হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার আরও ৩ অভিযোগ
পুনর্গঠন হচ্ছে ট্রাইব্যুনাল
আলমগীর হোসেন
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০৩ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের আরও তিনটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এ নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থায় মোট ৭টি অভিযোগ দায়ের হলো। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় পৃথক আবেদন করেন চট্টগ্রামের শহিদ ফয়সাল আহমেদ শান্ত, ঢাকার মিরপুরে নিহত আসিফ ইকবাল ও শেখ শাহরিয়ার বিন মতিনের পরিবার। এদিকে বেশকিছু দিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে ট্রাইব্যুনালের একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্রমতে, ট্রাইব্যুনালের পুনর্গঠনের সঙ্গে প্রসিকিউশন টিমও গঠন করা হবে। সম্প্রতি প্রসিকিউশনের ১৩ সদস্য পদত্যাগ করায় বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে এখন কোনো প্রসিকিউটর নেই। ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ২৯ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় ৪২ জন আসামি কারাগারে রয়েছেন।
আবেদনে অপরাধের ধরনের বিষয়ে বলা হয়েছে, ১নং আসামির নির্দেশ ও পরিকল্পনায় অন্য আসামিরা দেশি ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নির্বিচার গুলি করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে তাদের সমূল বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের মতো অপরাধ করেছে। আবেদনে ১৪ দলীয় জোটের শরিক, সাবেক মন্ত্রী, পুলিশ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। একই সঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ চাওয়া হয়েছে। তদন্ত সংস্থা জানায়, তিনটি আবেদনই নথিভুক্ত করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হলে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হবে।
জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার উপপরিচালক আতাউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বুধবার আরও তিনটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আমরা অভিযোগগুলো তদন্ত করছি। আমাদের প্রসিকিউশন প্যানেল ও আদালত রিফর্ম করা হয়নি। এসব না হওয়ায় গ্রেফতারি পরোয়ানা চাইতে পারছি না। শিগগিরই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে শুনেছি, কাজ চলছে। ট্রাইব্যুনালের একজন কর্মকর্তা জানান, ট্রাইব্যুনালের পুনর্গঠন হলে বিচার কার্যক্রম ফের শুরু হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে আইন মন্ত্রণালয় এ প্রজ্ঞাপন জারি করে। সবশেষ ঢাকায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনজন বিচারপতি ছিলেন। তারা হচ্ছেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার, সদস্য বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম ও বিচারপতি এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া।
চট্টগ্রামে হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সেতুমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৭৭ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় চট্টগ্রামে নিহত ফয়সাল আহমেদের পিতা জাকির হোসেন অভিযোগ করেন। তার আইনজীবী হলেন মুহাম্মদ হুজ্জাতুল ইসলাম খান। তদন্ত সংস্থার অফিস বিষয়টি নথিভুক্ত করে রেখেছে (ডায়েরি নং-৬৮২)। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এর ৮ ধারা অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এর ৩(২) ও ৪(১) (২) ধারা অনুযায়ী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। শেখ হাসিনা ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন মাহতাব উদ্দিন আহমদ, আ জ ম নাছির উদ্দীন, রেজাউল করিম চৌধুরী, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীসহ ৭৭ জন।
মিরপুরে আসিফ ইকবাল হত্যায় হাসিনা-কামরুল-মোজাম্মেল আসামি : গত ১৯ জুলাই মিরপুরের ১০নং গোল চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আসিফ ইকবালের বাবা এমএ রাজ্জাকের পক্ষে বুধবার আবেদনটি করেন আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতা, সাবেক মন্ত্রী, পুলিশ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের ৭৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন ১৪ দলের নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জেপির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন। র্যাবের সাবেক ডিজি হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার, মিরপুর জোনের তৎকালীন ডিসি জসীম উদ্দিন মোল্লা, মিরপুর মডেল থানার সাবেক ওসি মুন্সী সাব্বির, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, যুবলীগ সেক্রেটারি মাইনুল হোসেন খান নিখিল, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবিনা আক্তার তুহিনসহ ৭৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং সংগঠন হিসাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসংগঠনসমূহ এবং অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মিরপুরে শিক্ষার্থী শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন হত্যায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ : গত ১৮ জুলাই মিরপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত হন এইচএসসির শিক্ষার্থী শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন। তার বাবা মো. আব্দুল মতিনের পক্ষে বুধবার আবেদনটি করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন। আবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৪ দলের নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জেপির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, র্যাবের সাবেক ডিজি হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, যুবলীগ সেক্রেটারি মাইনুল হাসান নিখিল, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামসহ ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং সংগঠন হিসাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠন এবং অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।