Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

খসরুসহ ৪০৫ জন কারাগারে রিমান্ডে ৪২

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খসরুসহ ৪০৫ জন কারাগারে রিমান্ডে ৪২

বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় বুধবার বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ ঢাকা মহানগর ও জেলার ৪০৫ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সহসমবায় বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল হক সনি ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল আলম নীরব, জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ ৪২ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।

এদিকে সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীসহ সারা দেশে আরও প্রায় ৫শ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট গ্রেফতার আড়াই হাজারের বেশি। এদের মধ্যে অনেকেই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী। আদালত সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরীর ৫০টি থানা এলাকায় মঙ্গলবার পর্যন্ত মামলা হয়েছে ১৮০টি। এসব মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৬০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। দেড় হাজারের বেশি সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, ১৫৪ মামলায় গ্রেফতার ১ হাজার ৩৮০ জন। এর মধ্যে গেল ২৪ ঘণ্টায় গ্রেফতার ২৬০ জনের বেশি। এছাড়া চট্টগ্রাম, রংপুর, বগুড়া, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮০ মামলায় আরও ২শ জনকে গ্রেফতারের তথ্য পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এসব জেলায় মোট গ্রেফতার ১১৬৮ জন।

এদিকে ঢাকা মহানগরে গ্রেফতারদের মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ নিরপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেফতারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার কারাগারে যাওয়া অনেক আসামির স্বজনের আহাজারিতে ভারি হয়ে পড়ে আদালত প্রাঙ্গণ। তবে পুলিশ বলছে, তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই তারা গ্রেফতার করছে।

আদালতে স্বজনদের আহাজারি : যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকার বাসিন্দা মো. সজিব। পেশায় নির্মাণশ্রমিক। দুই ভাই ও এক বোনের সংসারে তিনি মেজো। ছেলেদের মধ্যে বড়। বড় বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বৃদ্ধ বাবা-মা আর দুই ভাই নিয়েই তাদের সংসার। ২১ বছর বয়সি সজিবই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সোমবার রাতে কাজলা বাজারে একটি দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে ক্যারমবোর্ড খেলছিলেন তিনি। এ সময় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ছেলের জামিনের আশায় বুধবার ঢাকার সিএমএম আদালতে আসেন তার মা হালিমা খাতুন। ছেলের জন্য আদালতপাড়ায় আহাজারি করছিলেন তিনি। আদালতে শুনানি শেষে প্রিজন ভ্যানে আসামিদের কারাগারে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। কারা ভ্যানের লোহার ফাঁকা দিয়ে ছেলেকে দেখে আরও বেশি কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কারা ভ্যানের পিছে দৌড়াতে থাকেন সজিবের বৃদ্ধ বাবা ও ছোটভাই জিহাদ।

সজিবের মা হালিমা খাতুন বলেন, আমার ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। সে তো এসব আন্দোলনে যায় নাই। কাজ করে এসে বাসায় থাকত। বাজারে গিয়ে ক্যারমবোর্ড খেলত। আমার ছেলে নিরপরাধ।

এছাড়াও সদ্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা সম্রাট মালিথা ১১ জুলাই ঢাকায় আসেন স্পোকেন ইংলিশ কোচিং করতে। ১৫ জুলাই ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আন্দোলনের কারণে ক্লাস বন্ধ। সোমবার মিরপুরে বাসার নিচে খাবার খেতে নামলে সেখান থেকে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। আদালতের বারান্দায় তার বাবা-মা বসে কান্না করছিলেন আর বলছিলেন, আমার ছেলে কোনো আন্দোলনে যায়নি। খাবার খেতে নিচে নেমেছিল তখন পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে আসে।

ধানমন্ডিতে ইন্টারনেটের কাজ করেন এরশাদ। মঙ্গলবার রাতে বাসা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এরশাদের মা আমেনা খাতুনও আদালতের সামনে আহাজারি করছিলেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন বলেন, আমার দুইটা নাতি আছে এখন আমি ওদের নিয়ে কই যাব, কীভাবে চলব।

পাশ থেকে আবুল কালামের স্ত্রী শাহনাজও বলছিলেন তার স্বামীকে নিয়ে এসেছে পুলিশ। আবুল কালাম গাড়ি চালক। সে কখনো কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না। কয়েকদিন আগে উত্তরার ৭ নম্বর এলাকায় ডিউটি শেষে বাসায় ফেরার সময় আন্দোলনের একটা ভিডিও করেছিলেন সে। সে কারণে সোমবার বিকালে বাসা থেকে পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায়।

কোন থানার কতজন কারাগারে : কারাগারে যাওয়া আসামিদের মধ্যে বাড্ডা থানার ২৬ জন, ভাটারা থানার চারজন, কোতোয়ালি থানার আটজন, বংশাল থানার ৫ জন, লালবাগ থানার ১১ জন, চকবাজার চার, বনানী ১১ জন, গুলশানে একজন, কদমতলী ১৬ জন, তুরাগ সাতজন, উত্তরা পূর্ব ৩৩ জন, পশ্চিমে সাতজন, ধানমণ্ডি তিনজন, বিমানবন্দরে পাঁচজন, মুগদায় একজন, যাত্রাবাড়ী ৯৯ জন, ডেমরা থানার সাতজন, পল্টন মডেল থানার তিনজন, শাহজাহানপুর থানার পাঁচজন, মতিঝিল থানার চারজন, রামপুরা থানার ছয়জন, সবুজবাগ থানার তিনজন, মিরপুর মডেল থানার ১৪ জন, শেরেবাংলা নগর থানার এক, কাফরুল থানার একজন, পল্লবী থানার ৯ জন, রূপনগর থানার ৯ জন, শাহবাগ থানার একজন, রমনা থানার একজন, ক্যান্টনমেন্ট চারজন, ওয়ারী থানার ২১ জন, সূত্রাপুর ছয়জন, সবুজবাগ থানার তিনজন, রামপুরা থানার ছয়জন, নিউমার্কেট থানার একজন, কলাবাগান থানার দুজন, তেজগাঁও থানার দুজন, হাতিরঝিল থানার ২০ জন, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ১৪ জন, মোহাম্মদপুর থানার আটজন, আদাবর থানার তিন ও খিলগাঁও থানার একজন আসামি রয়েছে। এছাড়া রিমান্ডে যাওয়াদের মধ্যে ঢাকা মহানগরে ৩৩ জন ও ঢাকা জেলায় ৯ জনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে।

ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চট্টগ্রাম : নগরীতে ১৬ মামলায় আসামি প্রায় ৩৭ হাজার। এছাড়া জেলার বিভিন্ন থানায় ১১টি মামলা করা হয়েছে। তবে এসব মামলায় সুনির্দিষ্ট আসামির সংখ্যা বলতে পারেনি জেলা পুলিশ। মোট ২৭টি মামলায় গেল ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট গ্রেফতার ৭০৩ জন। এদিকে গ্রেফতার আতঙ্কে চট্টগ্রামে বিএনপি ও জামায়াতের অনেক নেতাকর্মী গা-ঢাকা দিয়েছে। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, বাসা-বাড়িতে গিয়ে পুলিশ তাদের নিরীহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী যুগান্তরকে বলেন, এক সপ্তাহে তাদের ৩১০ নিরীহ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাসা-বাড়িতে থাকতে পারছে না কেউ।

সিএমপির এডিসি (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, সিএমপির আওতাধীন বিভিন্ন থানায় ১৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত) শুধু সিএমপিতে গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৬ জনকে। চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফ হোসেন জানান, ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৫৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন থানায় করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ৩৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

দিনাজপুর : বিএনপি ও জামায়াতের আরও ৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে জেলায় গ্রেফতারের সংখ্যা ৪৭ জন। কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিরুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে দিনাজপুরে নাশকতা কর্মকাণ্ডের জন্য এ পর্যন্ত ৬টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ময়মনসিংহ ও ধোবাউড়া : কোতোয়ালি, ফুলপুর, ধোবাউড়া ও গৌরীপুর থানায় ৮ মামলায় আরও ২৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট গ্রেফতার ৭৮ জন। পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা জানান, এজাহারনামীয় আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের চিরুনি অভিযান চলছে। ধোবাউড়ায় বুধবার গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন-জেলা যুবদলের সহসম্পাদক এসএম শামীম ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ. কুদ্দুস।

বগুড়া : ১৬ জুলাই বিকালে শহরের সাতমাথায় প্রধান ডাকঘরে হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। পোস্টমাস্টার আল আমিন মঙ্গলবার রাতে সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। গত কয়েক দিনে ১২ মামলায় ৭৭৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনাসহ মোট ৭৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে গেল ২৪ ঘণ্টায় গ্রেফতার আরও ৫ জন।

রংপুর : মঙ্গলবার রাতে আরও ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে রয়েছেন-মাহিগঞ্জ থানা জামায়াতের আমির মো. আজিজুল ইসলাম, মহানগর ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মকবুল হোসেন, দেওয়ানবাড়ি দোকান মালিক সমিতির মো. মনোয়ার হোসেন রিপন। এ নিয়ে ১০ মামলায় মোট গ্রেফতার ১১৯ জন। এ সময় মামলায় মোট আসামি ৪ হাজারের বেশি।

গাইবান্ধা : অগ্নিসংযোগ ও রেলস্টেশন ভাঙচুর এবং নাশকতা মামলায় গাইবান্ধায় বিএনপি-জামায়াতের ৬শ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে ৩ মামলায় মোট ৬৬ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

লালমনিরহাট : পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ফিরোজ হায়দার লাভলুসহ বিএনপির ৪ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। লালমনিরহাট সদর থানার ওসি ওমর ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ১৯ পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবীব দুলুকে প্রধান আসামি করে ৩৯ জনের নামে মামলা হয়েছে।

ভোলা : বুধবার ভোরে নাশকতা মামলায় দুই ছাত্রদল নেতাকে আটক করছে পুলিশ। এরা হলেন-ইলিশা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের তোফায়েল মিয়ার ছেলে আমজাদ হোসেন ও চরসামাইয়া ইউনিয়নের আমানুল্লাহ রনি। এ নিয়ে গত ৪ দিনে আটকের সংখ্যা ৮।

টাঙ্গাইল : জেলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, মধুপুর ও ধনবাড়ী থানায় ৮ মামলায় ১৬৬ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

ঠাকুরগাঁও : এ নিয়ে তিন দিনের চিরুনি অভিযানে ৪ মামলায় জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান পয়গাম আলীসহ ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম