Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আশুলিয়ায় ৫৫, গাজীপুরে ১৩ কারখানা বন্ধ ঘোষণা

ফের পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন (ঢাকা উত্তর), আশুলিয়া ও গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফের পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ

পোশাকশিল্পে কয়েকদিন পরিস্থিতি তুলনামূলক স্বাভাবিক থাকলেও বকেয়া বেতন, ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ এবং সড়ক অবরোধে ফের অচল হয় আশুলিয়া, গাজীপুর, টঙ্গী ও কালিয়াকৈর শিল্পাঞ্চল। গাজীপুর ও টঙ্গীর কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

টঙ্গীতে মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করেন শ্রমিকরা। কালিয়াকৈরে একাধিক কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। কালিয়াকৈরে ২৪ শ্রমিককে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আশুলিয়ার জিরাবো, নরসিংহপুর, জামগড়া এলাকায় সোমবার ৫৫টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এর মধ্যে ৪৩টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় এবং ৯টিতে সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো বাকি কারখানাগুলোয় উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশ আশুলিয়া জোনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম।

এছাড়া কালিয়াকৈরে তিনটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গাজীপুরে দিনভর শ্রমিক আন্দোলনে উত্তাল থাকার পর ১৩টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম। তিনি বলেন, সোমবার শ্রমিক আন্দোলনের মুখে ১৩টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

এর মধ্যে ১২টি পোশাক কারখানা এবং একটি খাদ্য উৎপাদন তৈরি কারখানা। এর মধ্যে খাদ্য উৎপাদন তৈরি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য এবং বাকিগুলো একদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে আমরা শুনেছি। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় জেনারেশন নেক্সট গার্মেন্টসের কয়েক হাজার শ্রমিক সড়ক অবরোধ করেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, অনেক কারখানায় যখন টিফিন বিল, নাইট বিল, হাজিরা বোনাস বাড়ানোসহ নানা দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল, তখন তাদের কোনো দাবি ছিল না।

অন্য কারখানার শ্রমিকরা এসে আমাদের ফ্যাক্টরিতে ঝামেলা করার চেষ্টা করলেও আমরা তা প্রতিহত করে কাজ করেছি। তারপরও তাদের মালিক কারখানা বন্ধ করে রেখেছে। গত দুই মাস শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেনি। তাই ৫-৬ হাজার শ্রমিক চরম দুর্ভোগ ও অসহায়ত্বের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। তাই নেক্সট জেনারেশনের শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

রোববার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ২২টি কারখানা থেকে সোমবার ৫৫টিতে উন্নীত হওয়ায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে উৎপাদনব্যবস্থা। বিদেশি ক্রেতাদের কার্যাদেশ হারানোর পাশাপাশি রপ্তানি বাজারে বড় ধরনের প্রভাব তৈরির আশঙ্কা পোশাক কারখানা মালিকদের। আশুলিয়ায় ১ হাজার ৮৬৩টি তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে চলমান সংকটের আগে থেকেই বন্ধ ছিল ১৬৭টি। নতুন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ৫৫টি কারখানা বন্ধ থাকায় গভীর অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন পোশাক শ্রমিকরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিল বৃদ্ধি বাস্তবায়ন না হওয়ায় রোববার বিভিন্ন কারখানায় বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। অজানা আশঙ্কায় ছুটি ঘোষণা করার পর সোমবার থেকে হা-মীম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকানাধীন দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়ার লি., অ্যাপারেল গ্যালারি লি., রিফাত গার্মেন্টস, এক্সপ্রেস ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং, আর্টিস্টিক ডিজাইন, নেক্সট কালেকশন নামের তৈরি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। তিনি বলেন, চলমান সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। শ্রম আইন ২০০৬-এর ধারা ১৩(১) অনুযায়ী দৈনিকভিত্তিক ‘কাজ নেই মজুরি নেই’ নীতিমালায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ করায় শ্রমিকরা কোনো বেতন-ভাতা পাবেন না। কারখানার পরিবেশ নিরাপদ হলে কবে কারখানা খুলবে, তা নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও পরিস্থিতির তেমন হেরফের হচ্ছে না। কোথাও কোথাও ন্যূনতম বেতন ২৫ হাজার টাকা দাবি করায় নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কারখানা চালু রাখার মতো অবস্থা নেই।

শিল্প মালিকদের অভিযোগ, আর্মড পুলিশ, র‌্যাব-বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সহায়তা পেয়েও পুলিশ আগের মতো সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে না। তবে শিল্প পুলিশ আশুলিয়া জোনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম বলেছেন, বলপ্রয়োগ করে শ্রমিকদের দাবিদাওয়া মোকাবিলার কৌশল আগেও ফল দেয়নি, এবারও দেবে না। বরং পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে। মালিক-শ্রমিকদের আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধি ও পরস্পরের সমঝোতার মাধ্যমেই এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরামর্শ দেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এদিকে যে কোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে শিল্পাঞ্চলে পুলিশ, আর্মড পুলিশ, শিল্প পুলিশ, বিজিবি ও সেনা সদস্যদের যৌথ টহল চলছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সুরক্ষায় বিভিন্ন কারখানার সামনে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান, র‍‍্যাব, পুলিশের রায়ট কার ও জলকামান।

গাজীপুরে ১২ দফা দাবিতে বিক্ষোভ : গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস লিমিটেড নামের একটি কারখানার শ্রমিকরা ১২ দফা দাবি জানিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন। সোমবার সকাল ৮টা থেকে শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ না দিয়ে অ্যাসেম্বলি পয়েন্টে অবস্থান নেন। পরে সাড়ে ৯টার দিকে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিলসহ ৮টি দাবি মেনে নেয়। বাকি চার দাবিতে তারা আন্দোলন করে। এতে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে মাওনা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

টঙ্গী : টঙ্গী শিল্পাঞ্চল (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে টঙ্গীর সিজন্স গার্মেন্টসের শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ৭ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। বিকালে তারা মোটরসাইকেলে আগুন দেন এবং পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করেন। অবরোধে অংশ নেয় প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেডের চার শতাধিক শ্রমিক। সকাল ১০টা থেকে অবরোধ শুরু হয়ে বিকাল ৫টায় শেষ হয়। সকাল ১০টা থেকে টঙ্গীর গাজীপুরা ও খাঁপাড়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। আন্দোলনরত শ্রমিক রাবেয়া আক্তার বলেন, আ?মি এ কারখানায় অনেক বছর ধরে কাজ কর?ছি। বেতন নিয়ে ঝামেলা লেগেই আছে। এ বিষয়ে কারখানার মালিক বাহাউদ্দিন চৌধুরী বাকের বলেন, সবসময় নিয়মিত বেতন দিলাম। এখন অর্ধেক মাসের বেতনের জন্য শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে।

কালিয়াকৈর : কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, কালিয়াকৈর উপজেলায় রোববার ও সোমবার দুদিনে পৃথক দুই এলাকায় পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় ২৪ শ্রমিককে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উপজেলার হরতুকীতলা এলাকায় ইকোনিটস লিমিটেড কারখানায় নৈরাজ্য সৃষ্টির অভিযোগে ১৮ জন শ্রমিক ও মৌচাক দোকানপাড় এলাকার কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট কারখানায় ৬ জনকে আটক করেছে। কালিয়াকৈর থানা পুলিশ ২৪ শ্রমিকের আটকের কথা স্বীকার করেছে। এর আগে সোমবার সকালে শ্রমিকরা আধা ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এছাড়া কালিয়াকৈর উপজেলার পৃথক এলাকায় তিনটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম