Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

গুম প্রতিরোধ দিবসে জানতে চান স্বজনরা 

প্রিয়জন জীবিত না মৃত

গুম শব্দটি চিরদিনের জন্য বিদায় করতে হবে * দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘আয়নাঘর’ রয়েছে : মান্না * সব গুম-খুনের ন্যায়বিচার চাই : মাইকেল

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন 

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রিয়জন জীবিত না মৃত

শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরে যারা গুমের শিকার হয়েছেন, তারা জীবিত নাকি মৃত, সেই তথ্য অবিলম্বে জানতে চান তাদের স্বজনরা। এছাড়া তারা গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেছেন। 

শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের প্ল্যাটফর্ম ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এ দাবি জানান। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে অংশ নেন মানবাধিকারকর্মী, রাজনীতিক, আইনজীবী ও নিখোঁজদের স্বজনরা। মানববন্ধনে তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধেরও দাবি জানান।

মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যান। অবশিষ্ট অপশক্তিগুলো এখনো দেশে অবস্থান করছে। কিন্তু গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের তথ্য এখনো পরিবারগুলো জানে না। এ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমাদের সৌভাগ্য যে আয়নাঘর থেকে মাইকেল চাকমা ফিরতে পেরেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত অনেকেই ফিরে আসেননি। কেবল ঢাকায়ই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘আয়নাঘর’ রয়েছে। 

৫ আগস্টের পর নতুনভাবে যে জাগরণ তৈরি হয়েছে, একে অনেকেই স্বাধীনতা বলে আখ্যায়িত করছেন। কিন্তু এমন সময়েও যদি স্বজনহারা ব্যক্তিরা তাদের স্বজনদের ফিরে না পান, তাহলে সেই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আবেদন থাকবে, দ্রুততম সময়ে স্বজনদের কাছে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দিন। তিনি আরও বলেন, দুঃখ হয়, যখন আমরা গুম হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে কথা বলে আসছি; তখন মন্ত্রীরা বলতেন ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিদেরও নাকি আমরা গুম হওয়া হিসাবে বিবেচনা করছি। গণমাধ্যমের কাছে অনুরোধ থাকবে, বিগত সময় থেকে শুরু করে আপনাদের কাছে গুম হওয়ার যত খবর আছে, সব প্রকাশ করুন। 

নিখোঁজ অনেকেই ফিরে এসে ‘আয়নাঘর’ নামক গোপন কারাগারে বন্দি ছিলেন বলে দাবি করেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে এখনো চুপ আছে। তাই দ্রুত এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণাসহ শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান মান্না। তিনি আরও বলেন, জুলাইয়ে কত মানুষ মারা গেছে? হয়তো হাজারেরও বেশি। আমরা বলতে চাই, তাদের হত্যার বিচার করতে হবে। 

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, গুম শব্দ নেই বলে বিচার করা যাবে না, এটা সঠিক নয়। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের মুখ বন্ধ ছিল। আদালত এ ব্যাপারে নীরবতা পালন করেছে। কোনো হস্তক্ষেপ আমরা দেখিনি।

গুমের বন্দিদশা থেকে ফিরে আসা মাইকেল চাকমা বলেন, ২০১৯ সালে ঢাকার কল্যাণপুর থেকে আমাকে সাদা পোশাকধারী সাতজন উঠিয়ে নিয়ে যায়। শেখ হাসিনার পতনের পর আমাকে আমার এলাকার একটি জায়গায় ছেড়ে দিয়ে আসে। শেখ হাসিনা এ গুমের মাধ্যমে আমাদের এ ভয় দেখিয়েছিলেন। সরকার ইচ্ছা করলে মাসের পর মাস গুম করে রাখতে পারে। আমরা সব গুম-খুনের ন্যায়বিচার চাই। দেশে আয়নাঘর নামে যেসব বন্দিশালা আছে, এগুলো বন্ধ করতে হবে। লেখক-কবি-শিল্পীসহ সবাই এসবের বিরুদ্ধে না দাঁড়ালে তা বন্ধ হবে না।

বিকালে ‘মায়ের ডাকের’ আয়োজনে ‘গুম জান ও জবান’ নামের প্রদর্শনী শুরু হয়েছে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে। সেখানে বিভিন্ন পরিবারের নানা গল্প ফুটে উঠেছে আলোকচিত্রীর ছবিতে। একটি ছবিতে দেখা যায় সিসিটিভি ফুটেজে সাদা প্রাইভেট কারে মানুষ তুলে নেওয়ার দৃশ্য। আরেক ছবিতে দেখা যায় ভারাক্রান্ত চেহারায় ছেলের ছবি হাতে অসুস্থ মায়ের অপেক্ষার দৃশ্য। এমন নানা গল্পের সমাহার ঘটানো হয়েছে আলোকচিত্রে। আছে তাদের প্রতিবাদের চিত্র, গণমাধ্যমে তাদের নিয়ে খবরও। ২-৩ বছর ধরে এ ছবিগুলো তুলেছেন আলোকচিত্রী মুশফিকুর রহমান জোহান। 

প্রদর্শনীর কিউরেটর সরকার প্রতীক বলেন, ‘আমরা আশা করিনি যে এ গল্পগুলো কোনোদিন আমরা জনগণের সামনে বলতে পারব। কিন্তু এ নতুন বাস্তবতায় নতুন বাংলাদেশে এ কাজগুলো প্রদর্শনের সুযোগ হলো। আমরা আশা করি, আমাদের এ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আরও অনেকে তাদের গল্প বলতে অনুপ্রাণিত হবেন।’ 

প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বন, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘একটা সভ্যদেশে গুম নিয়ে কথা বলতে হয়। একটা স্বাধীন দেশে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছে স্বাধীনতার জন্য। সে দেশে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে গুম নিয়ে কথা বলতে হয়। আর যেন গুম নিয়ে কথা বলতে না হয়, এ কারণে গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষর করেছে। গুমের কোনো ন্যায্যতা অন্যায্যতা নেই। প্রথম থেকেই এটা অন্যায্য বিষয়। গুম হওয়া প্রত্যেক ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে আমাদের সদিচ্ছার কোনো অভাব থাকবে না। অন্তত যারা গুমের বিষয়ে জড়িত ছিলেন, তাদের যেন বিচারের মুখোমুখি করা যায়, এটুকু আশা করা তো একটা সভ্যদেশে বেশি আশা করা না। আর যেন কোনো সরকার তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে আয়নাঘর সৃষ্টি করতে না পারে, সেটা করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’ 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, আমরা ছাত্রদের আন্দোলনের মাধ্যমে একটা পরিবর্তন দেখছি। কিন্তু মায়ের ডাকের শিশুদের কান্না, শিশুদের বক্তব্য, পরিবারের লোকদের বক্তব্য ফুটিয়ে তুলেছে কী পরিমাণ নিষ্ঠুর তারা ছিল, কী পরিমাণ মানুষকে কষ্ট দিয়েছে তারা। এটা মায়ের ডাকের অনুষ্ঠান থেকে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম। আজ আমাদের কাজ আনন্দ করা না, যাদের হারিয়েছি, তাদের ফিরিয়ে আনা।’ 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম প্রমুখ। এ প্রদর্শনী চলবে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম