সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর প্রতিষ্ঠান হামিদ গ্রুপে অভিযান চালিয়েছে যৌথ বাহিনী। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ঢাকা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনী এ অভিযান চালায়। এ সময় ‘প্রিয় প্রাঙ্গণ’ নামে ভবনের ভেতর থেকে বেশ কয়েকটি ভল্টে থাকা নগদ অর্থ ও বৈদাশিক মুদ্রা (প্রায় ১০ লাখ টাকা ও ২০০ তুর্কি মুদ্রা) এবং অস্ত্র-গুলিসহ অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করা হয়। অভিযানের সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন সমন্বয়ক ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রিয়াজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, অভিযানে নগদ টাকা ও বিদেশি মুদ্রা মিলিয়ে এক কোটি টাকা উদ্ধার হয়। এছাড়া একটি অস্ত্র ও ৫০ রাউন্ড গুলি পাওয়া গেছে। অভিযানের সময় ভবনের কর্মীরা কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় রুমে ঢুকে ভল্টের ভেতর থেকে টাকাসহ অন্যান্য জিনিস উদ্ধার করা হয়।

অভিযানসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ‘প্রিয় প্রাঙ্গণ’ বিল্ডিংয়ের লিফটের দ্বিতীয়তলায় হামিদ গ্রুপের অফিসে ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টসের রুমে বড় ভল্ট ও পাশের টেবিলের ড্রয়ার থেকে ৫০০ টাকার ৪টি বান্ডেল পাওয়া যায়। এর প্রতিটিতে ১০০টি করে নোট (দুই লাখ টাকা), ১০০০ টাকার নোট ৭৫টি (৭৫ হাজার টাকা), ২০০ টাকার নোট ১০০টি (২০ হাজার টাকা), ৫০০ টাকার নোট ২২টি (১১ হাজার), ১০০ টাকার নোট ২৭টি (২৭০০ টাকা)-সহ ৩ লাখ ৮ হাজার ৭০০ টাকা জব্দ করা হয়। একই রুমের বামদিকে আরেকটি ড্রয়ার থেকে ৫০০ টাকার ১০০টি, ৫০০ টাকার ৩০টি, ১০০ টাকার ১০০টি, ১০০ টাকার ৪৬টি, ৫০০ টাকার ৪টি এবং ১০০ টাকার ৪০টি নোটসহ ৮৫ হাজার ৬০০ টাকা জব্দ করা হয়। অর্থাৎ ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস রুমের ২টি ড্রয়ার থেকে মোট ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা জব্দ করা হয়।

ওই বিল্ডিংয়ের ষষ্ঠতলায় হামিদ গ্রুপের অফিস থেকে ১০০০ টাকার বান্ডেল ২০টি (প্রতি বান্ডেলে ১০০টি করে নোট), ৫০০ টাকার নোট ১২০টি, ১০০ টাকার বান্ডেল ৩টি, ১০০ টাকার নোট ২০টি, ১০০০ টাকার নোট একটিসহ মোট ২০ হাজার ৯৩ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

অফিস থেকে ৫০ পাউন্ডের ৪টি নোট, যার একটি ছেঁড়া, তুর্কি মুদ্রা (লিরা) ২০০ লিরার নোট একটি, ১০০ লিরার নোট ২টি, ৫০ লিরার নোট একটি, ২০ লিরার নোট একটি এবং ১০ লিরার নোট ৪টিসহ ৫১০ লিরা জব্দ করা হয়। অভিযানে ভবনের অন্যান্য ফ্লোরে থাকা অফিস কক্ষের দরজার তালা ভাঙা এবং মালামাল তছনছ অবস্থায় পাওয়া যায়।

অভিযোগ রয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে এই ভবনটি থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর অভিযোগে বলেন, অভিযোগের তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে ভবনের ফ্লোরগুলোয় অভিযান চালানো হয়। এদিকে মঙ্গলবার নসরুল হামিদ বিপু ও ঢাকা মহানগর পুলিশের আলোচিত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।