Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টি, ডুবল শহর

কক্সবাজারে পাহাড় ধসে দুই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু

বরিশালে জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ * সাগরে নিম্নচাপ, চার বন্দরে তিন নম্বর সতর্কতা * হাতিয়ার মাছ ধরার ট্রলার ডুবে নিখোঁজ ২৫

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কক্সবাজারে পাহাড় ধসে দুই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু

ভারি বর্ষণের কারণে কক্সবাজার সদর ও উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে দুই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নে একই পরিবারের তিনজন ও উখিয়ার ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একই পরিবারের তিনজন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এই পাহাড় ধসে আরও একজন আহত হয়েছেন। জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে একদিনে সর্বোচ্চ। এতে কক্সবাজার শহরের ৯০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। একই দিন বরিশালেও দিনভর বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা। 

শুক্রবার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ফলে উপকূলে ঝড়ের আশঙ্কায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় নোয়াখালীর হাতিয়ার মেঘনা নদীতে চারটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে ২৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধির পাঠানো খবর-

কক্সবাজার : স্থানীয়রা জানান, কক্সবাজার সদর উপজেলার দক্ষিণ ডিককুলে শুক্রবার রাত ২টার দিকে ভারি বৃষ্টির সময় মিজানের বাড়ির দিকে পাহাড়ধসের বিকট শব্দ শুনতে পান তারা। সেখানে গিয়ে দেখেন, মিজানের বাড়ি মাটিচাপা পড়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে মিজানকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের সহযোগিতায় সেখান থেকে তার স্ত্রী আঁখি মনি এবং তার দুই শিশুকন্যা মিহা জান্নাত নাঈমা ও লতিফা ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয়। 

স্বজনদের মতে, মিজানের বাড়িটি পাহাড়ের পাদদেশে ছিল। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে ভারি বৃষ্টির কারণে মাটি নরম হয়ে যায়, এবং মধ্যরাতে পাহাড় ধসে তার বাড়িটি চাপা পড়ে।

অন্যদিকে, কক্সবাজার ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নয়ন জানান, ভারি বর্ষণের ফলে উখিয়ার ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে তিনটি ঘর বিধ্বস্ত হয়, এতে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন-ক্যাম্পের ই-২ ব্লকের কবির আহমেদের ছেলে আব্দুর রহিম, আব্দুল হাফেজ ও আব্দুল ওয়াহেদ।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, পাহাড় ধসে তিনজন রোহিঙ্গাসহ মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকালে ঝিলংজা এলাকায় নিহত তিনজনের পরিবারকে ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের সরিয়ে আনছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চারটি টিম কাজ করছে।

এদিকে জেলায় বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টা থেকে শুক্রবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রবল বৃষ্টির কারণে শহরের ৯০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রধান সড়কসহ প্রায় ৩৫টি উপসড়ক ডুবে যাওয়ায় শত শত দোকানের মালামাল নষ্ট হয়েছে। হাজারো বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে শহরের প্রায় আট লাখ বাসিন্দার জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। হোটেল-মোটেল জোনের ১৮টি রাস্তা জলাবদ্ধতায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কয়েক হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, ভারি বর্ষণ হলেই হোটেল-মোটেল জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়, যা পর্যটকদের দুর্ভোগ বাড়ায় এবং ব্যবসায়িক ক্ষতি করে। পাহাড় কাটার ফলে নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি দ্রুত সাগর বা নদীতে নামতে পারছে না, যার ফলে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।

শহরের ৮০ বছর বয়সি সিএনজি চালক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, গত ৫০ বছরে আমি এমন ভারি বৃষ্টি দেখিনি। কক্সবাজারে এমন জলাবদ্ধতাও দেখিনি। 

বরিশাল : শুক্রবার দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টিতে নগরীর নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। হাতেগোনা কয়েকটি প্রধান সড়ক বাদে অলিগলিসহ অধিকাংশ সড়কে পানি জমে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। সড়ক বিপজ্জনক হওয়ায় যাত্রী, যানচালক ও পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন।

 সরেজমিন দেখা যায়, নগরের পলাশপুর, হাটখোলা সড়ক, অক্সফোর্ড মিশন রোড, বিএম স্কুল লেন, নথুল্লাবাদ থেকে মধুমিয়ার পুল হয়ে মড়কখোলার পুল পর্যন্ত সড়ক, কাউনিয়া হাউজিং সংলগ্ন সড়ক ও থানার গলি, শ্রীনাথ চ্যাটার্জী লেন, টিয়াখালি সড়ক, প্যারারা রোড, নিউ সার্কুলার রোড, সাগরদী জিয়ানগরসহ বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া কলেজ অ্যভিনিউ, রূপাতলী হাউজিং, বেলতলা, বৌবাজার, রসুলপুর, মোহাম্মদপুর, চরআবদানীসহ বরিশাল সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। 

কলেজ অ্যাভিনিউর বাসিন্দা মোতালেব মিয়া বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই এই সড়কে হাঁটু পানি হয়। রসুলপুরের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি ঢুকে যায়। চরম কষ্টে দিন পার করছি। বরিশাল সচেতন নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, জলাবদ্ধতা বরিশাল নগরীর স্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যা থেকে চির মুক্তি পেতে বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা জরুরি।

রাঙ্গাবালী ও পায়রা বন্দর : শুক্রবার সকাল থেকে দিনভর উপকূলীয় রাঙ্গাবালী ও পায়রা বন্দর এলাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। কখনো গুড়িগুড়ি, কখনো হালকা থেকে মাঝারি আকারে বৃষ্টি ঝরে। বয়েছে মৃদু দমকা বাতাস। আকাশও ছিল মেঘাচ্ছন্ন। নদ-নদীর অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও সাগর উত্তাল ছিল। আবহাওয়া অফিস বলছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে হবে। 

নোয়াখালী : ডুবে যাওয়া ট্রলারগুলোর মধ্যে-জানু মাঝির ১টি, দেলোয়ার মাঝির ১টি, হেলাল মাঝির ১টি ও বাবর মাঝির ১টি রয়েছে। শুক্রবার বিকালে উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বুড়ির দোনা ঘাট এলাকার মেঘনা নদীতে এই ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের ধারণা এতে ২৫ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক নিখোঁজ জেলেদের নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি। 

স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজ আলম বলেন, সাগর উত্তাল থাকায় বিকাল ৫টার দিকে মাছ ধরার ট্রলারগুলো ঘাটে ফিরতে শুরু করে। যাত্রাপথে বৈরী আবহাওয়ায় কবলে পড়ে চারটি মাছ ধরা ট্রলার ডুবে যায়। পরে পাশে থাকা মাছ ধরার অন্য ট্রলারগুলো ৮-১০ জেলেকে উদ্ধার করে। এ সময় জেলেদের মাছ ধরার জাল ট্রলারসহ নদীতে তলিয়ে যায়। দুর্ঘটনায় দেলোয়ার মাঝি গুরুতর আহত হয়েছে।  

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিসান আহমেদ বলেন, মাছ ধরার ট্রলারডুবির বিষয়টি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম