Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ভঙ্গুর ডিএনসিসির সেবা কার্যক্রম

ঠিকাদারের টাকায় ইউরোপ ভ্রমণে ২ প্রকৌশলী

Icon

মতিন আব্দুল্লাহ

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঠিকাদারের টাকায় ইউরোপ ভ্রমণে ২ প্রকৌশলী

ঠিকাদারের টাকায় ইউরোপ ভ্রমণে ২ প্রকৌশলী

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তুঙ্গে ওঠার পর থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র এবং কাউন্সিলররা লাপাত্তা। ভেঙে পড়েছে ডিএনসিসির সেবা কার্যক্রম। এ অবস্থায় গত শুক্রবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টাকায় ইউরোপ ভ্রমণে গেছেন ডিএনসিসির দুই প্রকৌশলী। তারা হলেন-বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম এবং সিভিল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরহাদ। এ ঘটনায় হতবাগ ডিএনসিসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

তারা বলছেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বল প্রয়োগ করেছে। গুলি, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। জবাবে ইট, পাটকেল ও সড়কে অগ্নিসংযোগ করেছে আন্দোলনকারীরা। এতে ভঙ্গুর দশা সড়ক, ফুটপাত, সড়ক বিভাজক ও সড়কবাতিগুলো। এখনো নগরীর যত্রতত্র পড়ে আছে আবর্জনার স্তূপ, ইটপাটকেল এবং গৃহস্থালি বর্জ্য। মেয়র-কাউন্সিলরহীন নগর সংস্থায় প্রকৌশলীদের এই সময় নগরীর সেবা কার্যক্রমে গুরুত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও তারা চলন্ত সিঁড়ি কেনার নামে ঠিকাদারের টাকায় ইউরোপের স্লোভাকিয়ায় গেছেন। বর্তমানে আত্মগোপনে থাকা মেয়রের এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন নাও হতে পারে। এ ধরনের কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

সে বিষয়গুলো তাদের ভাবা দরকার ছিল। জানা গেছে, প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের দায়িত্ব ডিএনসিসির বিদ্যুৎ বিভাগের তদারকি করা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে নগরীর সড়কবাতিগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলোর তদারকি বাদ দিয়ে তারা এই মুহূর্তে ইউরোপ গেছেন। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এলইডি বাতি কেনা এবং কয়েকটি প্রকল্প থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতির বড় অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে সিভিল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরহাদের দায়িত্ব সড়ক, ফুটপাত সংস্কার, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা। নগরীর সড়ক ও ফুটপাতে বেহাল বিরাজমান। সেসব সংস্কার ও উন্নয়নে মনোযোগী না হয়ে তিনিও গেছেন ইউরোপে। বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগ, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রকৌশলীরাও ভালোভাবে দেখছেন না।

ডিএনসিসির এক প্রকৌশলী জানান, প্রকৌশলী রফিকুল ও মো. ফরহাদ ডিএনসিসির দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন। দরপত্রে কারসাজি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করে ঘুস আদায় এবং নিুমানের কাজ করে ঘুস নেওয়ার এবং ঊর্ধ্বতনদের সেসব সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান প্রশাসনের সময়ে তারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছেন। শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে সখ্য থাকায় তারা আইনের কোনো তোয়াক্কা করেন না। নগরীর সেবা, উন্নয়ন বা সংস্কার কাজে মনোযোগ নেই তাদের। শুধু নিজেদের পকেট ভারী এবং চিত্তবিনোদনই মুখ্য তাদের কাছে। তিনি বলেন, গত ৩০ মে ঠিকাদারের টাকায় বিদেশ ভ্রমণে যেতে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়েছেন তারা। এই সময়ে না গিয়ে তারা পরেও যেতে পারত। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়ার কারণে তড়িঘড়ি করে তারা চলে গেলেন। এই বিদেশ সফর কার্যত তাদের চিত্তবিনোদন ছাড়া কোনো সুফল বয়ে আনবে না।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন অনুবিভাগের উপসচিব মো. সামছুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আগে তাদের বিদেশ যাওয়ার অনুমোদন নেওয়া ছিল। সেটা আগের বাস্তবতা বিবেচনায় অনুমোদন দেওয়া ছিল। এর মধ্যে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। যে কারণে তাদের যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল; সেগুলো এখন ঠিক নাও থাকতে পারে। ইউরোপ যাওয়ার আগে তাদের এ বিষয়গুলো বিবেচনা করা দরকার ছিল।

তিনি জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে নগরীর খুবই খারাপ অবস্থা। মানুষের চলাচলে কষ্ট হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে তাদের নগরবাসীর সেবা নিশ্চিতে মনোযোগী হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু তারা সেদিকে মনোযোগী না হয়ে বিদেশ সফর বেছে নিলেন, এটা খুবই দুঃখজনক।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম যুগান্তরকে বলেন, প্রকৌশলীদের মধ্যে কয়েকজন আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। তারা নগর সেবা ও নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করেন না। সরকারি চাকরিজীবী হিসাবে এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এখন পরিবর্তিত সময়; আশা করি এসব দুর্নীতিবাজ বিচারের মুখোমুখি হবেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম