
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৪ এএম

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় করা পুলিশ সদস্য হত্যা মামলায় গ্রেফতার কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে সাতদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ স্থগিত করেছেন আদালত। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক রোববার এ আদেশ দেন।
জানা যায়, পুলিশের এক সদস্য হত্যা মামলায় ১৭ বছর বয়সি ওই কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে শনিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সিএমএম) হাজির করে পুলিশ। পরে তাকেসহ ৬ জনকে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। শুনানির সময় শনিবার ওই কিশোরের আইনজীবী আদালতে বলেন, তার মক্কেল কিশোর।
জন্মসনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৭ বছর। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত ওই কিশোরসহ ছয়জনের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরের দিন রোববার ওই কিশোরের আইনজীবী ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর কাছে আবারও আবেদন করে বলেন যে তার মক্কেল কিশোর। আইন অনুযায়ী, একজন কিশোরকে রিমান্ডে নেওয়ার সুযোগ নেই। রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন তিনি। পরে ওই কিশোরকে আদালতে হাজির করা হয়। কিশোরের জন্মসনদসহ সব তথ্য পর্যালোচনা করে আদালত রিমান্ডের আদেশ স্থগিত করে তাকে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।
এমন দু-একটি অঘটন ঘটলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যাবে, ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে : ঢাকা কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে গ্রেফতার-রিমান্ড বিষয়ে ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত ছবি ও তথ্য যুক্ত করে রিট করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রোববার এ নিয়ে শুনানি করেন।
শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, সে যদি শিশু হয়, তাকে (রিমান্ডে) নেবেন কেন? প্রয়োজন হলে তাকে তার মা-বাবার হেফাজতে দিয়ে দেন। তার ক্ষেত্রে শিশু আইন যেন অনুসরণ করা হয়। হাইকোর্ট আরও বলেন, এমন দু-একটা অঘটন ঘটলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যাবে, ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে। রিটটি দাখিল করার সময় আইনজীবী শাহদীন মালিকের উদ্দেশে আদালত বলেন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল কিছু অগ্রগতির কথা বলেছেন। মূল বিষয়টি হচ্ছে, সে শিশু ও তার সুরক্ষা। তার ক্ষেত্রে শিশু আইন যেন অনুসরণ করা হয়। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ বলেন, ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নেওয়া হবে না।
আদালত বলেন, সে যদি শিশু হয়, তাকে (রিমান্ডে) নেবেন কেন? প্রয়োজন হলে তাকে তার মা-বাবার হেফাজতে দিয়ে দেন। তখন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট আদালতে তারা জামিন ও হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করতে পারেন। তবে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হবে না, নিশ্চিত করছি।’ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আদালত বলেন, এত বড় ধ্বংসযজ্ঞ হয়ে গেছে। এ রকম দু-একটা অঘটন ঘটলে বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যাবে। ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে। তাকে ধরেছেন, তা শুদ্ধ করার জন্য আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রাখতেই হবে, বিষয়টি যেন এভাবে না হয়। সম্ভব হলে আজই তাকে তার মা-বাবার কাছে দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ বলেন, ওনারা (রিট আবেদনকারী) দরখাস্ত দিতে পারেন। তাকে রিমান্ডে নেওয়া হবে না এবং তার ক্ষেত্রে শিশু আইন অনুসরণ করা হবে। রিট আবেদনকারী আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, আইন অনুসারে শিশুর বয়স প্রমাণের দায়িত্ব হচ্ছে গ্রেফতারকারী কর্তৃপক্ষের। যাকে আটক করা হয়েছে, তার নয়। জনস্বার্থে রিটটি করা হয়েছে।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আদালত বলেন, আইনে যেহেতু বলা আছে, গ্রেফতারকারী কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব শিশুর বয়স নিরূপণ করার। একপর্যায়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, শিশু আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিশু হিসাবে যদি আবেদন করা হয়, সংশ্লিষ্ট আদালত তা যথাযথভাবে বিবেচনা করবেন। আদালত বলেন, ‘আপনি মা-বাবাকে ডেকে নিয়ে দরখাস্ত দিতে বলেন। বাবা ঢাকাতেই থাকেন। ওসিকে বলতে পারেন।’ আদালতে শাহদীন মালিকের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এম মনজুর আলম ও মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদের সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়েম মুরাদ। সোমবার রিটের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছে রিট আবেদনকারী পক্ষ।
কিশোর ফাইয়াজ টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে : টঙ্গী শিল্পাঞ্চল (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ হত্যা মামলার আসামি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। রোববার বিকাল সাড়ে ৫টায় তাকে কড়া নিরাপত্তায় গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র নেওয়া হয়। টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক দেলোয়ার হোসেন সংবাদটি নিশ্চিত করেন।