Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সক্রিয় দালালচক্র, নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা

চোরাপথে ভারতে পালাচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী-এমপি নেতা

কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করছে দালাল সিন্ডিকেট, ধরিয়ে দিয়ে লুটে নিচ্ছে সর্বস্ব * রাজশাহী অঞ্চলের আ.লীগ নেতাদের বড় অংশ সীমান্তপথে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চোরাপথে ভারতে পালাচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী-এমপি নেতা

ছাত্র-জনতার ওপর বর্বর হত্যাকাণ্ড চালানোর পর অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। কঠিন বিপদে ফেলে যান তার দল আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সংসদ-সদস্য, মন্ত্রী ও দলীয় নেতাকর্মীদের। জনরোষ থেকে প্রাণ বাঁচাতে নেতাকর্মীরা আকাশ, জল ও স্থলপথে ভারতে পালাচ্ছেন। পালাতে গিয়ে কেউ কেউ আটকও হচ্ছেন। তাদের পারাপারে বিভিন্ন সীমান্তে গড়ে উঠেছে একাধিক পাচারকারী চক্র। এ চক্রের সদস্যরা প্রভাবশালীদের কাছ থেকে অর্থ, সোনা-গহনা হাতিয়ে নিচ্ছে। 

কখনো পার করে দিচ্ছে, কখনো বা তাদের ধরিয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন কৌশলে সীমান্তে এনে ভাঁওতায় ফেলছে প্রভাবশালীদের। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সিলেটসহ সীমান্তবর্তী জেলা সূত্রে জানা যায়, ওইসব এলাকার আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ-সদস্যদের অধিকাংশই ত্রিপুরা, গোহাটি, আসামসহ ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় চলে গেছেন। ৫ আগস্টের আগে-পরে বিজিবি আন্দোলন দমনে ব্যস্ত থাকায় সীমান্তে কিছুটা শিথিলতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্ট সীমান্ত এলাকাগুলোর বিজিবি ও পুলিশ দাবি করেছে আদম পাচারের কোনো ঘটনা ঘটছে না। বিজিবি টহল জোরদার করেছে। 

জানা যায়, আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি রয়েছে। শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের ছাড়াও বহু নেতা পালিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, চাঁদপুরের সাবেক সংসদ-সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক সংসদ-সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসীন বাহার সূচনা, নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ-সদস্য শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। 

পালিয়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের অনেকে ভারতের ত্রিপুরা, আগরতলা, আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে অবস্থান নিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র বলছে। এছাড়া সীমান্তবর্তী সংসদীয় এলাকার সাবেক সংসদ-সদস্য, আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ নেতাদের একটি বড় অংশ ভারতে পালিয়ে গেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। জানা যায়, সম্প্রতি কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান বাহাউদ্দিন বাহার, তার মেয়ে সূচনাসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য। বর্তমানে তারা কলকাতায় আত্মগোপন করেছেন। তারা কলকাতায় এক রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়ে রয়েছেন। ‘ওপি ইন্ডিয়া’ নামে ভারতের একটি গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৫ দিন আগে সীমান্ত পেরিয়ে তারা কলকাতায় এক রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় অবস্থান করছেন। এর জন্য প্রতিদিন ১০ হাজার রুপি গুনতে হচ্ছে তাদের। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, ভারত থেকে লন্ডনে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে পারেন তারা।

এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর সিলেটের কানাইঘাট দনা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে সুপ্রিমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আটক করে বিজিবি। ওইদিন রাত ১০টার দিকে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তার সামনে অবস্থান করা লোকদের বিচারপতি মানিক বলছেন, ‘আমি তোমাদের পয়সা দিয়ে দেব। পয়সা আমি দেব, আমার ভাই-বোন দেবে।’ 

এই ভিডিওটি যে আসলেই ভারতের ভেতরকার, তার প্রমাণ পাওয়া যায় বিজিবির হাতে বিচারপতি মানিক আটক হওয়ার পরের আরেকটি ভিডিওতে। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে বিজিবি সদস্যদের কাছে মানিক স্বীকার করেছেন, তিনি ১৫ হাজার টাকার কন্ট্রাক্টে ভারতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দুজন লোক ভারতের ভেতরে নিয়ে তাকে মারধর করে ৬০-৭০ লাখ টাকা নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তের আব্দুল্লাহপুর এলাকা থেকে সাবেক সংসদ-সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীসহ তিনজনকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আটক বাকি দুজন হলেন আখাউড়ার নূরপুর এলাকার সাবেক মেম্বার যুবলীগ নেতা মো. হান্নান মোল্লা এবং আখাউড়ার স্থানীয় বাসিন্দা মানব পাচারচক্রের সক্রিয় সদস্য নাঈম চৌধুরী। সূত্র বলছে, গ্রেফতার এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম-৬ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য। প্রভাবশালী শিল্পপতি এ নেতার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে শিক্ষার্থী হত্যা, ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম হত্যাসহ ১২টি মামলা রয়েছে। তার ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। সীমান্ত সূত্রের খবর, প্রভাবশালী এ নেতা প্রায় ২ কোটি টাকার বিনিময়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার রফাদফা করেন। 

এ প্রসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল ব্যাটালিয়ন ২৫ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ যুগান্তরকে বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে সাবেক সংসদ-সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীসহ তিনজনকে আটক করা হয়। ফজলে করিম চৌধুরীর কাছে টাকা, পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। কী পরিমাণ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তাকে ভারতে পাচার করা হচ্ছিল, তা সঠিক বলতে পারব না। আমরা থানায় সোপর্দ করেছি। নিশ্চয় তদন্তের মাধ্যমে তা বেরিয়ে আসবে। আমরা সীমান্তে অতিরিক্ত জনবলসহ টহল জোরদার করেছি। আমাদের জোয়ানরা সর্বদা সতর্কাবস্থানে রয়েছে।

৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল আহমদকে আটক করে বিজিবি। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। একই দিন কানাইঘাট দনা সীমান্তে ভারতে পালানোর সময় গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান ও লিয়াকত শেখ আটক হন। ২৮ আগস্ট একই সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর সময় আওয়ামী লীগ নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না বিএসএফের গুলিতে নিহত হন। এর আগে ৩১ আগস্ট ভারতে পালাতে গিয়ে সুন্দরবনে ভারতীয় অংশে আটক হন ১১ বাংলাদেশি। ভারতীয় গণমাধ্যমের সংবাদ, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হবে-এমন ভয়ভীতিতে জীবন বাঁচাতে এক দালালকে ৪৫ হাজার টাকার চুক্তিতে তাদের সীমান্ত পার করে দেবে-এমনটা বলে একটা জঙ্গলে ফেলে দিয়ে চলে যায় দালাল।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা সীমান্তের বেশ কয়েকজন যুগান্তরকে জানান, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর-সমর্থক নন-এমন ‘চক্রের’ সদস্যরা সীমান্ত পার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে প্রভাবশালীদের ধরিয়ে দিচ্ছেন। আবার নিজ দলের সমর্থকরাও অপরাধীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা, সোনা-গহনা নিয়ে সীমান্ত পার করে দিচ্ছেন। 

বিপ্লব কুমারের ভারতে পালানোর গুঞ্জন, অডিও ফাঁস : ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক যুগ্মকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে হঠাৎ করে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার চোরাকারবারিদের সহায়তায় তিনি দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ১১ সেপ্টেম্বর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাচারকারীদের এ সংক্রান্ত কয়েকটি কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্র্যাক ব্যাংকের পাটগ্রাম শাখার ব্যবস্থাপক পঙ্কজ কুমার মদন নামে এক ব্যক্তিকে পাটগ্রাম শহর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে আটক করা হয়।

এদিকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অর্থের বিনিময়ে ‘প্রভাবশালী’ বাংলাদেশিদের ভারতে আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায়ও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ২১ আগস্ট আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের অনলাইন সংস্কারণে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ থেকে ‘নিরাপদে’ ভারতে পৌঁছে দিতে একাধিক চক্র কাজ করছে। আশ্রয়প্রার্থী ব্যক্তির আর্থিক সংগতি ও সামাজিক পরিচিতি বুঝে টাকা নিচ্ছে চক্র। সংবাদে বলা হয়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ইতোমধ্যে চক্রের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে এবং বাকিদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান চলছে। 

প্রভাবশালীদের কাছ থেকে মাথাপিছু এক লাখ রুপি করে দর হাঁকানো হয়। এছাড়া তারা যতদিন ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ থাকবেন, ততদিন বিএসএফ এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের নজর এড়িয়ে থাকতে মাসে ১০ লাখ রুপি করে দিতে হবে। ৭ আগস্ট বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার বিজয়-পরবর্তী পরিস্থিতিতে কিছু দুর্নীতিবাজ ও দুষ্কৃতকারী ব্যক্তি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় কেউ যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে বিজিবির টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যাওয়া রোধে +৮৮০১৭৬৯-৬০০৬৮২ এবং +৮৮০১৭৬৯-৬২০৯৫৪ নম্বরে ফোন করে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার অনুরোধ জানায় বিজিবি। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সিলেট সীমান্ত দিয়ে আ.লীগের শতাধিক নেতাকর্মীর ভারতে পলায়ন : জনরোষ থেকে বাঁচতে ভারতে পালাতে গিয়ে সিলেটের দুটি সীমান্ত ব্যবহার করেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। সিলেটের কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়েই বেশির ভাগ নেতাকর্মী ভারতে যান। এসব সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পারাপারের সময় কেউ ধরা পড়েছেন আবার কেউ ভারতে ঢুকে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় সিলেটের গোয়াইনঘাটের মাতুরতল সীমান্ত এলাকা দিয়ে শতাধিক নেতাকর্মীকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তা করা হয়েছে। গোয়াইনঘাট ছাত্রলীগের সভাপতি সুফিয়ান ও সাধারণ সম্পাদক রাজীবের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মী এ সীমান্ত দিয়ে পাড়ি জমান। তারা নিজেরাও বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। 

এ তালিকায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সম্পাদক, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগর ছাত্রলীগের সম্পাদক নাঈমসহ প্রায় ৬০ জন নেতাকর্মী এ পথে ভারতে প্রবেশ করেন। সীমান্ত চোরাকারবারি দুলালসহ কয়েকজন তাদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন বলে জানিয়েছেন হাজীপুর, মাতুরতল এলাকার বাসিন্দারা। তারা জানিয়েছেন, ওই এলাকায় বিজিবি ক্যাম্প আক্রান্ত হওয়ার পর সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা কম ছিল। এ সুযোগে ওই এলাকা দিয়ে নেতাকর্মীরা ভারতে পালান। 

এছাড়া আসামপাড়া, সোনাটিলা দিয়েও নেতাকর্মীরা ভারতে প্রবেশ করেন। এসব নেতাকর্মী ভারতের কলকাতা, শিলং, গোয়াহাটিতে অবস্থান করছেন। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি আওয়ামী লীগ নেতারা সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন কানাইঘাটের ডোনা ও সুরইঘাট এলাকার সনাতনপুঞ্জি সীমান্ত দিয়ে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুরইঘাট এলাকার সনাতনপুঞ্জি দিয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ-সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ-সদস্য অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ ও বিধান কুমার সাহা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান এবং সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু। এর আগে এ সীমান্ত দিয়েই ভারতে পৌঁছান সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। এসব নেতার মধ্যে বর্তমানে অনেকেই ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন বলে ঘনিষ্ঠজনরা নিশ্চিত করেছেন। 

এছাড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সংসদ-সদস্য রণজিৎ সরকার, বিধান কুমার সাহা, আওয়ামী লীগ নেতা এম হান্নান ওরফে মুরগী হান্নান ইতোমধ্যে লন্ডনে পৌঁছেছেন বলে যুক্তরাজ্য থেকে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছেন বড় নেতারা : জনরোষ থেকে বাঁচতে রাজশাহী অঞ্চলের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দ্রুত সময়ে আত্মগোপনের চেষ্টা করেন কাছাকাছি গোপন স্থানে। অনেকেই বাসাবাড়িতে না ফিরে এক কাপড়েই পদ্মা পাড়ি দিয়ে সীমান্ত এলাকায় চলে যান। রাজশাহী অঞ্চলের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশই সীমান্তপথে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। 

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ৫ আগস্ট দুপুর আড়াইটার দিকে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নগরীর কুমারপাড়া দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলেন। তখনও তিনি জানতেন না শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতের পথে রয়েছেন। 

কয়েকজন নেতাকর্মী টিভি চ্যানেলের খবর দেখে তাকে দ্রুত সরে যাওয়ার জন্য বলেন। সূত্রগুলো জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় লিটন প্রথমে রাজশাহী উপশহরের নিরাপদ এলাকার ভবনে আশ্রয় নেন। সেই রাতেই বিশেষ ব্যবস্থায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তপথে ভারতে চলে যান। লিটনের সহধর্মিণী শাহীন আকতার রেণি ও ছোট মেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রেয়া জামান ৪ আগস্ট ভারতে চলে যান। বড় মেয়ে ডা. আনিকা ফারিহা জামান ও জামাতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজভি আহমেদ ভুঁইয়া জুলাইয়ের মাঝামাঝি ব্যাংকক যান। 

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী ৫ আগস্ট বিকাল ৩টা পর্যন্ত নিউমার্কেট এলাকায় থিম ওমর প্লাজার বাসভবনে ছিলেন। এরপর তাকে প্রকাশ্যে আর দেখা যায়নি। রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ও সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ দারা ৫ আগস্ট রাতে লালমনিরহাট সীমান্তপথে ভারতে চলে যান বলে বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়। 

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আবুল কালাম আজাদও উত্তরের কোনো সীমান্তপথে ভারত চলে গেছেন বলে সূত্রগুলো থেকে বলা হয়েছে। তারা সীমান্তের দালালচক্রের মাধ্যমে একে একে ভারতে চলে যান। মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনিসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অনেকেই রাজশাহী সীমান্তপথে ভারতে গেছেন। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের অনেক এলাকায় এখনো কাঁটাতারের বেড়া নেই। ফলে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে নেতাকর্মীরা সীমান্ত পার হয়ে ভারতে যেতে পেরেছেন বলে এলাকার সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে। 

নওগাঁ-১ (সাপাহার-পোরশা-নিয়ামতপুর) এলাকার সাবেক সংসদ-সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ৬ আগস্ট কোনো একসময় হিলি সীমান্তপথে ভারতে চলে গেছেন বলে এলাকার সূত্রগুলো থেকে বলা হয়েছে। 

কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে যাচ্ছেন দুর্নীতিবাজরা : কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে দেশত্যাগ করছেন দুর্নীতিবাজরা। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রতিদিনই কুমিল্লা সীমান্তের ১০-১২টি পয়েন্ট দিয়ে পালিয়ে ভারত চলে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, দুর্নীতিবাজ, স্পর্শকাতর মামলার আসামিসহ পুলিশের তালিকাভুক্তরা। এক্ষেত্রে জেলার আদর্শ সদর, বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তের ১০-১২টি পয়েন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। 

এদিকে শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের সীমান্ত পার করিয়ে দালাল সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও বহু দুর্নীতিবাজ একই সীমান্ত ব্যবহার করে দেশত্যাগ করেছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দালাল সিন্ডিকেটের একটি সূত্র বলছে, এরই মাঝে ২০-২৫ সাবেক সংসদ-সদস্য, একাধিক সাবেক মন্ত্রী, বেশকিছু আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সিবিএ নেতা কুমিল্লা নগরীসহ আশপাশের এলাকায় আত্মগোপনে থেকে ভারতে পারি দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

স্থানীয়রা জানান, ইতঃপূর্বে সীমান্তের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার তেতাভূমি দিয়ে শশীদল ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্যের মাধ্যমে কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, তার মেয়ে অপসারিত কুসিক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা ভারত পাড়ি দিয়েছেন। একই এলাকা দিয়ে ভারত পালিয়েছেন মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, আদর্শ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, ভাইস চেয়ারম্যান নিয়াজ মাহমুদ পাভেলসহ নগরীর অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। 

শশীদল সীমান্ত দিয়ে ভারত পালিয়েছেন কুমিল্লা-৫ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মো. আবু জাহের। বুড়িচং উপজেলার খারেরা সীমান্ত দিয়ে দেশত্যাগ করেন সাবেক এলজিআরডিমন্ত্রী তাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত সহকারী দুদকের মামলার আসামি শীর্ষ দুর্নীতিবাজ কামাল হোসেন, লাকসাম উপজেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান মহব্বত আলীসহ অনেকেই। ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি এসএম আতিকুল্লাহ বলেন, সীমান্ত এলাকার আশপাশের গ্রামগুলোয় টহল জোরদার করা হয়েছে। বিজিবির ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এএম জাবের বিন জব্বার বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্বরত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছি। 

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : সীমান্তপথে ভারতে পালাতে গিয়ে বিজিবির হাতে আটক হয়েছেন চট্টগ্রামের রাউজানের সাবেক সংসদ-সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী। বৃহস্পতিবার সকালে আখাউড়া সীমান্তপথে দালালের মাধ্যমে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে টহল জওয়ানদের হাতে আটক হন তিনি। সম্প্রতি ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর ব্যক্তিগত সহকারী ফরিদ ওরফে পিএস মানিককে আটক করে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুলিশ। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্তকে ভারতে প্রবেশ করতে দেয়নি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। 

সরাইল ব্যাটালিয়নের (২৫ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ যুগান্তরকে বলেন, সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন সীমান্তপথে অবৈধভাবে ভারত পালানোর সময় অন্তত ৩৩ জনকে আটক করেছে বিজিবি। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তবর্তী উপজেলা বাংলাদেশের আখাউড়া। সীমান্ত পার হলেই ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা শহর। আর শহর থেকে খুব কাছেই আগরতলা বিমানবন্দর ও রেলওয়ে স্টেশন। 

তাছাড়া দেশের অন্যান্য সীমান্তের চেয়ে এ সীমান্ত অনেকটা নিরাপদ। তাই আখাউড়া সীমান্তপথে অবৈধ পারাপার দিনদিন বেড়ে চলছে। মাথাপিছু ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে থাকে দালালচক্রের সদস্যরা। ওই টাকা থেকে ভারতীয় দালাল নিয়ে থাকে জনপ্রতি ১ হাজার ৫০০ টাকা, দালালের বাড়ি থেকে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার করে দেওয়ার লেবার পেয়ে থাকে ৫০০ টাকা। প্রশাসন ও স্থানীয় নেতাদের জন্য বরাদ্দ ১ হাজার টাকা। এতে একজনকে ওপারে পাঠাতে খরচ হয় ৩ হাজার টাকা। প্রতিদিন শতাধিক লোক সীমান্ত দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ পারাপার হয়। 

বেনাপোল সীমান্তে সতর্কাবস্থায় পুলিশ-বিজিবি : সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি বা দলীয় নেতাকর্মীরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য যশোরের বেনাপোল ইমিগ্রেশন ও বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় পুলিশ ও বিজিবিকে এখনো সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। বিজিবি সূত্র জানায়, অনেক অপরাধীর ভারতে পালানোর আশঙ্কা রয়েছে। তবে তারা কোনোভাবেই যাতে ভারতে পালাতে না পারে, সেজন্য সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সতর্কতা জারি করেছে। ২৩ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লবকে (৩৫) আটক করেন আইসিপি ক্যাম্পের (৪৯ বিজিবি) সদস্যরা। ভারতগামী প্রত্যেক যাত্রীর পাসপোর্ট সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। কেউ যাতে অবৈধ পথে ভারতে পালাতে না পারে, সেজন্য সতর্কতা জারি করেছে ৪৯ ও ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন। বেনাপোল বন্দর ও রেলপথে বাড়ানো হয়েছে বিজিবির নজরদারি।

হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার বৃদ্ধি : দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩২০ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারতে যাতায়াত করছেন। তবে কেউ যেন অবৈধ পথে ভারতে প্রবেশ না করতে পারেন, সেজন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। কেউ যেন তথ্য গোপন করে ভারতে পালাতে না পারেন, সেই লক্ষ্যে ইমিগ্রেশন পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। জয়পুরহাট ২০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল নাহিদ নেওয়াজ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমান্তে অবৈধ, চোরাচালান থেকে শুরু করে যে কোনো সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে কেউ যেন ভারতে প্রবেশ করতে না পারে, এ বিষয়ে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারিসহ লোকজন বৃদ্ধি করেছি। 

চুনারুঘাট সীমান্তে কড়া টহলে বিজিবি : হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ৪৯ কিলোমিটার সীমান্তে কড়া টহলে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। ৮ আগস্ট থেকে উপজেলার সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়। তবে সীমান্ত এলাকায় পাচারকারীরাও রয়েছে সুযোগের অপেক্ষায়। যদিও উপজেলার পাহাড়ি এলাকার অধিকাংশ সীমান্ত দিয়ে এখনো কোনো অপরাধী পারাপারের খবর পাওয়া যায়নি। তবে উপজেলার অধিকাংশ সীমান্ত রেমা কালেঙ্গা পাহাড় ও চা বাগানঘেরা হওয়ায় ঝুঁকি রয়েছে। যে কোনো সময় অপরাধীরা স্থানীয় দালালের মাধ্যমে পারাপার হতে পারে। যদিও বিজিবি তা উড়িয়ে দিয়েছে। বাল্লা বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার দাউদ হোসেন বলেন, আমরা সব সময়ই সীমান্তে সতর্ক রয়েছি। নতুন নির্দেশনায় সীমান্তে টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। প্রতি ৬ ঘণ্টা পর টহল পরিবর্তন হয়ে নতুন টহল দল যাচ্ছে সীমান্তে।

ভোমরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন : সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্ত দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ভারতে পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন কিছুতেই কমছে না। ভোমরা বন্দর ব্যতীত সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, দেবহাটা, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার স্থলপথ ও জলপথে স্থানীয় পাচারকারীদের সহায়তায় অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার অভিযোগ আছে। দালালদের সহায়তায় ভারতে পাড়ি জমানোর জন্য অনেকে সীমান্তের আশপাশে অবস্থান করছে বলে সূত্র জানিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা লুৎফর আলী জানান, সন্ধ্যার পর থেকে অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন গাড়িতে করে অপরিচিত লোকদের আনাগোনা দেখা যায়। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরার ভোমরা ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারত যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগ নেতাসহ দুজনকে আটক করেছে বিজিবি। তারা হলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ক্যাশিয়ার নীরব হোসেন ওরফে খোড়া টুটুল এবং খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের ক্যাশিয়ার আমজাদ হোসেন। এছাড়াও ভোমরা স্থলবন্দর সীমান্তের আইসিপি দিয়ে ভারতে পালানোর সময় খুলনার রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চঞ্চল কুমার মিত্রকে ২৬ আগস্ট বিকালে আটক করে বিজিবি।

কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর তথ্য নেই : কুড়িগ্রাম জেলার ২ শতাধিক কিমি. এলাকার সীমান্তপথে ভারতে পালানোর তথ্য বিজিবির কাছে নেই। এই সীমান্তপথ দেখভাল করে কুড়িগ্রাম ও জামালপুর বিজিবি। সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল জোরদার রয়েছে। 

ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রীসহ তিন এমপি : ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ফুলপুর-তারাকান্দা আসনের সংসদ-সদস্য শরিফ আহমেদ, গফরগাঁও আসনের সংসদ-সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল এবং ময়মনসিংহ সদর আসনের সংসদ-সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত। বোম্বে প্রবাসী উপজেলার দড়িপাড়া গ্রামের জুলমত আলীর ছেলে রুহুল আমিন ১৫ লাখ টাকার চুক্তিতে তাদের ভারতে নিয়ে যান। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, গামারীতলা ইউনিয়নের দড়িপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জুলমত আলীর এক ছেলে রুহুল আমিন প্রায় ১২ বছর ভারতের মুম্বাইয়ে বসবাস করেন। জুলমত আলীর বাড়ির প্রতিবেশীরা জানান, ৬ আগস্ট রাত আনুমানিক ১টায় একটি প্রাইভেট কারে করে তিনজন লোক জুলমত আলীর বাড়িতে আসেন। ৭ আগস্ট সারা দিন তারা এই বাড়িতেই ছিলেন। ৮ আগস্ট ভোরে তারা মুন্সিপাড়া বিজিবি ক্যাম্পের সামনে দিয়ে কড়ইগড়া সীমান্ত দিয়ে বর্ডার ক্রস করেন।

দামুড়হুদা সীমান্তে অর্থের বিনিময়ে পারাপার : চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা সীমান্ত দিয়ে অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীকে ভারতে পাঠানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সীমান্তের একটি সূত্রে জানা যায়, সীমান্তের দর্শনা, নাস্তিপুর, কামারপাড়া, বারাদী, ফুলবাড়ী, চাকুলিয়া, ঠাকুরপুর ও মুন্সিপুর সীমান্ত দিয়ে ৫ আগস্ট থেকে মাঝেমধ্যেই রাতে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভারতে পাঠাচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে ১-২ লাখ টাকা নেওয়ার খবর জানা গেছে। ৭ আগস্ট দর্শনা সীমান্ত চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজব আলীসহ দুজনকে আটক করে বিজিবি।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম