Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সাবেক কর্মকর্তাদের সংবাদ সম্মেলন

সশস্ত্র বাহিনীকে ছাউনিতে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান

আলোচনার মাধ্যমে চলমান সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিন * সশস্ত্র বাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় না করানোর আহ্বান

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সশস্ত্র বাহিনীকে ছাউনিতে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান

দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নিতে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত এ রাজনৈতিক সংকটকালে আমরা ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি রাজপথ থেকে সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের ছাউনিতে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় না করানোর আহ্বানও জানান তারা। রোববার রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা উল্লেখ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ওই লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়া। ‘বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ’-এর ব্যানারে ‘দেশের বিদ্যমান অবস্থায় সংকট নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর ৪৮ জন কর্মকর্তা অংশ নেন।

লিখিত বক্তব্যে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেন, তিন সপ্তাহ ধরে দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, গুম এবং গণগ্রেফতারের যে ঘটনা চলেছে, আমরা তাতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, মর্মাহত ও ব্যথিত। অনেক কিশোর-তরুণের অকাল জীবনাবসান ঘটেছে। অভিভাবক হিসাবে নিজেদের দায়মুক্ত ভাবতে পারছি না। তাই বিবেকের তাড়নায় আমরা দেশবাসীর সামনে হাজির হয়েছি। তিনি বলেন, দেশের নীতিনির্ধারকরা যদি বিবেক, বুদ্ধি ও হৃদয়হীন হয়ে না পড়েন, তাহলে গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড়, করুণ ও মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটত না। এসব হামলা, আক্রমণ ও প্রতিরোধে অঙ্গহানি ঘটেছে অগণিত মানুষের। অন্ধ হয়েছেন বহুসংখ্যক কিশোর ও তরুণ। অসহায় নাগরিকরা প্রয়োজনীয় ও জরুরি চিকিৎসাও পাচ্ছেন না। তার ওপর চলছে ব্লকরেড করে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে বাড়ি, ঘর ও মেস চিনে শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে যাওয়ার মতো ভয়ংকর সব ঘটনা। মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন অথবা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন হাজার-হাজার নিরপরাধ কিশোর-তরুণ-যুবক। তিনি আরও বলেন, সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ড, জখম, গুলি, হামলা, ভাঙচুর, সন্ত্রাসের ঘটনার স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত হতে হবে জাতিসংঘের নেতৃত্বে ও তাদের অধীনে।

লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, আমাদের সীমান্ত এ মুহূর্তে অরক্ষিত। ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলন দমনের জন্য সীমান্ত থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিজিবি সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে সশস্ত্র বাহিনীকে অবিলম্বে সেনাছাউনিতে ফিরিয়ে নিয়ে যে কোনো আপৎকালীন সংকট মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। অনুরোধ করে বলছি, এ সংকট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করুন। দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় করাবেন না।

কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেন, প্রথম পক্ষ অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। সারা দেশের শিশু, কিশোর ও তরুণরা শত উসকানি, হামলা ও নির্যাতনের মধ্যেও ধৈর্য ধরে শৃঙ্খলার সঙ্গে আস্তে আস্তে আইন মেনে সামনে পা বাড়াচ্ছিল। এর বিপরীতে দ্বিতীয় পক্ষ যে উপর্যুপরি উসকানি দিল, গুন্ডাপান্ডা দিয়ে সন্ত্রাস চালাল এবং পুলিশ, র?্যাব, আনসার ও বিজিবি নামিয়ে, আকাশে হেলিকপ্টার উড়িয়ে নির্বিচারে গুলি করে অগণিত শিশু, কিশোর ও তরুণদের তাজা প্রাণ হরণ করল, তা দেশবাসী কি এত সহজে, এই অল্প সময়ের মধ্যেই ভুলে যাবে? তিনি বলেন, আক্রমণকারীরা গণ-আন্দোলনের প্রতিরোধের মুখে পিছপা হতে বাধ্য হলো, পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবহার করা হলো বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে। তাদেরকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে কখনো সম্মুখভাগে, কখনো পেছনে ও পাশে দাঁড় করিয়ে অন্য বাহিনীগুলো এই গণ-আন্দোলনের ওপর তাদের জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই এমন পরিস্থিতির দায় দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর নেওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী অতীতে কখনো দেশবাসী বা সাধারণ জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ায়নি, তাদের বুকে বন্দুক তাক করেনি।

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল এম নুর উদ্দিন খান বলেন, আজ আমাদের দেশের সন্তান, প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের ওপর গুলিবর্ষণ ও হতাহতের ঘটনা ঘটছে, তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। এসব ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করছি। তিনি বলেন, শনিবার সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জনগণের পাশে থাকার যেই বক্তব্য রেখেছেন, তাতে আমি আশ্বস্ত হয়েছি। আমি আশা করি, উনি ওনার সিদ্ধান্ত বলবৎ রাখবেন, এই দেশে আর রক্তপাত হবে না। এতে আরও বক্তব্য দেন মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বীর-উত্তম, মেজর জেনারেল জামিল (অব.) ডি আহসান, মেজর জেনারেল (অব.) রেজাকুল হায়দার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ। বক্তারা সেনাবাহিনীর পাশেই আছেন বলে মন্তব্য করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম