সরকারের নির্বাহী আদেশ জারি আজ
নিষিদ্ধ হচ্ছে জামায়াত-শিবির
নির্বাহী আদেশে অবশেষে নিষিদ্ধ হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে দলটিকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই অপরাধে তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকেও নিষিদ্ধ করা হবে। এ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশ জারি হবে আজ। সরকারের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামীকালের (আজ) মধ্যে একটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি কিছুক্ষণ পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বসব। কোন আইনি প্রক্রিয়ায় হবে, সেটা যখন সিদ্ধান্ত নেব, তখন জানাব। আগামীকালের (আজ) মধ্যে এই সিদ্ধান্ত হবে, ইনশাআল্লাহ।’
এদিকে জামায়াত-শিবির একটি শক্তিশালী সংগঠন, এ মুহূর্তে তাদের নিষিদ্ধ করা হলে সরকার পরবর্তী সময়ে কোনো ঝামেলায় পড়বে কি না-যুগান্তরের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবি দীর্ঘদিনের। যুদ্ধাপরাধ ছাড়াও দলটি মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের পেছনেও এ দলটি। সর্বশেষ ১৬ জুলাই থেকে দেশে যে নৃশংসতা চালানো হয়েছে, কোটাবিরোধী আন্দোলনের ওপর ভর করে যে সহিংসতা চালানো হয়েছে; এর পেছনেও জামায়াত-শিবির সরাসরি জড়িত।
অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আরও বলেন, যারা কোটা আন্দোলন করেছে, তারা কিন্তু বলেছে এ সহিংসতার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সেই ক্ষেত্রে আমাদের কাছে তথ্য-উপাত্ত আছে, জামায়াত-শিবির-বিএনপি-ছাত্রদল যারা জঙ্গি, তারাই এটা করেছে। তাই এ দলটাকে (জামায়াত-শিবির) যদি নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা এবং রাজনীতিরও অনেক উন্নতি হবে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাত মন্ত্রী, চার সচিব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকেও জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের বিষয়টি উঠে আসে। পরে এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। এখন আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে যা সময় লাগে। সে ক্ষেত্রে এক ঘণ্টাও লাগতে পারে আবার একদিনও লাগতে পারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, জামায়ত-শিবির নিষিদ্ধ করে তাদের মধ্যে যারা গত কয়েকদিনের সহিংস সংঘর্ষে সুনিশ্চিতভাবে জড়িত ছিল, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। এছাড়া যেহেতু জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের রাজনৈতিক নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেহেতু তা বাস্তবায়ন করা হবে। কত সময় লাগবে, তা আগেই আইনমন্ত্রী আপনাদের বলেছেন।
জামায়ত-শিবির স্বাধীনতাবিরোধী, ধ্বংসযজ্ঞ, হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ সব ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ২০০১ সালে জামায়াতের আমির যখন মন্ত্রী, তখন বাংলাভাইয়ের উত্থান। জামায়াতের আমির তখন বলেন, বাংলাভাই বলে কোনো মানুষের অস্তিত্ব নেই। এসব মিডিয়ার সৃষ্টি। এ বাংলাভাই মানুষ মেরে ওপরের দিকে পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখত।
এবারের বিগত কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তিনজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। তাদের দুজনের লাশ গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। দেশে যত জঙ্গি রয়েছে, সেগুলোর শেকড় টানলে দেখা যায়, সেগুলোর পেছনে জামায়ত-শিবির রয়েছে। যারা ২০০৫ সালে একযোগে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা করেছে, তাদের পেছনেও ছিল জামায়ত-শিবির।
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হলে যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে তা মোকাবিলায় প্রস্তুতি আছে কি না-এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এর আগে আনসার উল্লাহ বাংলাটিম, হরকাতুল জিহাদসহ বেশ কিছু সংগঠন নিষিদ্ধ করেছি। তাদের ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ এসেছে জামায়াত-শিবিরের ক্ষেত্রেও তা আসতে পারে। আমরা সেসব প্রস্তুতি নিয়েই তাদের নিষিদ্ধ করছি। সুতরাং আমরা প্রস্তুত। এগুলোর সঙ্গে সারা বিশ্বের লিঙ্ক ছিল। এখন জামায়াত সব ধরনের ধ্বংসলীলার পেছনে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সভায় চলমান ছাত্র আন্দোলনের আড়ালে দেশব্যাপী সংঘাত-সহিংসতায় সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত হন নেতারা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান।
জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে শুধু একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন ছিল। অবশেষে সেটি হয়েছে। এজন্য বিদ্যমান আইনগুলোই যথেষ্ট। এক্ষেত্রে সংবিধানের তৃতীয় ভাগের ৩৮ অনুচ্ছেদকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
এই অনুচ্ছেদে সংগঠনের স্বাধীনতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে; তবে শর্ত থাকে যে কোনো ব্যক্তির উক্তরূপ সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার কিংবা উহার সদস্য হইবার অধিকার থাকিবে না, যদি-ক) উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (গ) উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; বা (ঘ) উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এই সংবিধানের পরিপন্থি হয়।’
জামায়াত-শিবিরের নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে বিএনপিসহ তাদের বলয়ে থাকা রাজনৈতিক দল ছাড়া বাকিরা ইতোমধ্যে স্বাগত জানিয়েছে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, সামাজিক এবং পেশাজীবী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা দেরিতে হলেও সরকারকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন।
তবে হঠাৎ করেই এখন কেন জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার কথা সরকার বলছে-এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন রেখে বলেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কেন তারা (আওয়ামী লীগ) এতদিন নেয়নি? আজকে কেন এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তারা? এ নিয়ে তাদের অনেক ধরনের যুক্তি থাকবে, অনেক কথা বলবে, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।
এছাড়া জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, দেশের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে সরকার জামায়াতে ইসলামীকে কেন নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে-তা আমার বোধগম্য নয়। তারা যদি মনে করে এতে করে পরিস্থিতি শান্ত হবে, তাহলে তাদের ধারণা ভুল। সংকট উত্তরণে সমস্যা আরও গভীরে যেতে হবে।
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের দাবি এতদিনে পূরণ হয়েছে। তবে যখন কাজটি করা সহজ ছিল তখন করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, একটি কথা মনে রাখতে হবে, ঘোষণা করা এক জিনিস। আর তা কার্যকর করা আরেক জিনিস। সরকার যদি এটা কার্যকর করতে চায় তা হলে অবশ্যই সমমনা রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ সমাজের সব স্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে কাজ করতে হবে।
একইভাবে আওয়ামী লীগকেও নিজেদের দলের তৃণমূল থেকে দল পুনর্গঠন করতে হবে। গত তিন বছরে সংবাদপত্র থেকে প্রশাসন, শিক্ষাঙ্গন থেকে সমাজের সর্বত্র জামায়াত জেঁকে বসেছে। তাদের শক্তি আছে, অর্থ আছে। ৫০ বছর ধরে এ দেশে তারা একটি ভয়ের আবহ তৈরি করে রেখে। এ থেকে উত্তরণে এবং রাষ্ট্রকে ভয়মুক্ত রাখতে হলে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। সবাইকে নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির এ প্রসঙ্গে সোমবার যুগান্তরকে বলেন, আমরা ৩৩ বছর ধরে এ দাবিটি জানিয়ে আসছি। দেরিতে হলেও সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একে সাধুবাদ জানাই।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ এখন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে চায়, এটা ভালো কথা। তবে প্রশ্ন হচ্ছে-তারা এতদিন তাহলে জামায়াতকে নিয়ে খেলল কেন। যে উদ্দেশ্যে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে, তাতে লাভ হবে বলে মনে হয় না।
উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, জাকের পার্টিসহ ২৫টি সংগঠনের নেতারা এ নিবন্ধন দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করেন।
তারা জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের আরজি জানান। ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। ৬ সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রুল জারির পর একই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুবার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুবার জামায়াত তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়।
২০১৩ সালের ১২ জুন ওই রুলের শুনানি শেষ হয়। পরে জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন ২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ‘অবৈধ’ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জেম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
তবে এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে।
২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল (লিভ টু আপিল) আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। এর ফলে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলে হাইকোর্টের রায় বহাল থেকে যায়।
পাশাপাশি ২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোট ৫৫টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ছিল ১৬৯ জন। বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া এই আসামিদের অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী। যুদ্ধাপরাধী বিচারের ট্রাইব্যুনাল জামায়াতে ইসলামীকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে আখ্যায়িত করে তখন। একাত্তরে সংঘটিত গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিচারের পর দাবি ওঠে দল হিসাবে জামায়াত ইসলামীর বিচার করার।
যদিও জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের বিষয়টি এবারই প্রথম নয়। ১৯৭১ সালে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে ও পরবর্তীকালে ধর্মের নামে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অপরাধে ১৯৭২ সালে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়। পাকিস্তান আমলেও তৎকালীন জামায়াত দুবার নিষিদ্ধ হয়েছিল। প্রথমবার ১৯৫৮ সালে। জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারির পর অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জামায়াতও নিষিদ্ধ হয়েছিল।
দ্বিতীয়বার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয় ১৯৬৪ সালে। এই সময় সরকার ১৯০৮ সালের ফৌজদারি আইনের ১৬ ধারা অনুযায়ী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে। এদিকে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী।