Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

রাজশাহীতে আসিফ মাহমুদ

রাজনৈতিক দল গঠনের অভিপ্রায় নেই

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনৈতিক দল গঠনের অভিপ্রায় নেই

আসিফ মাহমুদ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলের ব্যাপারে রিউমার বা কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে, অনেকেই শুনতে চাচ্ছেন আমাদের থেকে। এটা আমরা এর আগেও স্পষ্টভাবে বলেছি-এখনই কোনো রাজনৈতিক দল খোলার কোনো অভিপ্রায় আমাদের নেই।’ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীতে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি। আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যারা আছেন, কারোরই ক্ষমতার অভিলাষ নেই। সবারই পেশাগত জীবন আছে, সবাই সেখানে ফিরে যেতে চান। কিন্তু দেশের মানুষ একটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে দায়িত্বটা এই সরকারকে দিয়েছেন, সেটি যথাযথভাবে পালন করে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে একটা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই আমাদের লক্ষ্য।’

তবে সংস্কারের আগে নির্বাচন নয় বলে জানান যুব ও ত্রীড়া উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘যে সংস্কারের কথা আমরা বলছি সেটা একদফারই অংশ। শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে অভু্যুত্থানের মধ্য দিয়ে; কিন্তু একদফার যে মূল অংশ, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ-এর জন্য যে সংস্কারগুলো অত্যাবশ্যকীয় সেগুলো করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এটা জনগণের ম্যান্ডেটের ভিত্তিতেই হয়েছে। জনগণ নির্বাচনের জন্য কিংবা ক্ষমতার পালাবদলের জন্য অভ্যুত্থানে আসেনি। যদি আসত সেটা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই আসত। এই অভ্যুত্থান হয়েছে স্পষ্টভাবেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের জন্য।’

আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা বিদ্যমান ব্যবস্থা সংস্কার না করে দিয়ে যেতে পারি, আমরা মনে করি, যেই ক্ষমতায় আসুক, যে কোনো রাজনৈতিক সরকার এই অটোক্রেডিক একটা সিস্টেমের মধ্যে নিজেও অটোক্রেডিক হয়ে উঠতে বাধ্য হবে। সে কারণে আমরা মনে করি-এই সংস্কারটা অত্যাবশ্যকীয়। দেশের জনগণ যেভাবে দেশকে গড়তে চাইবেন, দেশ পুনর্গঠনের যে প্রস্তাব দেশের মানুষের মধ্য থেকে উঠে আসবে সেটার বাস্তবায়ন করাটাই আমাদের দায়িত্ব হবে।’

সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম আছেন, তিনি এবং উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান-এ দুজনের নেতৃত্বে একটি টিম করা হয়েছে। তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রেগুলার বেসিসে বসছেন। অফিশিয়াল বসার বাইরেও আনঅফিশিয়ালি যোগাযোগ রাখছেন যাতে আমাদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি না হয়। দেশ পুনর্গঠনের এই যাত্রায় রাজনৈতিক দলসহ সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি, সেটা আমরা নিশ্চিত করব।’

পোশাক খাতে অস্থিরতা প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘শনিবার আমরা বিজিএমইতে তিনজন উপদেষ্টাসহ আমাদের পুরো টিমসহ একটা আলোচনায় ছিলাম। রোববার থেকে আজ মঙ্গলবার, এই সময়টাতে কিন্তু গত সপ্তাহের তুলনায় যে আনরেস্ট ছিল সেটা ৫ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। কিছু কিছু জায়গায়, খুব স্পেশিফিক দু-তিনটা কারখানায় এখন আনরেস্টের মতো সিচুয়েশন আছে। সেটাও আমরা মনে করি দ্রুতই প্রশমন হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যে কমিটি করে দিয়েছি, পর্যবেক্ষণ সেল করা হয়েছে। সেখানে শ্রমিকরা অভিযোগ জানাচ্ছেন। তারা আস্থা রেখেছেন বলে তাদের ধন্যবাদ জানাই। সেল খুব দ্রুতই পদক্ষেপ নেবে। আমাদের সেই কমিটি কিন্তু বিভিন্ন জায়গায়, আশুলিয়ায় শ্রমিক আনরেস্টের জায়গায় ভিজিট করেছে এবং সমস্যাগুলোকে অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করছে।’

দেশের বিভিন্ন স্থানে সমন্বয়করা মতবিনিময় সভা করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়ছেন-এ নিয়েও প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে এটা পুরোনো কালচার। যে কোনো ভালো উদ্যোগকে বিতর্কিত করার জন্য কিছু মানুষ তো থাকেই। সমন্বয়ক পরিচয়ে অনেক ভুয়া, অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করছেন। যে দ্বিতীয় স্বাধীনতার কথা আমরা বলি, তারপরই অনেকে চাঁদাবাজির মতো ঘটনা ঘটাচ্ছেন। আমরা মনে করি, এগুলোর অবসান ঘটবে। আমাদের মধ্যে যে জাতীয় ঐক্য হয়েছে তা থাকবে এবং তার মধ্য দিয়েই আমরা নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে পারব।’

এর আগে প্রধান অতিথি হিসাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন-শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক আবদুর রহিম খান।

খেলার চেতনা দেশ গড়ার লড়াইয়ে কাজে লাগাতে হবে : রাবি প্রতিনিধি জানান, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘খেলার মধ্যে যে শক্তি আছে, তা আমাদের মধ্যে উজ্জীবন ও ঐক্য তৈরি করে। মাঠে এগারোজন খেললেও আসলে আমরা আঠারো কোটি মানুষ এক হয়ে যাই। আর এই চেতনাকে জাতীয় শক্তিতে রূপান্তর করে দেশ গড়ার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’ মঙ্গলবার বিকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বনাম রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যকার এ খেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম, রুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ প্রমুখ।

শেখ হাসিনা নিজেকে নেতৃত্বের জন্য বিকল্পহীন ভাবত-পিরোজপুরে আব্দুল হান্নান মাসুদ : পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেছেন, শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট হয়েছেন, কারণ তিনি নিজেকে নেতৃত্বের জন্য বিকল্পহীন ভাবতেন। নিজের কথা ছাড়া তার আর কারও কোনো কথা সহ্য করতে পারত না। তার পাশে বসা লোকটার কথাও সে গুরুত্ব দিত না। সোমবার দুপুরে পিরোজপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলার সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান সমন্বয়ক এসব কথা বলেন।

এ সময় আরও বত্তৃদ্ধতা করেন কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ফারজানা আফিফা অদিতি, এমএ সাঈদ, হাসিবুল ইসলাম শান্ত, শহীদুল ইসলাম শহীদ, জিহাদ হোসাইন, সাকিব আহম্মেদ, ফারিয়া সুলতানা লিজা, সাব্বির আহম্মেদ রিয়ন এবং পিরোজপুর জেলা সমন্বয়ক মুসাব্বির মাহমুদ সানি ও শাহরিয়ার আমিন সাগর।

শেরপুরে ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম স্থগিত : শেরপুর প্রতিনিধি জানান, শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব ধরনের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার রাতে শহরের মুসলিম মার্কেটের অ্যাডভান্স আইটি ইনস্টিটিউট হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় ছাত্ররা বলেন, ছাত্রদের এখন পড়ার টেবিলে ফেরার সময় হয়েছে। তবে জাতির যে কোনো ক্রান্তিকালে আবার রাস্তায় ফিরবে। এছাড়াও দুর্নীতি, অনিয়ম মোকাবিলা করে শেরপুরের উন্নয়নে প্রয়োজনে মাঠে থাকবে ছাত্ররা। এ সময় সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সঞ্জয় বণিক।

বন্যায় সহযোগিতায় শেরপুর টিমের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বন্যার্তদের সহযোগিতা করতে মাত্র ৩ দিনের মধ্যে শেরপুরবাসী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন টিমের কাছে ৭ লাখ ২৯ হাজার ১৬৭ টাকা দেয়। সেই সঙ্গে ব্যবহৃত কাপড় ও শুকনো খাবার সংগ্রহ করি। প্রথম ধাপে ত্রাণের পণ্যসামগ্রী বাবদ খরচ হয় ২ লাখ ৪২ হাজর ৪৭০ টাকা। যা নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে পাঠানো হয়েছে। অবশিষ্ট ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৭ টাকা বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও পুনর্বাসন তহবিলে জমা দেওয়া হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম