গ্লোবাল সাউথ সামিটে ড. মুহাম্মদ ইউনূস
নতুন বিশ্ব গড়ার কেন্দ্রে তরুণদের রাখতে হবে
সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
বাসস
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ ও নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে গ্লোবাল সাউথের কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে তরুণ ও ছাত্রদের রাখার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, তরুণরা নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি গ্লোবাল সাউথ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের কৌশলগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্যই তরুণ এবং ছাত্রদের রাখতে হবে, যারা গ্লোবাল সাউথের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ। আমাদের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ এবং তারা সমাজের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং একটি পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। শনিবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘থার্ড ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট-২০২৪’-এর ইনঅগারাল লিডার্স অধিবেশনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ কথা বলেন। তিনি ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি সম্মেলনে যুক্ত হন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে শপথ নেওয়ার পর এটিই ড. ইউনূসের প্রথম বহুপক্ষীয় কোনো অনুষ্ঠানে যোগদান। আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশ গ্লোবাল সাউথের অন্তর্ভুক্ত। মূলত এসব দেশে মাথাপিছু আয় উন্নত দেশের তুলনায় কম।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের তরুণদের প্রশংসা করে বলেন, বীর ছাত্রদের নেতৃত্বে বাংলাদেশে ৫ আগস্ট দ্বিতীয় বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। আর জনগণের যোগদানের মাধ্যমে এই বিপ্লব গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। যার ফলে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথগ্রহণ করে। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে এবং এর মাধ্যমে তার ১৫ বছরের দীর্ঘ শাসনের অবসান হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বৈপ্লবিক পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে তরুণরা আন্দোলন করেছে এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা দেশবাসীকে প্রভাবিত করেছে। এখন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে অর্থবহ সংস্কার জরুরি। যার মাধ্যমে ভঙ্গুর হয়ে পড়া রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে পুনরুদ্ধার করা হবে।
গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে নানা পরিবর্তন ঘটছে উল্লেখ করে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্লোবাল সাউথের নেতাদের ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, তরুণ ছাত্র এবং ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সি শিশুরা ৪০০ বছরের শহরের দেওয়ালে একটি নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ছবি আঁকছে। এর জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা নির্দেশনা তাদের নেই। কারোর পক্ষ থেকে বাজেট সমর্থনও নেই। এটি দ্বিতীয় বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষার প্রতি তাদের আবেগ এবং অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের দেওয়ালের লেখা পড়ে যে কেউ বুঝবেন, তারা কী স্বপ্ন দেখছে। তরুণদের স্বপ্নপূরণ করাই আমাদের প্রধান কাজ বলে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বব্যাপী তরুণরা আলাদা, তারা সক্ষম এবং প্রযুক্তিগতভাবে আগের প্রজন্মের তুলনায় অনেক এগিয়ে। তারা সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। তারা উদ্যোক্তা। কিন্তু তারা চাকরি চায়, কারণ দেশে দেশে এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে, যা তাদের চাকরির জন্য প্রস্তুত করে। অথচ সব মানুষের মধ্যে সৃজনশীলতা রয়েছে। শুধু চাকরিপ্রার্থী তৈরি করে এমন শিক্ষা ও আর্থিক ব্যবস্থা নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস।
তৃতীয়বারের মতো গ্লোবাল সাউথ সম্মেলনের আয়োজন করেছে ভারত। এবারের সম্মেলনে রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানদের নিয়ে উদ্বোধনী অধিবেশনের প্রতিপাদ্য এবং মূল সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হলো-‘অ্যান এমপাওয়ারড গ্লোবাল সাউথ ফর অ্যা সাসটেইনেবল ফিউচার।’
রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান পর্যায়ে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
ভারত ২০২৩ সালের ১২ ও ১৩ জানুয়ারি প্রথম ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট (ভিওজিএসএস) এবং একই বছরের ১৭ নভেম্বর দ্বিতীয় ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিটের আয়োজন করেছিল। দুটি সামিটই ভার্চুয়াল ফরম্যাটে আয়োজন করা হয়। শীর্ষ সম্মেলনের পূর্ববর্তী উভয় আয়োজনে গ্লোবাল সাউথ থেকে শতাধিক দেশ অংশ নিয়েছিল।