Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সিন নদীর বুকে অলিম্পিকের বৃষ্টিভেজা উদ্বোধন

Icon

মোজাম্মেল হক চঞ্চল, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সিন নদীর বুকে অলিম্পিকের বৃষ্টিভেজা উদ্বোধন

ছবি: সংগৃহীত

অপরূপ, অনন্য, অসাধারণ। কোনো বিশেষণই যথেষ্ট মনে হচ্ছে না প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত সারে ১১টায় গেমসের পর্দা ওঠে। তার ঘণ্টাদুয়েক আগেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় সিন নদীর দুই তীর। অনুষ্ঠানকে ঘিরে আনন্দ-উৎসবের বান ডাকে। আলোক রশ্মির বর্ণিল ছটা মুগ্ধ করে দর্শকদের। টেলিভিশনের কল্যাণে স্টেডিয়ামের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের প্রায় ৫০০ কোটি দর্শক বিমোহিত হয়েছেন। পারফরমাররা ইন্দ্রজাল বিস্তার করেছিলেন অনুষ্ঠানজুড়ে। আলোর রোশনাইয়ে অপরূপ হয়ে ওঠে প্যারিসের আকাশ। বৃষ্টির বিড়ম্বনা হয়েছে। কিন্তু বাধা হতে পারেনি। আবহাওয়া দপ্তর আগেই জানিয়েছিল, সন্ধ্যা থেকে ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভাসবে প্যারিস শহর। সেকথা মাথায় রেখেই আয়োজকরা নিপুণভাবে সাজিয়েছিলেন পুরো অনুষ্ঠান। বৃষ্টি থেকে শুধু রেহাই পেয়েছিলেন ভিভিআইপি গ্যালারিতে থাকা আইওসি সভাপতি টমাস বাখ, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ বিভিন্ন দেশের ও সংস্থার বিশিষ্টজনরা। বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসও ছিলেন ভিআইপিদের আসনে। অলিম্পিকের শুভেচ্ছাদূত হয়ে আসা ইউনূসের নামে প্যারিসের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শক-সাংবাদিকদের বিড়ম্বনা হলেও টিভির পর্দায় থাকা দর্শকরা অবশ্য অলিম্পিকের ইতিহাসের অন্যতম সেরা উদ্বোধনের সাক্ষী হতে পেরেছেন।

অনুষ্ঠান শুরু হয় একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানোর মধ্য দিয়ে। ফ্রান্স ফুটবলের কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানের হাতের মশাল দেখিয়ে সিন নদীকে সংযোগ করা হয়। সেই প্রামাণ্যচিত্রের ফাঁকে ফাঁকে শুরু হয় মার্চপাস্ট। অলিম্পিকের জন্ম গ্রিসে। তাই গ্রিস দিয়েই শুরু হয় মার্চপাস্ট। এরপরই আসে শরণার্থী দল। অলিম্পিকের নামেই গেমসে অংশ নিচ্ছে তারা। ৮৫টি ছোট-বড় বোটে চড়ে ৬৮০০ অ্যাথলেট পতাকা দুলিয়ে, হাত নেড়ে দর্শকদের অভিবাদন জানান। ফ্রান্সের ঐতিহাসিক স্থাপনা, কৃষ্টি, সংস্কৃতির নানা দিক তুলে আনা হয় চিত্রে। বিশেষত্ব অনেক কিছুই ফুটে ওঠে।

ছোট নৌযানে বাংলাদেশ দলের ১০ জন ছিলেন। ক্রীড়াবিদ মাত্র পাঁচজন। সেই ১০ জনের মধ্যে বাংলাদেশের চার ক্রীড়াবিদ, এক কোচ ও পাঁচ কর্মকর্তা ছিলেন। শুটার রবিউল ছাড়া বাকি চার ক্রীড়াবিদই মার্চপাস্টে ছিলেন। শুটিং প্যারিসের বাইরে থাকায় রবিউল ও তার কোচ ছিলেন না। আরচার সাগর ইসলামের হাতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা। পাশে ছিলেন নারী সাঁতারু সোনিয়া। সাঁতারু রাফি ছিলেন একটু পেছনে। দ্রুততম মানব ইমরানুরের অবস্থান হয়েছে কর্মকর্তাদের পেছনে। গেমসের মার্চপাস্টের মূল আকর্ষণ ক্রীড়াবিদ, কোচ। বাংলাদেশ মার্চপাস্টে কোচ না পাঠিয়ে কর্মকর্তাও ছিলেন। অ্যাথলেটিক্সে কোচ দলের সঙ্গে নেই, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব মন্টু যথারীতি বোটেও হাজির। সাঁতারে কোচ আবদুল হামিদ নৌযানে ঠাঁই পাননি। সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফ ছিলেন মার্চপাস্টে।

গেমসের মার্চপাস্টে ভারত, ভুটানসহ অনেক দেশই নিজস্ব সংস্কৃতির পোশাক পরেছে। বাংলাদেশ পুরুষ ক্রীড়াবিদ, কোচ, কর্মকর্তারা কোর্ট, প্যান্ট পরে গেমসের মার্চপাস্টে অংশ নেন। নাচ-গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বেরসিক বৃষ্টি বেসুরা করতে চাইলেও হতে দেননি দর্শক। আনন্দ-উদ্দীপনায় মাতোয়ারা ছিলেন তারা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের টিকিট পাওয়া ছিল সোনার হরিণ ধরার মতো। চড়া দামে টিকিট কিনে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল সবচেয়ে বেশি। অবশ্য আয়োজন নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন বিদেশি সাংবাদিকরা, ‘বৃষ্টিতে জ্বরসহ নানা অসুখ হলে ক্রীড়াবিদদের পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পদক জয়ের ক্ষেত্রে এটা ফ্যাক্টর হবে।’

ফ্রান্সের কিংবদন্তি ফুটবলার জিনেদিন জিদান ও স্পেনের রাফায়েল নাদালের মেলবন্ধন অনুষ্ঠানকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেয়। মশাল নেওয়ার সময় দুজন দুজনকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে জড়িয়ে ধরেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইওসি সভাপতি টমাস বাখ সেই বুলি আওড়িয়েছেন, ‘আমরা অলিম্পিকের মাধ্যমে সারা বিশ্ব এক থাকব।’ নান্দনিকতা, আধুনিকত্ব, ইতিহাস সব কিছু মিলিয়ে প্যারিস অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধন মন কেড়েছে। অলিম্পিকের উদ্বোধন যে কোনো দেশের ঐতিহ্যকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার মঞ্চ। যে সিন নদীকে ঘিরে উদ্বোধনী মঞ্চ সাজানো হয়েছে, সেই নদীতে ফরাসিদের অতীত ও বর্তমান ডুবে যায়নি, তাতেই তৃপ্ত আয়োজকরা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম