বন্যার আরও উন্নতি
আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরছে মানুষ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। তবে বন্যায় অনেকের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘরের নানা সরঞ্জাম পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।
অনেক এলাকায় টিউবওয়েল ডুবে আছে। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে এখনো সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে দুর্গত বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আরও অনেক সময় লাগবে। এদিকে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও কুমিল্লার নিচু এলাকা এখনো পানিতে তলিয়ে আছে।
এসব স্থানে মানুষ খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে কষ্ট করছেন। তাছাড়া বন্যার্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক মানুষ এক সপ্তাহ ধরে ভাত খেতে পারেননি। তারা দিনের পর দিন শুকনো খাবার খেয়েও ক্লান্ত। অনেকের কাছে চাল-ডাল থাকলেও জ্বালানি সংকটের কারণে রান্না করতে পারছেন না।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী রেজা বলেছেন, দেশে চলমান বন্যায় ১১ জেলায় ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৩৯ জন পুরুষ, ৬ জন নারী ও ৭ শিশু রয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় ১৪ জন, ফেনীতে ১৭ জন, চট্টগ্রামে ৬ জন, খাগড়াছড়িতে ১ জন, নোয়াখালীতে ৮ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১ জন, কক্সবাজারে ৩ জন ও মৌলভীবাজারে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া মৌলভীবাজারে একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
তিনি জানান, ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য মোট ৫৯৫টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। বন্যাউপদ্রুত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর, রায়পুর, কমলনগর ও রামগতি : জেলা সদরের পশ্চিম জামিরতলি গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহিম ও জয়নাল আবেদিন জানান, তাদের এলাকার টিউবওয়েলগুলো এখনো পানির নিচে। ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকেই বাজার থেকে পানি কিনে খাচ্ছেন। কারণ ত্রাণের সঙ্গে দেওয়া পানিতে তাদের প্রয়োজন মিটছে না।
কমলনগরের চরকাদিরা ও তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের পুরোটাই এখনো পানির নিচে। এতে পানিবন্দি অন্তত ২০ হাজারের বেশি মানুষ। ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করলেও এসব এলাকার বহু বসতঘর, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডুবে আছে। তলিয়ে আছে আমন ধানের বীজতলা, শাকসবজির মাঠ ও রাস্তাঘাট। বন্যার্ত এলাকাগুলোতে প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে রামগতির চরপোড়াগাছা, চরবাদাম, কমলনগরের চরকাদিরা ইউনিয়নের চরবসু, বাদামতলা, বটতলা, পাটোয়ারীপাড়া এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ভুলুয়া নদীর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পানি সরতে পারছে না। সে কারণে এখনো ওইসব এলাকা পানির নিচে ডুবে আছে। এমন পরিস্থিতিতে এখানকার পানিবন্দি বাসিন্দারা চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলায় উল্লেখযোগ্যভাবে পানি কমেছে।
কুমিল্লা : ব্রাহ্মণপাড়ায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বুড়িচং, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, তিতাস, হোমনা, দাউদকান্দিতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। অতিদ্রুত পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা না হলে মানুষের মাঝে রোগবালাই দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের নাঙ্গলকোট মনোহরগঞ্জ ও চৌদ্দগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
ব্রাহ্মণপাড়ার মালাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল বলেন, এক সপ্তাহ ধরে আমরা ভাত খেতে পারছি না। চাল-ডাল তেল থাকলেও গ্যাসের সিলিন্ডার ও চুলার ব্যবস্থা না থাকায় রান্নাবান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। ঘরের ভেতরে খাট ও মাচা বানিয়ে বাড়িঘর পাহারা দিচ্ছি। চিঁড়া-মুড়ি ও বিস্কুট খেয়েই পরিবারের সব সদস্য দিন কাটাচ্ছি। বুড়িচং উপজেলার খোদাইতলী এলাকার বাসিন্দা ওসমান গনি বলেন, আমাদের এলাকায় ত্রাণের কোনো নৌকা আসছে না। অনেক দূরে সাঁতরে গিয়ে ত্রাণ এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী আনতে হয়।
ফেনী : ফেনী জেনারেল হাসপাতালে একদিনে সাপে কাটা ১৫০ রোগী ভর্তি হয়েছে। বেড়েছে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা। সাপে কাটা এক রোগীর স্বজন দিদারুল ইসলাম অভিযোগ করেন, হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আসার পর জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক বলেন, এটা নাই, ওটা নাই।
এ বিষয়ে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোবারক হোসেন দুলাল বলেন, আকস্মিক বন্যায় জরুরি বিভাগসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কক্ষগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
নোয়াখালী ও কোম্পানীগঞ্জ : বৃস্পতিবার বিভিন্ন দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার রাজগঞ্জ, ছয়ানী, আলাইয়ারপুর, আমানউল্লাহপুর, জিরতলী, গোপালপুর, আমিশাপাড়া, নোনা, বজরা, সোনাইমুড়ী, জয়ার, খিলপাড়া, সাহাপুর, রাজনারায়ণপুর ইউনিয়নসহ চাটখিল, সোনাইমুড়ী, বেগমগঞ্জ, সদর পশ্চিম অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তবে জেলার অন্য সব এলাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, বন্যায় প্রাণিসম্পদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সদর উপজেলায়। এখন পর্যন্ত বন্যার পানিতে মারা গেছে প্রায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩১৪টি গৃহপালিত পশু। এছাড়া জেলার ১০৮টি গরুর খামার নষ্ট হয়েছে।
খাগড়াছড়ি : বৃহস্পতিবার সকালে দীঘিনালা উপজেলার বোয়ালখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার্ত মানুষের মাঝে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর দীঘিনালা জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল ওমর ফারুক, ৫ ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সের লে. কর্নেল রাকিবুল ইসলাম, গাইনি চিকিৎসক লে. কর্নেল ডা. সেতারা প্রমুখ।