Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন

জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে ড. ইউনূসের

Icon

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে ড. ইউনূসের

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুরে তাদের মধ্যে এই বৈঠক হতে পারে। সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনো দেশের সরকারপ্রধানের বৈঠকের ঘটনা বিরল। কিন্তু নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের প্রতি সম্মান জানাতেই জো বাইডেন এ বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাধারণত জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে নির্ধারিত বক্তৃতার দিন সকালে নিউইয়র্কে পৌঁছান। বিকালে তিনি জাতিসংঘে আগত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে একটি সংবর্ধনার আয়োজন করেন। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে কোনো দেশের শীর্ষ নেতার সঙ্গে তিনি সাধারণত দ্বিপক্ষীয় সাক্ষাৎ করেন না। তবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে তার দেখা-সাক্ষাৎ হয়ে থাকে।

এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা আরও বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও অংশগ্রহণ করবেন। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে না। অন্যদিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। শনিবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন একথা জানান।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘের মহাসচিব, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মানবাধিকারসম্পর্কিত হাইকমিশনার, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, ইউএসএইডের প্রশাসকদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। তবে এ সময়ে অনেক বৈঠকের সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তেও হয়ে যায়। সে বিবেচনায় নতুন বৈঠক তালিকায় যোগ হতে পারে; আবার সময়ের অভাবে কোনো বৈঠক বাদও যেতে পারে।

নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উনাদের দুজনের উপস্থিতি নিউইয়র্কে একসঙ্গে হচ্ছে না। কারণ মোদি একটু আগে চলে যাচ্ছেন, আর আমাদের প্রধান উপদেষ্টা একটু দেরিতে যাচ্ছেন। কাজেই সেখানে তাদের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে হচ্ছে।

দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে কি নিউইয়র্কে ইউনূস-মোদি বৈঠক হচ্ছে না? এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমাদের তো অনেক কথা পছন্দ না হতে পারে। কাজেই উনার কথা আমার পছন্দ হলো না বা আমার কথা উনার পছন্দ হলো না, এটা নিয়ে আমার মনে হয় খুব বেশি বিচলিত হওয়ার কারণ নেই। এ কারণে তো এমন নয় বাংলাদেশ এখান থেকে বহুদূরে অবস্থিত হবে আর ভারত চলে যাবে অন্য কোথাও। 

তিনি বলেন, প্রতিবেশী যেহেতু পরিবর্তন হয় না, কথা কারও পছন্দ হোক বা না হোক; ভারতের উচ্চপর্যায় থেকে বিভিন্ন সময়ে অগ্রহণযোগ্য কথাবার্তা হয়েছে। আমার মনে হয়, এটা এতটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা না করাই উচিত। উনি দেখা করবেন না বিষয়টা এমন নয়। আসলে সময় ওভারল্যাপ করছে না। এটা আমরা ধরে নেব। দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে আলাপ-আলোচনা রাখতেই হবে। এটা ভারতেরও লাগবে আমাদেরও লাগবে।

মোদির সঙ্গে বৈঠক না হলেও নিউইয়র্কে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে। সেই বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, পাকিস্তানের সম্পর্ক নিয়ে বা কী কথাবার্তা হবে সেটা না হয় আমরা ফিরে এলে তখন বলব কোনটাতে কী কথা বললাম।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আমার দেখা হওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে যে এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে, এটা স্বীকার করতে হবে। সমস্যার সমাধান করতে হলে সমস্যার অস্তিত্ব অস্বীকার করলে চলবে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা অবশ্যই টানাপোড়েন দূর করার চেষ্টা করব এবং ওয়ার্কিং রিলেশন (কাজের সম্পর্ক) যেন হয়। তবে সম্পর্কটা হতে হবে মর্যাদা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে। এর ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া সম্ভব এবং আমরা সেই চেষ্টাই করব।

এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা লিখিত বক্তৃতায় বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের উচ্চপর্যায়ের বিতর্ক পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো এবার বাংলাদেশ থেকে শতাধিক সদস্যের প্রতিনিধিদল ভাড়া করা উড়োজাহাজে নিউইয়র্ক সফর করবে না। বরং যার যেই সংশ্লিষ্টতা বা দায়িত্ব, সে অনুযায়ী যতটা সম্ভব সীমিত আকারে প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমি আমার দায়িত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উচ্চপর্যায়ের সভাগুলোতে অংশগ্রহণের জন্য ২ দিন আগে ভিন্ন একটি ফ্লাইটে নিউইয়র্কে যাব। তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা ৩ দিন নিউইয়র্কে অবস্থান করে সফর শেষে ২৭ সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন।

তৌহিদ হোসেন বলেন, এ বছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এ বছরই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ একটি উচ্চপর্যায়ের সংবর্ধনার আয়োজন করছে। এ সময় বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলের প্রধানদের পাশাপাশি জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, কয়েকটি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান, বিভিন্ন সংস্থার প্রধান অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

২৭ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বক্তব্য দেবেন বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। সেই ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বিগত ২ মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ়প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম