Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

রয়টার্সকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান

সংস্কার সম্পন্ন করে দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন

যে কোনো পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করব * রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য থাকা উচিত * বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সংস্কার সম্পন্ন করে দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন

গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করে ১৮ মাস বা দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচনের লক্ষ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বর্তী সরকারকে যে কোনো পরিস্থিতিতে পূর্ণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তার নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না বলেও তিনি জানান। তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়েও কথা বলেন। সেক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীকে রাষ্ট্রপতির অধীনে নেওয়া যেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন।

‘বাংলাদেশ আর্মি চিফ প্লেজেস সাপোর্ট ফর ইউনূস ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট কাম হোয়াট মে’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও তার সেনাবাহিনী আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমাতে ব্যবস্থা নেয়নি। এটিই শেখ হাসিনার পরবর্তী ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। ১৫ বছরের ক্ষমতা থেকে তিনি পদত্যাগ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত চলে যেতে বাধ্য হন।

সোমবার ঢাকায় নিজ কার্যালয়ে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্র্বর্তীকালীন প্রশাসনের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এবং সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার একটি রূপরেখাও দিয়েছেন। সেনাপ্রধান বলেন, ‘যা-ই ঘটুক না কেন, আমি তার (মুহাম্মদ ইউনূস) পাশে থাকব। যাতে তিনি তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন।’ 

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের অগ্রদূত ড. ইউনূস বিচার বিভাগ, পুলিশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কয়েক সপ্তাহ আগে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়া জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, সংস্কারের পর গণতন্ত্রে উত্তরণ এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে হওয়া উচিত। তবে তিনি একই সঙ্গে এ বিষয়ে ধৈর্য ধরার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন। 

তিনি বলেন, ‘আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, তবে আমি বলব ওই সময়সীমার মধ্যে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত।’

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করার আহ্বান জানিয়েছিল।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানান, অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও তিনি প্রতি সপ্তাহে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। সেনাবাহিনী অশান্ত পরিস্থিতির পর দেশকে স্থিতিশীল করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, একসঙ্গে কাজ করলে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাইতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়, পরে সেটি সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। এ সময় ১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে বিদ্রোহের কেন্দ্রে থাকা রাজধানী ঢাকার জমজমাট রাস্তায় শান্তি ফিরে এলেও হাসিনা সরকারের নাটকীয় পতনের পর প্রশাসনের কিছু অংশ এখনো সঠিকভাবে কার্যকর নয়।

বাংলাদেশের পুলিশের এক লাখ ৯০ হাজার সদস্যের একটি অংশ এখনো বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। তাই সেনাবাহিনী দেশের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনের পদক্ষেপ নিয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর দেশ সামরিক শাসনের অধীনে আসে। ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃস্থাপিত হয়। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন।

দীর্ঘ এই বিক্ষুব্ধ সময়ে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছেন, তার নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী রাজনৈতিকভাবে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। 

সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি এমন কিছু করব না, যা আমার বাহিনীর জন্য ক্ষতিকর হবে। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই।’

তিনি জানান, সরকারের পতনের পর সংস্কারের অংশ হিসাবে সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কয়েকজনকে শাস্তির আওতায়ও আনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। 

ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘যদি দায়িত্বে থাকা কোনো সদস্য দোষী প্রমাণিত হন, অবশ্যই আমি ব্যবস্থা নেব।’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা সংস্থাগুলোতে দায়িত্ব পালনকারী কিছু সামরিক কর্মকর্তা আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করে থাকতে পারেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

 

২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে ‘গুম’ হয়ে থাকতে পারে এমন প্রায় ৬০০ জনের বিষয়ে তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করেছে। 

সার্বিক পরিস্থিতিতে যা-ই ঘটুক, সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে চান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি সৈন্য রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি সেনা পাঠিয়ে অবদান রেখে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, ‘এটি শুধু তখনই ঘটতে পারে (সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা) যখন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য থাকে। যেখানে সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে।’ 

বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বর্তমানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে, যা সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে একটি সাংবিধানিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় বিষয়টি সংশোধনের দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে বলে সেনাপ্রধান মনে করেন।

অবশেষে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীকে কখনোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। একজন সৈনিকের কখনো রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া উচিত নয়।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম