটেছে। এগুলো সবই রাজনৈতিক প্রকৃতির, সাম্প্রদায়িক নয়। আমরা দেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার বিষয়ে খুবই সজাগ। বিশেষ করে, পূজার আগে। আমরা এরই মধ্যে সারা দেশে আমাদের ইউনিটগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছি।’ এ সময় তিনি জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিশ্বাস করে, বাংলাদেশ শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকার থেকে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে।