নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত
এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে পাঁচ সদস্যের নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকের তিনজন শেয়ারহোল্ডার ও দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নতুন পরিচালকরা আজ-কালের মধ্যেই সভা করে চেয়ারম্যান মনোনীত করবেন। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে একটি চিঠি এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠির আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এমডিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের কথা বৃহস্পতিবারই ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট সরকারের পতন হওয়ার পর নজরুল ইসলাম মজুমদার আর ব্যাংকে আসেননি। কোনো পর্ষদ সভাও করেননি। আগের ধারাবাহিকতায় ব্যাংকটি পরিচালনা করছে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক হিসাবে নতুন করে যাদের নিয়োগ দিয়েছে তারা হলেন, ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার মো. নুরুল আমিন, নজরুল ইসলাম স্বপন ও অঞ্জন কুমার সাহা। তারা এক-দুজন আগেও বিভিন্ন সময়ে পর্ষদে ছিলেন। স্বতন্ত্র পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এসএম রেজাউল করিম ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট খন্দকার মামুনকে।
নতুন নিয়োগ পাওয়া পাঁচ পরিচালক বৈঠক করে তাদের মধ্য থেকে একজনকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনোনীত করবেন। সাধারণত শেয়ারহোল্ডার থেকেই চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। এ হিসাবে তিন শেয়ারহোল্ডারের মধ্য থেকেই একজনকে পরবর্তী চেয়ারম্যান মনোনীত করা হবে। আজ-কালের মধ্যেই ব্যাংকের নতুন পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতের জন্য জনস্বার্থে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ক্ষমতাবলে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ বা এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হলো।
সূত্র জানায়, ২০০৭ সাল থেকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। একই সঙ্গে তিনি প্রায় ১৫ বছর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। নানা প্রক্রিয়ায় এবং আইনের ফাঁক গলিয়ে তিনি ওইসব পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার সময়ে ব্যাংকে বেশকিছু অনিয়ম হয়েছে।
বেনামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার প্রমাণও পাওয়া গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে। ওইসব ঋণ এখন খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক থেকে নজরুল ইসলাম মজুমদারের মালিকানাধীন নাসা গ্রুপের নামে-বেনামে মোটা অঙ্কের ঋণ রয়েছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন। ১৫ বছরে ব্যাংকটি বিশদভাবে কোনো পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
এখন ব্যাংকটি বিশদ পরিদর্শন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অচিরেই এর কাজ শুরু হবে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ নেওয়াসহ এলসি খোলা ও রপ্তানি পণ্যের মূল্য দেশে না আনার বিষয়টিকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
জানা যায়, এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানির এলসি খুলে দেনা পরিশোধ করার পরও পণ্য দেশে আসেনি। একই সঙ্গে যেসব পণ্য ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি করা হয়েছে, সেগুলোর বেশকিছু চালানের মূল্যও দেশে আসেনি।
বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে উদ্যোক্তাদের সুবিধা বাড়ানো এবং নীতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন নজরুল ইসলাম মজমুদার। ব্যাংক পরিচালকদের মেয়াদ ১২ বছর করা, একই পরিবার থেকে তিনজন সদস্য একই সময়ে পর্ষদে থাকার বিধান করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি।
সম্প্রতি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়ায় নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন পর্যন্ত সাতটি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক বা ইউসিবি ও এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে প্রথম পাঁচটি ব্যাংকই এ খাতের আলোচিত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল।