বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, বিপাকে মালিকরা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সারা দেশে ছোট-বড় প্রায় ৮ শতাধিক গার্মেন্ট কারখানা খুলেছে। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টের সংখ্যা প্রায় ৬ শতাধিক। সময়মতো অর্ডার পাঠাতে এবং উৎপাদন পরিস্থিতি সম্পর্কে বিদেশি ক্রেতাদের অবহিত করতে মূলত কারখানা খোলা হয়েছে। তবে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ক্রেতাদের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করতে না পেরে বিপাকে আছেন গার্মেন্ট মালিকরা। এর বাইরে সাব-কন্ট্রাকে কাজ করা ছোট ছোট অসংখ্য কারখানা খুলেছে। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ৩৫০টির বেশি গার্মেন্ট খুলেছে। অবশ্য ইপিজেড ও বিজিএমইএভুক্ত কিছু কারখানা নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ ছিল। নারায়ণগঞ্জে ছোট-বড় সব মিলিয়ে আড়াইশ কারখানা, সাভার-আশুলিয়ায় ৫০টি এবং গাজীপুর-ময়মনসিংহে ৫০টির মতো কারখানা খুলেছে। এছাড়া মিরপুর, উত্তরা, নারায়ণগঞ্জ, আড়াইহাজারে ছোট ছোট কারখানা খুলেছে। আজ সারা দেশের সব গার্মেন্ট খুলতে চান মালিকরা। এজন্য ইন্টারনেট চালু করতে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ও পুলিশি নিরাপত্তার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা। সোমবার বিজিএমইএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে-শনিবার, রোববার ও সোমবার নিরাপত্তার খাতিরে কারখানা বন্ধ রাখা হয়, এ সময় শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ছিলেন। তবে কারখানা বন্ধ থাকায় পোশাক খাতে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তার চেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা ও নির্ভরতায় ঘাটতির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনার ফলে ভাবমূর্তির যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তা টাকার অঙ্কে প্রকাশ করা কঠিন।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন, কারখানা রক্ষা করতে পারবেন, সেই শক্তি আছে, তবে আপনারা খুলতে পারেন। আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তার দায়দায়িত্ব কিন্তু আমাদের দিতে পারবেন না। আপনাদের নিজ দায়িত্বে করতে হবে।’
ওই বৈঠকে মেট্রোপলিটন চেম্বারের (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, প্রতিদিন খবর পাচ্ছি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিদিন ৫টা করে ই-মেইল পাঠানো হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে আর পণ্য নেওয়া যাবে না। সীমিত পরিসরে ইমেইল চালু করলেও এই চক্রান্ত ঠেকাতে পারব। তা না হলে ৭ দিন পরে আর অর্ডার থাকবে না। একই কথা বলেন নিটপণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, কারখানা চালু রাখতে পারলে শ্রমিকরা সুশৃঙ্খল পরিবেশে থাকতে পারে। কারখানা বন্ধ রাখতে তাদের বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে উসকানি দিতে পারে। এছাড়া ইন্টারনেট বন্ধের কারণে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ আছে। তাই স্বল্প পরিসরে দ্রুত ইন্টারনেট সেবা দিলে ব্যবসা উপকৃত হবে।
গার্মেন্ট মালিকরা বলছেন, নিজেদের অস্বস্তি টিকিয়ে রাখতে কারফিউ ও সহিংসতার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কারখানা খুলতে হয়েছে। এই সহিংসতার ঘটনাকে পুঁজি করে দেশি-বিদেশি একাধিক চক্র বাংলাদেশ থেকে পণ্য না নিতে বিদেশিদের ই-মেইল করছে। বিদেশি ক্রেতাদের বাংলাদেশি গার্মেন্ট মালিকদের সদিচ্ছা বোঝানোর জন্যই কারখানা খোলা হয়েছে। কিন্তু ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশি গার্মেন্ট মালিকদের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য হলেও ইন্টারনেট সংযোগ চালুর দাবি জানান তারা।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন-মঙ্গলবার ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া ও গাজীপুরে ৩ শতাধিক কারখানা খোলা হয়েছে। বুধবার মালিকরা সব কারখানা খুলতে চান। এজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এবং ইন্টারনেট সংযোগ পুনঃস্থাপনের জন্য আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী মঙ্গলবার রাতের মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ চালুর আশ্বাস দিয়েছেন।
বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার চট্টগ্রামে ইপিজেড ব্যতীত ৩৫০টির মতো রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা চালু করা হয়। শ্রমিকরাও যথাসময়ে কাজে উপস্থিত হয়েছেন। কোনো ধরনের নাশকতা ও সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। এতে মালিকরা সন্তুষ্ট।
অন্যদিকে পুরান ঢাকার নাজিরা বাজার, বঙ্গবাজার, মিরপুর, উত্তরা, আশুলিয়া এলাকায় ছোট ছোট দেড় শতাধিক গার্মেন্ট খোলা হয়। এসব কারখানা সাব-কন্ট্রাক ও স্থানীয় বাজারের জন্য পোশাক উৎপাদন করে। স্বল্প পরিসরে চালু হওয়া এসব কারখানা স্থানীয় বাজারে পোশাকের জোগান দিয়ে থাকে। মিরপুর-১১ আরকে ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিদিন কারখানা বন্ধ থাকলে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হয়। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় কারখানা খুলেছি।
কারফিউর সময় চলাচল করতে পারবে পোশাক কারখানার গাড়ি : পোশাক শ্রমিকদের অফিস আইডি কার্ড কারফিউ পাশ হিসাবে গণ্য হবে। সেসঙ্গে পোশাক কারখানার গাড়িও কারফিউ চলাকালীন চলাচল করতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে চালককে কারখানার কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতাদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার রাত ৮টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিজিএমইএ সভাপতি এসএম মান্নান কচি, বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ও সিদ্দিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয় যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন মো. হাতেম।